সন্ত্রাসের নতুন হটস্পট বাংলাদেশ ভারতের নিরাপত্তার জন্য ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেল প্রায় ৩:০০ টা নাগাদ শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ এখন কথিত অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির হাতে । লেবানন ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিযবুত তাহরীর,  খালেদা জিয়ার কট্টর ইসলামি দল বিএনপি, কট্টর ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন বাংলাদেশ জামাত ইসলামির দখলে পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা । তারা ইউনূসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা, মুসলিম সম্প্রদায়কে একত্রিত করা এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামী শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে । যেকারণে সব চেয়ে বেশি বিপদে পড়ে গেছে সেদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা । মহম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হিন্দু মেয়েদের অপহরণ, লাভ জিহাদে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তরিত করে মুসলিম পুরুষকে নিকাহ করতে বাধ্য করার ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে ৷ বাড়ছে হিন্দুদের খুন,ধর্মস্থলে হামলা,সম্পত্তি জবরদখলের ঘটনাও । কিন্তু শুধু বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ই নয়, আজ ভারতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে ওই ইসলামি রাষ্ট্রটি । সম্প্রতি মালয়েশিয়ান পুলিশ ৩৬ জন বাংলাদেশী সন্ত্রাসবাদীকে গ্রেপ্তার করার পর মহম্মদ ইউনূস ও তার দলবলের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের উন্মোচন হয়েছে । ওই সন্ত্রাসীরা কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামি স্টেটের(আই এস আই এস) হয়ে কাজ করছিল বলে মালয়েশিয়ান পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে । যা ভারতের নিরাপত্তার জন্যও গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে । 

বর্তমান বাংলাদেশ শুধু ভারত নয়,গোটা বিশ্বের জন্য কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে তার খন্ড চিত্র তুলে ধরেছেন ইংরাজি সাপ্তাহিক পত্রিকা ব্লিটজের সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী । এই বিষয়ে তার লেখা একটা প্রতিবেদনের অনুবাদ নিচে তুলে ধরা হল  : 

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিন ইসমাইল, ২৭ জুন, ২০২৫ তারিখে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে  প্রকাশ করেন  যে রয়েল মালয়েশিয়ান পুলিশ চলতি সপ্তাহে ৩৬ জন বাংলাদেশী নাগরিককে “উগ্র জঙ্গি আন্দোলনে” জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেছেন, “স্পেশাল ব্রাঞ্চ টিমের গোয়েন্দা তথ্য এবং সমন্বিত পদক্ষেপ থেকে জানা গেছে যে এই দলটি ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস) মতাদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত চরমপন্থী বিশ্বাস গ্রহণ করেছে”।

মালয়ে মেইল  ​​এবং  নিউ স্ট্রেইটস টাইমসের তথ্য অনুযায়ী  , মালয়েশিয়ান পুলিশ জানতে পেরেছে যে এই গোষ্ঠীটি তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে নিয়োগ সেল প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে তারা উগ্র মতাদর্শের অধিকারী ব্যক্তিদের শিক্ষা দেয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশে বৈধ সরকারকে উৎখাত করার পরিকল্পনা করে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিস্তারিতভাবে বলেন যে গ্রেপ্তারকৃতরা নিম্নলিখিত উদ্দেশ্য নিয়ে এই গোপন নিয়োগ সেলগুলি তৈরি করেছিল:

★ উগ্র ইসলামী বিশ্বাসের শিক্ষাদান,

★ সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহায়তা করার জন্য তহবিল সংগ্রহ, এবং

★ তাদের নিজ দেশে বৈধ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র।

মালয়েশিয়ার শূন্য-সহনশীলতার নীতির উপর জোর দিয়ে মন্ত্রী সাইফুদ্দিন বলেন,  “আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে মালয়েশিয়া কোনও বিদেশী চরমপন্থী আন্দোলনের জন্য একটি আশ্রয়স্থল হবে না, যুদ্ধক্ষেত্র তো দূরের কথা” ।

কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে যে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য দেশেও একই ধরণের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে যেখানে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি প্রবাসীরা বাস করেন।

২০২৪ সালের জিহাদি অভ্যুত্থানের পর থেকে, বাংলাদেশে উগ্র ইসলামী জঙ্গিবাদের বিপজ্জনক উত্থান দেখা দিয়েছে, চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি ক্রমাগত ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের বিলুপ্তি এবং মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলে আসছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে আইসিস এবং আল-কায়েদা উভয়ই বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ হিসেবে দেখছে।

২০ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে, আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (AQIS) তাদের প্রচারণা শাখা  আস-সাহাব সাবকন্টিনেন্টের মাধ্যমে তাদের আমির উসামা মাহমুদের ১৪ পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। “বাংলাদেশ – মুসলিম জনতার জন্য ইসলামকে সমর্থন করার উদীয়মান আশা” শিরোনামে, বিবৃতিতে বিদ্রোহকে স্বাগত জানানো হয় এবং বাংলাদেশে ইসলামী শাসন সুদৃঢ় করার জন্য জিহাদি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।

