এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২৪ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পূর্বে রয়েছে চন্দ্রনাথ পাহাড়, পাহাড়ের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর । ঝড়না আর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সীতাকুণ্ডে রয়েছে কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন হিন্দুদের অন্যতম পবিত্রতম তীর্থস্থান ভগবান চন্দ্রনাথের মন্দির । নেপালের পশুপতিনাথ, কাশীর বিশ্বনাথ, পাকিস্তানের ভুতনাথ, মহেশখালীর আদিনাথের মতই ঐতিহ্যবাহী সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ শিব মন্দির। এক সময় মহর্ষি ভৃগুর সাধনস্থল ছিল পবিত্র ওই এলাকাটি । প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী,মহর্ষির আমন্ত্রণে সীতাকুণ্ডে কয়েকটি দিন অতিবাহিত করেছিলেন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র ও দেবী সীতা । তারপর থেকেই স্থানটি সীতাকুণ্ড হিসাবে পরিচিতি লাভ করে । চন্দ্রনাথ শিবমন্দিরের পাশাপাশি এখানে রয়েছে বৌদ্ধ মঠ, শঙ্কর মঠ, পণ্ডিত প্রজ্ঞানালোক মহাস্থবির প্রতিষ্ঠিত বিদর্শণরাম বিহার ।
কিন্তু হিন্দুদের এই পবিত্র তীর্থস্থানটির দিকে দীর্ঘদিন ধরে নজর রয়েছে বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদীদের । সেই লক্ষ্যে পরিবর্তী কালে এখানে গজিয়ে ওঠে বার-এ-আউলিয়া, শাহজাহানী শাহ মাজার, সুলতান গিয়াসুদ্দিন মাহমুদ শাহ প্রতিষ্ঠিত হাম্মাদ্য মসজিদ । শুধু মসজিদ নির্মান করেই ক্ষান্ত থাকেনি ইসলামি মৌলবাদীরা,বরঞ্চ গোটা সীতাকুণ্ডকে নিজেদের দখলে আনতে ১৯৫০ সালের ১২ ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সাম্প্রদায়িক হিংসার সময় নোয়াপাড়া, চৌধুরী হাট, বোয়ালখালী, পটিয়ার পাশাপাশি সীতাকুণ্ডেও হিন্দু নরসংহার চালায় তারা।
জানা যায়,মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে অসংখ্য পূণ্যার্থীরা চট্টগ্রামে এসে জড়ো হয়েছিলেন । ওই বছর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয় আনসার নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে পাক পুলিশ ও পাক আধা-সামরিক বাহিনী পূণ্যার্থীদের কুপিয়ে,গুলি করে,পিটিয়ে এমনকি জীবন্ত পুড়িয়ে মারে । শুধু তাইই নয়,পরের দিন ১৫ ই ফেব্রুয়ারি পূণ্যার্থীরা সীতাকুণ্ড স্টেশনে ট্রেন থেকে নামতেই তাদের নৃশংসভাবে পিটিয়ে,কুপিয়ে,গুলি করে হত্যা করে । ট্রেনের প্রতিটি কামরায় ঘুরে ঘুরে হিন্দু পূণ্যার্থীদের নৃশংসভাবে মেরে ফেলা হয় । আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় স্টেশন সংলগ্ন এলাকার হিন্দু বাড়িগুলিতে ।
বর্বর পাক সেনা ও বাংলাদেশের আনসার নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় তিন মাস ধরে পরিকল্পিত এই হামলা চলে । এমনকি চট্টগ্রামের গণহত্যার সময় ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব্ ইণ্ডিয়ার (পিটিআই) স্থানীয় প্রতিনিধি যদুগোপাল দত্তের ছোট ভাই ধীরেন্দ্র কুমার দত্তকে ছু্রি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করে জিহাদিরা । এত নৃশংসতা,গনহত্যা সত্ব্বেও আজও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সীতাকুণ্ড নিয়ে সমান উন্মাদনা রয়ে গেছে । পাশাপাশি হিন্দুদের পবিত্রতম ওই তীর্থস্থানটি নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদীরা ।
স্থানীয় হিন্দুরা জানিয়েছেন,বিগত কয়েক বছর ধরে সীতাকুণ্ডে মুসলিম মৌলবাদীদের যাতায়ত কয়েকগুণ বেড়ে গেছে । বছর খানেক আগে মৌলবাদীরা সীতাকুণ্ডে গিয়ে ‘নারা-ই-তাকবীর, আল্লাহু আকবর, ঘরে ঘরে আল-কুরআনের আলো, ঘরে ঘরে আল-হাদিসের আলো’ প্রভৃতি স্লোগান দিয়েছিল । পালটা ‘জয় শ্রী রাম, হর হর মহাদেব’ স্লোগান দেয় ক্ষুব্ধ হিন্দুরা । ফলে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা এলাকা । গত বছর মে মাসে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ায় বসবাসকারী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ওই এলাকা ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেয় আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড । এছাড়া পৌরসদরের বাসিন্দা ডাকাত শহীদ ও তার বাহিনী এক দশকের অধিক সময় ধরে একের পর এক খুন রাহাজানি, ডাকাতি, ছিনতাই, অস্ত্র লুট, চাঁদাবাজি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে গেলেও নির্বিকার বাংলাদেশের সরকার । এখন একটি মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু হিন্দুরা কতদিন নিজেদের প্রাচীন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পারে সেটাই দেখার ।।
তথ্যসূত্র : রাইজিং বেঙ্গল,পাঠক ডট নিউজ ।