এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৩ জুন : চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যাসহ পাঁচ মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ফের জেলে ঢুকিয়েছে মহম্মদ ইউনূসের পুলিশ । আজ মঙ্গলবার তার জামিনের আবেদনের শুনানি হয়৷ কিন্তু চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক শুনানি শেষে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন ৷ এদিকে ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, যেভাবে কাশ্মীরের জেলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে তিল তিল করে হত্যা করা হয়েছিল ঠিক একই ভাবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে জেলের মধ্যে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে ।
তথাগত রায় এক্স-এ লিখেছেন,’খবর আসছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী কারাগারে খুবই অসুস্থ। তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। মনে হয় মানুষটাকে কারাগারে শেষ করে দেবে। ঠিক এই ভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় খুন হয়েছিলেন নেহরু ও শেখ আবদুল্লার চক্রান্তে। নেহরু কিছুতেই তার মৃত্যুর ব্যাপারে কোন তদন্ত হতে দেন নি। হিন্দুর হয়ে যে লড়াই করবে তাদের প্রত্যেকেরই কি এই পরিণতি?’
এদিকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, কারাগারে থাকা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কোতোয়ালি থানার হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরসহ পাঁচ মামলায় জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে দাবি করেন তাঁর আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। মফিজ উদ্দিন আরও বলেন, চিন্ময় দাস অসুস্থ বলে আদালতকে জানান তাঁর আইনজীবীরা । এরপর আদালত কারাবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
চিন্ময়ের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘শুনানিতে আমরা আদালতকে বলেছি, চিন্ময় দাস কারাগারে অসুস্থ। তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এ ছাড়া ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে এসব মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জামিন চাইতে এসে কোনো বাধার সম্মুখীন হননি তাঁরা।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ মে চিন্ময় দাসকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলায় ভার্চ্যুয়াল শুনানি শেষে গ্রেপ্তার দেখায় আদালত। পরে অন্য মামলাগুলোয় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।এদিকে চিন্ময় দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে ইসলামি সংগঠনগুলি ব্যাপক হামলা চালায় আদালত চত্বরে । সেই সময় হিন্দু ভেবে ভুল করে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে ইসলামপন্থীরা । এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছিল। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধার, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
যেটা জানা যাচ্ছে যে সাইফুল ইসলাম হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে পুলিশ । তাদের দিয়ে বলানো হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন । যদিও এই বয়ান কারাগারের মধ্যে ব্যাপক অত্যাচার চালিয়ে তাদের কাছ থেকে লিখিয়ে নেয় বাংলাদেশের পুলিশ ।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সন্ত্রাসী ফিরোজ খান কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ওই মামলা করে । পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর থেকে তিনি জেলেই ছিলেন । প্রায় ৬ মাস জেলে থাকার পর তাকে জামিন দেওয়স হয় । কিন্তু আইনজীবীকে হত্যার মিথ্যা মামলা এনে তাকে জেল থেকে বের হতেই দেওয়া হয়নি ।।

