এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৮ জুন : স্থানীয় মুসলিমদের প্ররোচনায় ঈদের দিন পৈতৃক ভিটেতে গরু কুরবানি দিতে চেয়েছিল নওমুসলিম ছেলে । কিন্তু তাকে তার হিন্দু পিতা ও অনান্য হিন্দু প্রতিবেশীদের বাধার মুখে পড়তে হয় । ঘটনাকে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ালে স্থানীয় মৌলবাদী নেতারা সালিশি করতে আসে । তারা ফরমান শোনায়, “এটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, ধর্মাচরণে কোনো বাধা মেনে নেওয়া হবে না” । শনিবার মুসলমানদের প্রধান পরব ঈদের দিনে ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার বেতাগী পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের যোগেশ্বর হাওলাদারের বাড়িতে । যদিও যোগেশ্বরবাবু সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমার এক ফোঁটা রক্ত থাকতেও আমার ভিটেতে গরু কুরবানি দিতে দেবো না ।’ যদিও তিনি কুরবানি আটকাতে সক্ষম হলেও মৌলবাদী নেতাদের ফরমানে ভিটেতে গোমাংস রান্না করা আটকাতে পারেননি । শ্বশুরবাড়ি থেকে গোমাংস এনে রান্না করে হতভ্যাগ্য হিন্দু পিতার ছেলে ।
বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে,বেতাগী উপজেলার বেতাগী পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা যোগেশ্বর হাওলাদারের ছেলে দেবাংশ হাওলাদার স্থানীয় এক মুসলিম তরুনীর প্রেমের ফাঁদে পড়ে যায় । প্রেমিকা তাকে মুসলিম হওয়ার শর্তে বিয়ে করতে রাজি হয় । প্রেমিকাকে পেতে ১৯৯৬ সালে পাবলিক নোটারির মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয় দেবাংশ ৷ ধর্ম পরিবর্তনের পর নিজের নাম রাখে মিলন হোসেন । এদিকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর মিলন হোসেনের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন যোগেশ্বর হাওলাদার ও তার পরিবার । তারপর মুসলিম স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় চলে যায় মিলন ৷ দীর্ঘদিন সে ঢাকাতেই ছিল ।
জানা গেছে, সম্প্রতি স্ত্রীকে নিয়ে ফের সে গ্রামে ফিরে আসে । শ্বশুরবাড়ি ও স্থানীয় ইসলামি মৌলবীদের সহযোগিতায় একটা পৈত্রিক জমিতে ঘর তুলে বসবাস শুরু করে মিলন হোসেন । তার আশেপাশেই যোগেশ্বর হাওলাদার ও অনান্য হিন্দু পরিবারগুলোর বসবাস।
শনিবার ঈদের দিন মিলন হোসেন সবার সামনে একটা গরু কুরবানি দিতে গেলে যোগেশ্বরবাবু,তার পরিবারের লোকজন ও হিন্দু প্রতিবেশীরা বাধা দেয় । যেকারণে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । উত্তেজনার মুহুর্তের ভিডিও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে সম্প্রচার হয়েছে । ভিডিওতে যোগেশ্বর হাওলাদারকে বলতে শোনা গেছে , ‘আমার শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতেও আমি আমার ভিটেতে গরু জবাই করতে দেবো না ।’
জানা গেছে,বেগতিক বুঝে প্রতিবেশী মুসলিমদের পরামর্শে স্থানীয় মৌলবাদী নেতাদের ফোন করে ঘটনার কথা জানায় মিলন হোসেন । খবর পেয়ে সেখানে আসেন উপজেলার কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ ও স্থানীয় কাউন্সিলর মাছের ফকির । তারা ফরমান দেয়, ‘বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ । সকলের ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে । তাই এখানে কোনরকম বাধা মেনে নেওয়া হবে না ।’ শেষ পর্যন্ত মিলন হোসেন তার স্ত্রীর বাপের বাড়ি থেকে গোমাংস এনে যোগেশ্বর হাওলাদারের ভিটেতেই এক প্রকার জোর করে রান্না করে খায় । স্থানীয় হিন্দুদের অভিযোগ যে মিলনকে লাভ জিহাদে ফাঁসানো থেকে শুরু করে তার ধর্মান্তরিত হওয়া ও জোর করে পৈতৃক সম্পত্তি দখল করার ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে । এখন ইসলামি মৌলবাদীরা পরিকল্পিত ভাবেই বাকি হিন্দুদের ধর্মভ্রষ্ট করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন যোগেশ্বর হাওলাদাররা ।।