দ্য জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের  মতে,”অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশী সরকার এখন ইসলামী চরমপন্থা এবং সাম্প্রদায়িক হিংসা থেকে শুরু করে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা পর্যন্ত বিভিন্ন সংকটের মুখোমুখি । বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দুদের ক্রমবর্ধমান জন সংখ্যা হ্রাস, উগ্র ইসলামী শক্তির পুনরুত্থান এবং ভারতের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা উভয়কেই প্রতিফলিত করে।”

বাংলাদেশের পরিস্থিতির এক ভয়াবহ মূল্যায়নে,  দ্য ইকোনমিস্ট লিখেছে :“১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যে উচ্ছ্বাস ছিল তা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিভে যেতে মাত্র চার বছর সময় লেগেছিল। গত বছর এক জনপ্রিয় বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা আরও দ্রুত নিভে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন একটি বিদ্রোহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে, যিনি পূর্ববর্তী ১৫ বছর ধরে ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারের সাথে দেশ শাসন করেছিলেন। ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ এবং জাতীয় বীর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে, যিনি গণতন্ত্র পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রায় এক বছর পর, নতুন বাংলাদেশ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।”

দ্য ইকোনমিস্ট  আরও উল্লেখ করেছে যে মহম্মদ ইউনূস, যিনি তার সম্প্রতি গঠিত ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)’র মাধ্যমে মাত্র পাঁচ শতাংশ সমর্থন ভোগ করেন, তিনি সংস্কারের অজুহাতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০২৪ সালের অক্টোবরে, বিখ্যাত ভারতীয় কৌশলবিদ অধ্যাপক ব্রহ্মা চেলানি নিক্কেই এশিয়াতে লিখেছিলেন, “বিশ্বের অষ্টম-সর্বাধিক জনবহুল দেশ বাংলাদেশ, সামরিক-সমর্থিত শাসন পরিবর্তন এবং সহিংস অভ্যুত্থানের পরে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। শুদ্ধিকরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর পদ্ধতিগত আক্রমণ এবং কারাবন্দী সন্ত্রাসীদের মুক্তির মধ্যে, একটি ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে – দেশজুড়ে উগ্র ইসলামবাদের উত্থান”।

উগ্র ইসলামপন্থী এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলিকে, বিশেষ করে যারা ভারতকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে কাজ করে, তাদের আশ্রয় এবং পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ইউনূসের শাসনব্যবস্থা ক্রমশ আন্তর্জাতিকভাবে তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছে, তবে ঢাকার জন্য একটি নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে।

রয়টার্সের মতে,ইউক্রেন বাংলাদেশকে রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে লুট করা গম আমদানির অভিযোগ করেছে  । কিয়েভ সতর্ক করে দিয়েছে যে যদি এই ধরনের বাণিজ্য অব্যাহত থাকে, তাহলে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করবে। বিষয়টির সাথে পরিচিত সূত্রের দেওয়া নথি থেকে জানা যায় যে, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইউক্রেনীয় দূতাবাস চলতি বছর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে, যেখানে ঢাকাকে রাশিয়ার কাভকাজ বন্দর দিয়ে চুরি হয়ে রপ্তানি করা ১,৫০,০০০ টনেরও বেশি শস্য প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলেকসান্ডার পোলিশচুক বলেছেন যে ঢাকা এই যোগাযোগের কোনও জবাব দেয়নি। তিনি আরও বলেন যে কিয়েভ এখন বিষয়টি আরও বাড়িয়ে তুলতে চাইছে, কারণ গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে যে রাশিয়া চালানের আগে চুরি করা ইউক্রেনীয় শস্য তাদের নিজস্ব রপ্তানির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। “এটি একটি অপরাধ”, রয়টার্সের সাথে এক সাক্ষাৎকারে পোলিশচুক বলেন  । “আমরা আমাদের তদন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহকর্মীদের সাথে ভাগ করে নেব, এবং আমরা তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব”।

২০২৫ সালের এপ্রিলে, ইউক্রেন চুরি করা শস্য পরিবহনের অভিযোগে তার জলসীমায় একটি বিদেশী জাহাজ আটক করে। গত বছর, একই ধরণের ঘটনার ফলে একটি পণ্যবাহী জাহাজ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং এর ক্যাপ্টেনকে আটক করা হয়।

