এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২০ ডিসেম্বর : বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের কার্যত ‘সেফ হেভেন’ হয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গ । সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রককে কলকাতা পুলিশ দিয়েছে যা চমকে দেওয়ার মত । হিন্দি নিউজ পোর্টাল ওপি ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমরা কলকাতায় জাল পাসপোর্ট তৈরি করে ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে । এই সমস্ত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ইতালি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের অনেক অনেক উন্নত দেশ। এমন লোকের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে জানা গেছে। কলকাতা পুলিশ বিদেশ মন্ত্রককেও এই তথ্য দিয়েছে। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশ জাল পাসপোর্ট তৈরির চক্রের হদিশ পেলে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসে বলে জানানো হয়েছে ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,কলকাতা পুলিশ গত কয়েক দিনে এই চক্রেত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে পোস্ট অফিসের দুজন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী দীপঙ্কর দাস এবং দীপক মণ্ডল রয়েছে । এই চক্রের নেতারা হল সমরেশ বিশ্বাস ও তার ছেলে রিপন বিশ্বাস । দুজনই বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। একই সঙ্গে এই মামলায় অনেক পোস্ট অফিসের পাশাপাশি পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের ভূমিকাও তদন্তকারী সংস্থা খতিয়ে দেখছে । বলা হয়েছে,এই পুরো প্রতারণা চক্রের জাল বহুদুর বিস্তৃত৷ এর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের। তদন্তকারী সংস্থাগুলি আশঙ্কা করছে যে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ছাড়াও ভারতীয় ডাক বিভাগের কিছু স্থায়ী কর্মচারীও এই চক্রের অংশ হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে রাজ্যের আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর গ্রামগুলি থেকে পরিচালিত ডাক বিভাগের কেন্দ্রগুলিকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে ৷
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ জানতে পেরেছে যে গত কয়েক মাসে ভুয়া পাসপোর্ট চক্রের সদস্যরা ভারতীয় পরিচয় দিয়ে ১২১ জন বাংলাদেশির পাসপোর্ট বানিয়েছে। এর মধ্যে ৭৩টি পাসপোর্ট ইস্যু করেছে আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ। বাকি ৪৮টি পাসপোর্ট তৈরির অপেক্ষায় ছিল। তবে এখন এসব আবেদন খারিজ করা হয়েছে। এখানে পরিস্থিতি এমন যে, সন্ত্রাসীরাও সহজেই পাসপোর্ট তৈরি করে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করতে তদন্তকারী দল । বলা হচ্ছে যে প্রকৃতপক্ষে, এই চক্রটিই প্রথম অবৈধভাবে ভারতে আসা বাংলাদেশিদের জাল নথি তৈরি করেছিল। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো হলো বাংলাদেশিদের নামে জাল ভোটার আইডি কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদি। এই নথিগুলির ভিত্তিতে, তারা কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া ঠিকানা থেকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করত এবং পাসপোর্টের জন্য আবেদন করত।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্যাং লিডার সমরেশ বিশ্বাস এই বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পাসপোর্টের জন্য ২ থেকে ৫ লাখ টাকা নিত । দৈনিক জাগরণ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া পোস্ট অফিস পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী দীপঙ্কর দাস গেজেট থেকে তথ্য পেয়েছেন যে এই চক্রটি প্রায় ৩০,০০০ ব্যক্তির (অধিকাংশ বাংলাদেশি) জাল পাসপোর্ট তৈরি করেছে। তাদের সবার নামও পাওয়া গেছে। প্রকৃতপক্ষে, মালদা জেলায় বিপুল সংখ্যক লোক পাসপোর্ট তৈরি করার পরে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সতর্ক হয়েছিল। এদিকে, তথ্য পাওয়া গেছে যে গত এক বছরে মালদায় ১৬,০০০-এর বেশি পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। মালদহের বৈষ্ণবনগর, কালিয়াচক, হবিবপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে বহু বাংলাদেশি ভারতীয় পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আসলে ইউরোপীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশিরা সহজে ভিসা পায় না। তাই বাংলাদেশীরা ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে, যাতে ভিসার পাশাপাশি তারা সহজেই সেখানে চাকরি পেতে পারে। ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের হদিশ পাওয়ার পরে, রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ এখন পাসপোর্ট আবেদনকারীদের ১৯৭১ সালের আগে নথি দেখানোর দাবি করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,২০২১ সালের নভেম্বরে, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড (এটিএস) এমনই একটি চক্র ফাঁস করেছিল যা হিন্দু নামে ভারতীয়দের জাল নথি ব্যবহার করে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিদেশে পাঠাচ্ছিল। সাহারানপুর থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে এটিএস । অভিযুক্তের নাম অজয় ঘিলদিয়াল,যে এয়ার ইন্ডিয়ার কাস্টমার কেয়ারে কাজ করত । এখনও পর্যন্ত, অজয়ের বিরুদ্ধে জাল নথির সাহায্যে প্রায় ৪০ জনকে স্পেন, ব্রিটেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে মুসলমানদের হিন্দুদের নামে ভারতে ঢুকতে দেওয়ার চক্রের ফাঁস করেছিল এটিএস । এই মামলায় মানব পাচারকারী চক্রের সহায়তাকারী বিক্রমকে গাজিয়াবাদ থেকে এবং সমীর মণ্ডলকেও পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সমীর মন্ডল একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালাত । এই অভিযুক্তরা বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যও কাজ করেছিল। এই ভারতীয় নাগরিকত্বের নথির সাহায্যে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বিদেশে পাঠানো হয়। বিক্রমকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধরা পড়ে তার সহযোগী অজয় ঘিলদিয়াল। জাল নথির সাহায্যে বিদেশে পাঠানো প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অজয় ১৫,০০০ টাকা নিত । এয়ারলাইন ডিউটিতে থাকা আরও অনেক কর্মচারীও এই টাকা ভাগাভাগি করে নিত । এই মামলার আরেক অভিযুক্ত গুরপ্রীত,যে লন্ডন পাসপোর্ট অফিসে কাজ করত । অভিযুক্ত অজয়কে ফোনে নির্দেশ দিত গুরপ্রীত,প্রতিবেদনে এমনই বলা হয়েছে ।।