এইদিন ওয়েবডেস্ক,লখনউ,১৬ জানুয়ারী : বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করে আধার কার্ড,স্বাস্থ্য কার্ড প্রভৃতি শংসাপত্র তৈরি করে ফেলেছিল । শুধু তাইই নয়,কোভিড ভ্যাকসিনের তিনটে ডোজও নিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশের এক কুখ্যাত ডাকাত । জোগাড় করে ফেলেছিল ভ্যাক্সিনেশন শংসাপত্র । ওই সমস্ত শংসাপত্র ব্যবহার করে নিজেকে ভারতীয় হিসাবে প্রমাণ করে ভারতে বসবাস করছিল এক লাখ টাকার পুরষ্কার ঘোষণা করা আসামি বাংলাদেশের বরিশালের পাণ্ডারিয়া জেলার চাউরখালি থানার বাসিন্দা মুসলিম খানের ছেলে আসলাম খান (৩৬) । ভারতে বেশ কয়েকটি ডাকাতদের দল খুলে ফেলেছিল আসলাম । রেললাইনের পাশে নির্মিত ভগ্নাবশেষ ভবনে ডেরা বেঁধে এলাকার বাড়িঘরে রেকি করত তারা । রাতে ওই সমস্ত বাড়িতে গিয়ে ডাকাতি করত । বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী এমনই এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীর রহস্যভেদ করল উত্তরপ্রদেশের লখনউ-এর চিনহাট থানার পুলিশ । শনিবার গভীর রাতে ওই দুষ্কৃতীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে । দুষ্কৃতীর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে শ্রম কার্ড, আধার কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, কোভিড টিকা শংসাপত্র এবং নগদ ২১৭৪ টাকা । পুলিশ আসলামের ৪ সঙ্গী চট্টগ্রামের নাসির খান,খুলনার নূর ইসলাম, বরিশালের সুমন ও খুলনার শাহীনের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ।
লখনউ পুলিশ জানিয়েছে, আসলামের প্রায় এক ডজন ডাকাত দল রয়েছে । চিনহাটে রেললাইনের পাশে নির্মিত জরাজীর্ণ বাড়িতে ডেরা বেঁধে তারা ডাকাতির ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করত । দিনের বেলায় তারা এলাকায় রেকি করে বাড়ি বা দোকান ডাকাতির জন্য চিহ্নিত করতো। রাতে একসঙ্গে সশস্ত্র অবস্থায় জোট বেধে সেখানে লুটপাট চালাতো । ডাকাতির সময় বাড়ি বা দোকানের মালিককে পনবন্দি করত এমনকি পরিবারের মেয়েদের ধর্ষণ পর্যন্ত করতো ওই সমস্ত কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা । পুলিশ আরও জানায়, আসলাম এবং তার দলের বাকিরা শতাব্দী এবং রাজধানীর মত ট্রেনই নয়,মাঝে মধ্যে ফ্লাইটেও তাদের জায়গা পরিবর্তন করত ।
ধৃতকে জেরা করে লখনউ পুলিশ জানতে পেরেছে, আসলামের দল কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে ট্রেনে যাওয়ার সময় মধ্যবর্তী কোনো স্টেশনে নেমে পড়ত । তারপর আগে থেকে চিহ্নিত করে রাখা বাড়ি বা দোকানে ডাকাতি করতে ঢুকে যেত । লুটপাটের পর তারা আবার কোনো না কোনো জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতো। জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম পুলিশকে বলেছে যে সে লখনউ জেলে বন্দি দুই দুষ্কৃতী রবিউল এবং বিলাল নামে তার সহযোগীদের সাথে দেখা করতে এসেছিল । আসলে আসলাম তাদের দুজনের জামিনের ব্যবস্থা করতে এসেছিলেন বলে জানা গেছে । জেলে তাদের সাথে দেখা করতে না পেরে,সে লখনউয়ের চিনহাট এলাকায় থাকার জায়গা খুঁজছিলেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় আসলাম ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত আসলাম খানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে লখনউতে ডাকাতির একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে । ২০২১ সালে বিদেশী নাগরিকত্ব আইনের অধীনে হত্যার চেষ্টার একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে । এছাড়া বারাণসী এবং লখনউ সহ একাধিক থানায় আসলামের বিরুদ্ধে অন্তত ৮ টি গুরুতর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে । পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল । কিন্তু চতুর আসলাম পুলিশের নজর এড়িয়ে এতদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিল । একারনে তার উপর এক লক্ষ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ । স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আসলামের মত এরকম বহু বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী ভারতে বিভিন্ন অপরাধামূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে । ওই সমস্ত দুষ্কৃতীদের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে অবিলম্বে সিএএ/এনআরসি কার্যকর করা উচিত বলে তাঁরা মত প্রকাশ করেছেন ।।