এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২১ অক্টোবর : মুসলিম তরুনীর প্রেমে পড়ে নিজের ধর্মই বদলে ফেলেছিলেন বাংলাদেশের এক হিন্দু গায়ক ৷ ইসলামি রীতি মেনে নিকাহ হয় তাদের । একটা কন্যাসন্তানের জন্মও হয় । কিন্তু দাম্পত্য জীবন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি । মেয়ের জন্মের কিছুদিনের মধ্যে তাদের তালাক হয়ে যায় । একমাত্র মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী আমেরিকায় চলে যান । তারপর দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ধরে ঢাকার রামপুরা টেলিভিশন ভবনের পিছনে ভাড়া বাড়িতে নিঃসঙ্গ জীবন কাটছিল মনি কিশোরের । রক্তশর্করা,উচ্চ রক্তচাপ,হৃদযন্ত্রের সমস্যা জনিত রোগে ভুগছিলেন । শেষ জীবনে দেখার মত কেউ ছিলনা । গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) বাড়িওয়ালা গায়কের ঘর থেকে প্রচন্ড পচা দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয় থানায় খবর দেয় । পরে পুলিশ মনি কিশোরের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় ।প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, চার থেকে পাঁচ দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে ঢাকার রামপুরা থানার পুলিশ ।কিন্তু দেহ উদ্ধারের পর এখন সৎকার কি রীতিতে হবে তা নিয়ে ধন্দ্বে রয়েছে পুলিশ । মৃত্যুর প্রায় একদিন পার হতে চললেও এখনো মৃতদেহের শেষকৃত্য সমাপ্ত হয়নি । কবরস্থ না দাহ করা হবে তা নিয়ে ধন্দ্বে রয়েছে পুলিশ । তবে শোনা যাচ্ছে যে মৃত্যুর আগে গায়ক তার একমাত্র মেয়ে নিন্তিকে জানিয়ে গেছেন, তার মৃতদেহ যেন কবরস্থ করা হয় ।
রবিবার (২০ অক্টোবর) একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে মনি কিশোরের দাদা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা অশোক কুমার মণ্ডল জানান, মনি কিশোর হচ্ছে তার পোশাকি নাম। প্রকৃত নাম হচ্ছে অরুণ কুমার মণ্ডল।অশোক কুমার মণ্ডল জানান, তাদের বাবা অনিল কুমার মণ্ডল পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। অশোক কুমার এ–ও জানান, তাদের সাত ভাইবোনের মধ্যে মনি কিশোর চতুর্থ সন্তান। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাই মারা গেছেন । অরুণ কুমার মণ্ডল ছিলেন কিশোর কুমারের ভক্ত। ডাকনাম অবশ্য মনি ছিল। কিশোর কুমারের ভক্ত হওয়ায় নামের সঙ্গে ‘কিশোর’ জুড়ে দিয়েছিলেন।
নব্বই দশকের শুরুর দিকে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন মনি কিশোর। তবে ১৮ বছর আগে তাদের দাম্পত্যজীবনের ইতি ঘটেছে। তবে গায়কের মেয়ের নাম জানা গেলেও তার স্ত্রীর নাম অজানা । বিয়ের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন গায়ক। সেই হিসেবে তার মৃতদেহ কবরস্থ করা হবে বলে জানিয়েছেন গায়কের ভাই অশোক কুমার। এ ব্যাপারে তিনি জানালেন, জীবিত অবস্থায় কবরস্থ করার বিষয়টি একমাত্র মেয়ে নিন্তিকে নাকি জানিয়েছিলেন মনি কিশোর। আমেরিকা থেকে ফোনে সে তার বাবাকে কবরস্থ করার কথাই বলেছে । তিনি বলেন,যেহেতু মেয়েকে বলে গিয়েছে, এ জন্য তার ইচ্ছামতই কবরস্থ করা হোক । এ নিয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাব না আমরা ।
নব্বই দশক থেকে সুরেলা কণ্ঠের মাধ্যমে শ্রোতাদের মন জয় করে এসেছেন মনি কিশোর। বেশ আগের গাওয়া ‘কী ছিলে আমার, বলো না তুমি’ গানটি এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে শোনা যায় । আর এমন জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা দীর্ঘ সময় ছিলেন আড়ালে। স্ত্রীর উপর অনেকটা অভিমান করেই নিজেকে আড়ালে রেখেছিলেন তিনি। শেষ দিকে এমনটাও হয়েছে যে, কেউ যেন যোগাযোগ করতে না পারে, এ জন্য নিজের ব্যবহৃত পুরনো ফোন নম্বরও বন্ধ করে দিয়েছিলেন।পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দেওয়া মনি কিশোর রেডিও -টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও অল্প গান গেয়েছেন। প্লে-ব্যাকেও সেভাবে গান গাইতে শোনা যায়নি তাকে।
পুলিশ কর্মকর্তা বাবার সাত সন্তানের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন তিনি। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দাদার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। আর দেড় যুগ আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় গায়কের। এরপর থেকে একাই থাকতেন তিনি। একমাত্র মেয়ে নিন্তি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। ১৯৫৮ সালে নড়াইল জেলার লক্ষ্মীপুরে মামাবাড়িতে জন্ম মনি কিশোরের।।