এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৫ আগস্ট : শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের উপর ব্যাপক হামলা চালানোর অভিযোগ উঠছে সেদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিমদের বিরুদ্ধে । বাড়ি বাড়ি ঢুকে চলছে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং ঘরবাড়ি ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ । হামলার বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । তার মধ্যে এক মহিলার একটা ভিডিও দেখে শিহরিত ভারতবাসী ।
ভিডিওতে দেখা গেছে একটি ফ্লাটের রান্না ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে এক হিন্দু দম্পতিকে। হিন্দু বধূ গোটা ঘর জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন এবং হামলাকারীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘ভাই…প্লিজ…আমাদের বাঁচান ।’ অন্য ঘর থেকে এক মহিলার করুন হৃদয় বিদারক আর্ত চিৎকার ভেসে আসছে । বধূ হামলাকারীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘ভাই…প্লিজ….ভাই, আমরা কিচ্ছু করব না… ভাই । বাঁচাও….রক্ষা করো ।’ অন্য ঘর থেকে এক মহিলার করুন আর্তনাদ শোনা যায়…’বাঁচাও’ । উদ্বিগ্ন বধূকে বলতে শোনা গেছে, ‘ভাই…প্লিজ মাফ করে দাও । ভাই দরজাটা খুলুন । প্লিজ ভাই….ভগবান,প্লিজ । বাঁচাও ভাই৷’ তখন অন্য ঘর থেকে প্রাণপণে চিৎকার শোনা যায় অন্য মহিলার… ‘বাঁচাও’ । বধূ হামলাকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ভাই.. আর মেরেন না ভাই । ভাই এমন করেন না ভাই৷ ভাই আমরা বিএনপি করি ।’ অন্য ঘরের তরুনী তার বাবার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেন,’বাবা…বাঁচাও ।’
হিন্দু পোস্টে বলা হয়েছে যে ওই ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল শহরে একটি হিন্দু বাড়িতে । আদ্রিতা অধিকারী নামে এক গৃহবধূর বাড়িতে হামলা চালায় বাংলাদেশি মুসলিমরা । অনুমান করা হচ্ছে যে অন্য ঘর থেকে বাঁচানোর কাতর চিৎকার মহিলা কন্ঠটি আদ্রিতাদেবীর মেয়ের । তবে তার মেয়ের সঙ্গে মুসলিমরা কি আচরণ করেছে তা স্পষ্ট নয় ।
অন্য একটি ভিডিও করেছেন এক হিন্দু ব্যক্তি৷ তিনি সম্ভবত বাড়ির কোনো গোপন জায়গায় আত্মগোপন করে সেখান থেকে ভিডিওটি করেছে । ভিডিওতে দেখা গেছে কয়েকজন ব্যক্তি নিচের ঘরে ঘরে ঢুকে কাউকে খুঁজছে । ওই হিন্দু ব্যক্তিকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়,দেখুন অবস্থা দেখুন । হিন্দু বাড়িতে হামলা ৷ আমি শান্ত চক্রবর্তী । ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখুন । আমি নিরুপায় আমাকে সাহায্য করুন । আমি কথা বলতে পারছি না । আমার সিসিটিভি ক্যামেরা গুলো সব ভেঙে দিচ্ছে দেখুন । হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে দিয়েছে….আমরা এর বিচার চাই । দেখুন অবস্থা… রামনগর… শ্বেত মাটি । আমাদের স্বাধীন দেশ । দেখেন দেখেন কি শুরু করেছে দেখেন । দেখেন শতশত লোক । দেখেন অবস্থা দেখেন । ওই দেখেন, লুটপাট চলছে । দেখেন সবাই দেখেন ।’ নিজেকে সামলাতে না পেরে ওই ব্যক্তি কেঁদে ফেলেন এবং বলেন ‘আমি এর বিচার চাই ।’
তবে শুধু হিন্দু বাড়ি বাড়িতে হামলা নয় বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দু মন্দিরে ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে । হিন্দু পোস্ট জানিয়েছে,বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলা থেকে খবর আসছে। হিন্দু মন্দিরে হামলা চলছে। রামপুরের এলিয়টগঞ্জে একটি হিন্দু মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করেছে ইসলামপন্থীরা। ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হয়। মন্দিরের গেট ভেঙ্গে গেছে। মন্দিরের ভিতরের জিনিসপত্রও ভাঙচুর করা হয়। বাংলাদেশের চট্রগ্রাম জেলায় হিন্দুদের উপর হামলা চলছে। ইসলামপন্থীরা দেশ দখলের পর সর্বত্র হিন্দুদের উপর হামলা হচ্ছে। চট্রগ্রাম শহরের হাজারী লেনের হিন্দুদের বাড়িতে হামলা করেছে ইসলামপন্থীদের একটি দল। হিন্দুদের কিছু দোকান লুট করা হয়েছে। ইসলামপন্থীরা হিন্দুদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে বলে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন ।
ওই সংবাদমাধ্যমের তরফে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনার একাধিক বিবরণ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পোস্টে । সে সমস্ত পোস্ট অনুযায়ী বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের তান্ডব নাচ অব্যাহত রয়েছে। বগুড়া জেলার পীরগাছা এলাকায় ইসলামপন্থীরা হিন্দু জনপদে হামলা চালিয়েছে। হিন্দুদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এছাড়াও এলাকার একটি হিন্দু মন্দিরে হামলা হয়েছে। মূর্তি ভাংচুর করা হয়। হিন্দুরা এখন আতঙ্কে আছে ।বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় হিন্দু মন্দিরে হামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে একটি হিন্দু মন্দিরে আগুন দিয়েছে ইসলামপন্থীরা। শহরের লালদিঘী এলাকায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা নবগ্রহ মন্দিরে আগুন দিয়েছে। মন্দিরটি পুড়ছে । বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায় হিন্দু মন্দিরে হামলা হয়েছে।ইসলামি উগ্রবাদীরা কালী মাতার মন্দিরে আগুন দিয়েছে।মৌলভীবাজারের নোটুন কালী মাতার মন্দিরে আগুন জ্বলছে। ফেনী জেলার বাঁশপাড়া এলাকায় মা দুর্গা মন্দিরে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়েছে ইসলামপন্থীরা। মন্দির জ্বলছে। হিন্দু সংখ্যালঘুরা এখন অসহায় । তবে বাংলাদেশের বর্তমান নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেনাবাহিনীর উপর । কিন্তু সেনাবাহিনীকে হিন্দুদের রক্ষা করতে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি । ফলে আজ রাতের মধ্যে বিশাল সংখ্যক হিন্দুর হয় প্রাণহানি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । আশঙ্কা এটাও করা হচ্ছে যে অতীতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো এবারেও বহু হিন্দু নারী এবং অল্প বয়সী মেয়েরা ধর্ষণ বা ঘনদর্শনের শিকার হতে পারে ।।