এইদিন বিনোদন ডেস্ক,২০ মে : শেখ শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বাংলাদেশের অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে । তার বিরুদ্ধে তথাকথিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে হত্যাচেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল । একদিন জেলেও কাটিয়েছেন অভিনেত্রী । অবশেষে জামিন পেলেন তিনি । ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান আজ মঙ্গলবার সকালে তার জামিনের আদেশ দেন বলে ফারিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানান। তিনি বলেন,’আমরা নুসরাত ফারিয়ার জামিন চেয়ে স্পেশাল পুটআপ জমা দিয়েছিলাম। আদালত শুনানি শেষে তাকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন। “আমরা এখন জামিননামা দাখিল করব। আশা করছি, তিনি আজই কারামুক্ত হতে পারবেন।’
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার এই অভিনেত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তারের পর গত দুদিন ধরেই নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে, যাতে যোগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও। থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য রবিবার সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ নুসরাত ফারিয়াকে আটকে দেয়। পরে তাকে ভাটারা থানার এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি গত মার্চ মাসে নায়িকা নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, আশনা হাবিব ভাবনা, নায়ক জায়েদ খানসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীসহ ২৮৩ জনের নামে আদালতে মামলা করেছিল । আদালতের নির্দেশে ভাটারা থানা গত ২৯ এপ্রিল তা এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, কথিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান করছিল জঙ্গিরা । এসময় গুলি চালানো হলে তা এনামুলের পায়ে গুলি লাগে। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয় । মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই বিল্লাল ভূঁইয়া সোমবার সকালে ফারিয়াকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে ফারিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আইনজীবী ফারহান মোহাম্মদ আরাভ শুনানিতে বলেন, যে সময় মামলার বাদী গুলিতে আহত হয়েছেন, নুসরাত ফারিয়া তখন দেশেই ছিলেন না। তিনি (নুসরাত ফারিয়া) একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী।আন্দোলনের আগে ৯ জুলাই শুটিং করতে কানাডায় যান। সেখান থেকে তিনি ১৪ অগাস্ট দেশে ফিরে আসেন। সেই কাগজপত্র আমরা জমা দিয়েছি৷ তিনি আন্দোলনের স্বপক্ষে ছিলেন, পোস্টও করেছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। তিনি আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত নেই। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।’
ফারিয়ার আর এক আইজীবী মোর্শেদ আলম শাহিন বলেন, ‘ঘটনার সময় তিনি দেশে ছিলেন না, বিদেশে ছিলেন। তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো আইনের পরিপন্থি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তাদের কাজ হল ভুল ত্রুটি তুলে ধরা। সেটায় তিনি করেছেন।তাকে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। আস্থার সর্বশেষ স্থল আদালত। যে কোনো শর্তে জামিনের প্রার্থনা করছি। তিনি শারীরিকভাবেও অসুস্থ।’
যদিও রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। ওমর ফারুক বলেন, ‘ফ্যাসিস্টরা কি করে। দেশের নায়ক, নায়িকা, ফুটবলারদের পিক আপ করে দলে নেয়। আর ফ্যাসিস্টদের লোভে পড়ে তারাও অনেকে চলে যায় আনুকূল্য পাওয়ার জন্য, উচ্চ পর্যায়ে যেতে। সেও পলককে অবলম্বন করেছে এবং সেখানে গিয়েছে ।’
শুনানি শেষে আদালত ঘটনার সময় নুসরাত ফারিয়া দেশের বাইরে ছিলেন কিনা, আন্দোলনের পক্ষে ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলেন কিনা সেই মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে। নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে বিচারক বলেন, ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ২২ মে জামিনের বিষয়ে শুনানি হবে। তবে ফারিয়ার আইনজীবীরা জামিন চেয়ে বিশেষ আবেদন জমা দিলে মুখ্য মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান মঙ্গলবারই শুনানি করেন এবং এই অভিনেত্রীর জামিন মঞ্জুর করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নির্ভর ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফারিয়া। প্রয়াত ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় সিনেমাটি তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ -ভারতের যৌথ প্রযোজনায়। ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমায় ফারিয়া ছাড়াও আরিফিন শুভ, নুসরাত ইমরোজ তিশা, রিয়াজ আহমেদসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন।
ফারিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকেই বলতে শুরু করেন, ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয় করার কারণেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই অভিনেত্রীকে। হত্যাচেষ্টার মামলা দিয়ে তাকে ‘অন্যায়ভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে’ বলেও অনেকে অভিযোগ করেন। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন,’নুসরাত ফরিয়াদের গ্রেপ্তার করে মূলত গণহত্যার বিচারকে হালকা করা হচ্ছে। নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তার হলে তিশারাও গ্রেপ্তার হবে। এমনকি সারাজীবন আওয়ামী লীগের সুবিধা নেওয়ার জন্য ফারুকীও এরেস্ট হওয়ার কথা।’
নুসরাত ফারিয়ার মত অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাও অভিনয় করেছেন ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায়। সেখানে শেখ হাসিনার মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ভূমিকায় তাকে দেখা যায়। তিশার স্বামী মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সমালোচনার মধ্যে ফারুকী নিজেও ফেইসবুকে ফারিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, সেই ‘স্নায়ুচাপ’ থেকে নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকতে পারে বলে তার ধারণা। ফারিয়ার গ্রেপ্তারকে ‘বিব্রতকর’ হিসেবে বর্ণনা করে সংস্কৃতি উপদেষ্টা লেখেন,’এইসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমি বিশ্বাস করি, ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে।’ বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। পুলিশের ভূমিকার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন,’ওনার (ফারিয়া) বিরুদ্ধে তো তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তো আমরা বলতে পারব না… এই অবস্থায় আবার ছেড়ে দিলে আপনারাই বলবেন যে ছেড়ে দিলাম কেন?’

