এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১২ সেপ্টেম্বর : এবারের দুর্গোৎসব বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে ৷ কারন গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত শেখ হাসিনা সরকারকে তালিবানি কায়দায় উৎখাত করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি । তারপর থেকে নিদারুন সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হচ্ছে সেদেশের হিন্দুরা । এদিকে দুর্গোৎসব আসন্ন । তার আগেই বেশ কিছু ফতোয়া জারি করে দিয়েছে বাংলাদেশের উগ্র ইসলামি সরকার । সেই সমস্ত ফতোয়াগুলির মধ্যে অন্যতম হল আজানের ৫ মিনিট আগে পূজার আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ কুরে দেওয়া । সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের সামনে এই ফতোয়া জারি করে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিন্দুদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে নির্দেশ অমান্য করলে গ্রেফতার করা হবে । এছাড়া তিন দিনের দুর্গোৎসবের মধ্যে একদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে । যানিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে হিন্দুদের মধ্যে ।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টার বক্তব্যের ভিডিও এক্স-এ পোস্ট করে বাংলাদেশ ইসকনের সহ সভাপতি রাধারমণ দাস লিখেছেন,’বাংলাদেশী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টাকে দেখুন, যিনি নির্দেশ দিচ্ছেন যে হিন্দুদের তাদের পূজা, সঙ্গীত এবং যেকোন আচার-অনুষ্ঠান আজানের ৫ মিনিট আগে বন্ধ করতে হবে-অথবা গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হতে হবে। এটি নতুন তালেবানি বাংলাদেশ। কিন্তু কোন বলিউডিয়া বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের জন্য প্ল্যাকার্ড ধরবে না কারণ তারা হিন্দু।’ কিন্তু এই নির্দেশের পর প্রশ্ন উঠছে যে কিভাবে তিথি ও শাস্ত্র মেনে দুর্গাপূজো করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশের হিন্দুরা ।
বিশেষ করে পূজোর একটা নির্দিষ্ট মুহুর্তে ঢাক ও কাঁসর বাজানো জরুরি । কিন্তু এই ফতোয়ার পর শাস্ত্র বহির্ভূত ভাবেই তারা পূজো করতে বাধ্য হবে ৷ বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক পেজে লিখেছে,’সীমান্ত এলাকায় ভালো পূর্জা মন্ডপ তৈরি নিয়ে তোরজোর কেন? পূজোই তো হবে কোন রিয়েলেটি শো তো নয়? নাকি পাশ্ববর্তী দেশের সামনে এটা শো করার জন্য তোরজোর যে সংখ্যালঘুরা দেশে নিরাপদে আছে? আমার জন্ম থেকে এই পর্যন্ত শুধু দুর্গাপূজা নয় আমাদের হিন্দুদের যত পূর্জা আছে কোন পূজায় দেখিনি যে আজান দেওয়ার সময় বা নামাজ পড়ার সময় কোন ঢাক বা বাজনা বাজানো হয়েছে। এমনকি আমরা হিন্দুরা সন্ধ্যায় পূজা দেওয়ার সময় এতোটা সতর্ক থাকি যেনো আজানের সময় শঙ্খ বা কোন বাদ্য যন্ত্রের প্রভাব তাদের উপর না পড়ে। তবে এই বক্তব্য মিডিয়ার সামনে এনে কি প্রমাণ করা হচ্ছে? এটা প্রমাণ করা হচ্ছে নাকি যে আমারা এদেশে আজানের সময় মনে হয় খুব ঢাক ঢোল বাজিয়ে ঝুট ঝামেলা শুরু করি। খেলাটা আসলে কোনদিক দিয়ে খেলতে চাচ্ছেন এরা?’
পাশাপাশি ঘোষণা করা হয়েছে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবারে বাংলাদেশের দুর্গাপূজা মণ্ডপগুলিতে পাহাড়া দেবে মাদ্রাসার ছাত্ররা । এতে বাংলাদেশের মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যেও চরম উৎসাহ দেখা যাচ্ছে । এদিকে অনান্য সময় হিন্দু মন্দির ও হিন্দুদের উপর আক্রমণ করা এই মাদ্রাসা ছাত্রদের পুজোমণ্ডপ পাহাড়া দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য আদপে তাদের ‘লাভ জিহাদে’-এর সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে ।
এই বিষয়ে একটা সতর্কতামূলক পোস্ট করেছেন জয় কুমার দাস নামে এক বাংলাদেশি হিন্দু । তিনি নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘দুর্গাপূজা মন্ডপের মাদ্রাসার ছাত্রদের পাহারার ব্যাপারটা অতি সুকৌশল।তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে দেওয়ার চেষ্টা করলাম:
১) পুজোর সময় পুজো মণ্ডপে বাড়ির মেয়েরা উপস্থিত থাকবে এর ফলে খুব সহজেই পাহারা দেয়ার নাম করে মাদ্রাসার ছেলেরা সারাদিন পূজা মন্ডপে উপস্থিত থাকবে এবং তাদেরকে টার্গেট করবে।
২) পুজো মন্ডপে মাদ্রাসার ছেলেরা উপস্থিত থাকলে তারা নানান রকম পুজো আচরণ দেখতে পারবে এবং সেই বিষয় নিয়ে নানান রকম মন্তব্য করে মজা করে হিন্দু ধর্মের বদনাম করাটা সহজ হবে, তাদের পক্ষে কোনভাবেই আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি বোঝা সম্ভব নয়।
৩) পূজা মণ্ডপে মুসলমান ছেলেরা উপস্থিত থাকলে অনেকটা সময় তারা সেখানে থাকতে পারবে এবং হুজুরদের নির্দেশ মতো নানান কথার মাধ্যমে হিন্দুদেরকে ধর্ম পরিবর্তন করার চেষ্টা করবে।
৪) পুজো মন্ডপে মাদ্রাসার ছেলেরা উপস্থিত থাকলে তারা খুব সহজেই খবর পৌঁছে দিতে পারবে কখন পূজা মন্ডপে ভিড় হচ্ছে আর কখন পূজা মন্ডপ খালি থাকছে সুতরাং হামলা করার পক্ষে উপযুক্ত সময়টা তারাই বলে দিতে পারবে। এক কথায় জোর না করে অতিরিক্ত সু কৌশলে মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে সমস্ত পুজো মণ্ডপ গুলো দখল করাবার টা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মাদ্রাসার ছাত্ররা যদি সেখানে থাকতে আরম্ভ করে তাহলে সমগ্র পুজো মণ্ডপ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে এবং একটা বিষয় খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে যেহেতু মাদ্রাসার ছাত্ররা পূজা মন্ডপ পাহারা দিচ্ছে সুতরাং পুজো পরিচালনার সবকিছুই তাদের কথাতেই হবে।
এর মাধ্যমে বাঙালি শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর একটা ইসলামীকরণের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। সকল হিন্দুদের কাছে আমাদের আহ্বান পূজো মণ্ডপ গুলোকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করুন। সবাই বাড়িতে না থেকে মন্ডপে ঠাকুর আশা থেকে ঠাকুর বিসর্জন সমগ্র সময়টা পুজো মণ্ডপেই দিন। নেশা করা থেকে বিরত থাকুন সবাই মিলে পুজো মণ্ডপকে ঘিরে থাকুন। নিজেরাই পুজো মণ্ডপ রক্ষা করার দায়িত্ব নিন।মনে রাখবেন অহিংসা পরম ধর্ম কিন্তু ধর্মের রক্ষার জন্য হিংসা ভুল বা পাপ নয়।।