এইদিন বিনোদন ডেস্ক,২২ জানুয়ারী : বলিউড অভিনেতা সঈফ আলী খানের ওপর হামলাকারী বাংলাদেশি শরিফুল ইসলাম সাজ্জাদের সম্পর্কে বেড়িয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য । বাংলাদেশের ঝালকাঠির বাসিন্দা ওই দুষ্কৃতী কট্টর ইসলামি মৌলবাদী দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির (বিএনপি) একজন নেতা এবং সে একজন খুনের আসামি । বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে খবর, সাজ্জাদ ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। সে মোল্লারহাট ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য । তাঁর বাবা রুহুল আমিন ওই ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি পদে রয়েছে । ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আসা ছবি দেখে শেহজাদকে শনাক্ত করেছেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মহম্মদ আব্দুস সালাম। তিনি বলেন,’শেহজাদ নলছিটি থানায় হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। হত্যার সে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরিবারের সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। এলাকায় সে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাত । ২০১৭ সালে মোল্লারহাট স্টিল ব্রিজের কাছে ভাড়ায় মোটরসাইকেলের চালক রফিকুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় রাজাবাড়িয়া গ্রামের মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ প্রধান আসামি । এই ঘটনার পরে সে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায় ।’ এলাকায় থাকার সময় সে ছিনতাই, চুরি ও মারামারিতে জড়িত ছিল বলে প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান জানান।
প্রসঙ্গত,অভিনেত্রী স্ত্রী কারিনা কাপুর খান, দুই ছেলে তৈমুর আলী খান ও জাহাঙ্গীর আলী খানকে নিয়ে অভিনেতা সাইফ বান্দ্রার ‘সৎগুরু শরণ’ নামের ১২ তলা অ্যাপার্টমেন্টের চারতলায় বিশাল একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। ওই বাড়িতে তিনজন গৃহকর্মীও থাকেন।
সাইফকে ছুরিকাঘাত করা হয় বুধবার রাত আড়াইটার দিকে। তার বাড়িতে প্রবেশ করা এক ব্যক্তি তাকে ছুরি মেরে পালিয়ে যায় । পরে বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিওতে ধরা পড়া হামলাকারীর ছবিও এসেছে সংবাদমাধ্যমে। পুলিশ মনে করছে, হামলাকারী ‘চুরি করতে’ ওই অভিনেতার বাড়িতে ঢুকেছিল ।
ওই রাতেই শহরের লীলাবতী হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তির পর সাইফের শরীর ৫ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকরা বলেছিলেন অভিনেতার শরীরে ছয়টি ক্ষত ছিল। সেগুলোর মধ্যে মেরুদণ্ডের দুই ক্ষতকে বিপজ্জনক বলেছেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারে সাইফের শরীর মেরুদণ্ডের খুব কাছ থেকে ছুরির আড়াই ইঞ্চির ভাঙা অংশও বের করা হয়।অস্ত্রোপচারের পর একদিন আইসিইউতে রেখে তারপর কেবিনে আনা হয় এই অভিনেতাকে।ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার ছয়দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাইফ আলী খান।
এদিকে হামলাকারীকে খুঁজে বের করতে বৃহস্পতিবার থেকে উঠেপড়ে লাগে মুম্বাই পুলিশ। হামলাকারীকে ধরতে পুলিশের ৩৫টি টিম কাজ করেছে। এর মধ্যে সাইফের ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আটক করা হয় শরিফুল ইসলাম শেহজাদ ও আকাশ কৈলাস ক্যানোজিয়া নামের দুই ব্যক্তিকে। হামলাকারীর সঙ্গে তাদের চেহেরার মিল ছিল । যদিও আকাশকে ছেড়ে গ্রেফতার করা হয় সাজ্জাদকে । শেহজাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের হেফাজতে পেয়েছে মুম্বাই পুলিশ ।পুলিশ বলছে বাংলাদেশের নাগরিক শরিফুল ইসলাম শাজ্জাদ ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মুম্বাইয়ে হাউজিং কোম্পানিতে শ্রমিকের ও পরে হোটেল বয় হিসেব চাকরি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে বসবাস শুরু করছিল ৷ শেহজাদ চার মাস ধরে মুম্বাইয়ে রয়েছে । সে নাম পাল্টে রাখে বিজয় দাস।
সাজ্জাদের বাবা রুহুল আমিন জানান, গত শনিবার ভারতে গ্রেপ্তারের পর সাজ্জাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে চায় ভারতীয় পুলিশ। তখন সাজ্জাদ গ্রামের বাড়িতে ফোনকল করে ভোটার আইডি কার্ড চান, তা দেওয়ার পর পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। এর পর থেকে কোনো যোগাযোগ নেই। এর আগে সাজ্জাদ বাড়িতে ফোনকল করে জানান, ভারতের নায়ক সাইফ আলী খানের ওপর হামলা ঘটনায় যে ছেলের ছবি পত্রিকায় এসেছে, ওই ছেলের সঙ্গে তাঁর চেহারার মিল রয়েছে। এজন্য সাজ্জাদের হোটেল মালিক তাঁকে সাবধানে থাকতে বলেছিল । কিন্তু ওই দিন রাতেই পুলিশ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে।
ধৃত জঙ্গির বাবা রুহুল আমিন ও মা নাজমা বেগম জানান, কীভাবে ছেলেকে উদ্ধার এবং আইনি প্রক্রিয়া চালাবেন সেটা নিয়ে তারা চিন্তিত। কারণ তারা ভারতের কিছুই চেনেন না। তারা মনে করছেন, সাজ্জাদ ওই ঘটনায় জড়িত নয়,চেহারার মিল থাকায় সেখানে চক্রান্তের শিকার হতে পারে।।