ইউক্রেনের ১১ জুনের চিঠিতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে চুরি করা শস্য আমদানির জন্য বাংলাদেশ “গুরুতর পরিণতির” মুখোমুখি হতে পারে, জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে এই ধরনের লেনদেন ইউক্রেনের মানবিক সংকটকে আরও খারাপ করে তুলবে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে নিষেধাজ্ঞা “আমদানিকারী কোম্পানিগুলির বাইরেও বিস্তৃত হতে পারে এবং সরকারি কর্মকর্তা এবং নেতৃত্বের ব্যক্তিত্বদেরও লক্ষ্যবস্তু করা যেতে পারে যারা জেনেশুনে এই ধরনের লঙ্ঘনকে সহজতর করে বা সহ্য করে”।

অভিযোগের জবাবে, ইইউ মুখপাত্র অনিত্তা হিপার বলেছেন যে জড়িত জাহাজগুলি বর্তমানে কোনও ইইউ নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই তবে আরও বলেছেন,  “চুরি করা ইউক্রেনীয় শস্য পরিবহনে জাহাজের যে কোনও প্রমাণিত সংশ্লিষ্টতা ভবিষ্যতের বিধিনিষেধ মূলক ব্যবস্থার ভিত্তি প্রদান করতে পারে”।  ইইউ ইতিমধ্যেই ৩৪২টি জাহাজকে অনুমোদন দিয়েছে যাদের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী যোগসূত্রের জন্য বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেপ্তার পর্যন্ত একাধিক সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, মহম্মদ ইউনূস মনে হচ্ছে এই বিষয়ে অজ্ঞ। পরিবর্তে, তিনি আগামী মাসে একটি তথাকথিত “জুলাই সনদ” প্রকাশের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এই বিতর্কিত ঘোষণা ইউনূসকে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ভেঙে দেওয়ার এবং তাদের স্থলে একটি সরকার-পন্থী আধাসামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দেবে যার নাম ছিল  ইসলামিক রেভোলিউশনারি আর্মি (IRA) । এটি ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল করে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে একটি স্থায়ী “বিপ্লবী সরকার”তে রূপান্তরিত করারও চেষ্টা করবে, যা ১৯৭৯-পরবর্তী ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে পরিচালিত হবে।।এই সনদের অধীনে, ইউনূস রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পু, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান এবং সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত অন্যদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা লাভ করবেন।

উদ্বেগজনকভাবে, ১৩ জুন লন্ডনে এক বৈঠকে – যাকে এখন “লন্ডনগেট ষড়যন্ত্র” বলা হচ্ছে – ইউনূস বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুমোদন লাভ করেন বলে জানা গেছে, যিনি প্রস্তাবিত বিপ্লবী সরকারে যোগদান এবং জাতীয় নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখতে সম্মত হন। খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার প্রশাসনের সাথে সহযোগিতার অভিযোগে “মানবতাবিরোধী অপরাধের” অভিযোগে রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন এবং জেনারেল ওয়াকারের বিরুদ্ধে মামলা করার ইউনূসের ইচ্ছাকেও বিএনপি সমর্থন করেছে।

ইউনূস এবং তার মিত্ররা জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সালের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং ক্ষমতার গণতান্ত্রিক হস্তান্তরকে সহজতর করার জোরের কারণে বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ। রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান সতর্ক করে বলেছেন যে এই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ হতে পারে “আগামী বছরগুলিতে বাংলাদেশে কোনও নির্বাচন নাও হতে পারে”।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর, জেনারেল ওয়াকার ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন, সাংবিধানিক শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সহজতর করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রায় এক বছর পর, ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদের মুখে তার নীরবতা বধির করে দিচ্ছে। অক্ষমতা বা অনিচ্ছার কারণেই হোক, জেনারেল ওয়াকার এখন একজন নিষ্ক্রিয় পর্যবেক্ষক হিসেবে দেখাচ্ছেন যখন বাংলাদেশ এক বিপজ্জনক অতল গহ্বরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদাসীন থাকে, তাহলে বাংলাদেশ শীঘ্রই উগ্র কর্তৃত্ববাদের খপ্পরে পড়তে পারে, যার পরিণতি দক্ষিণ এশিয়া এবং তার বাইরেও ভয়াবহ হতে পারে।

মুহাম্মদ ইউনূসের “বিপ্লবী সরকারের” উত্থান কেবল একটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন নয় – এটি একটি আঞ্চলিক জিহাদি কেন্দ্রের উদ্ভব, যা প্রতিবেশী ভারতকে অস্থিতিশীল করতে, বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের অনুপ্রবেশ করতে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করতে সক্ষম। সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই বিদেশে আবির্ভূত হচ্ছে এবং আদর্শিকভাবে পরিচালিত মিলিশিয়া বাহিনীর পক্ষে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা চলছে, বাংলাদেশ এক অপরিবর্তনীয় বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। একসময়ের প্রতিশ্রুতিশীল গণতন্ত্র ধর্মান্ধতা এবং ভূ-রাজনৈতিক কারসাজির আগুনে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করার আগে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।।