এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৪ অক্টোবর : প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া করে শাসন ক্ষমতা দুই ইসলামি জঙ্গি সংগঠন জামাত ইসলামি ও বাংলাদেশ ন্যাশানাল পার্টির(বিএনপি) হাতে চলে যাওয়ার পর সংখ্যালঘু হিন্দুদের ঠিক কি পরিবার বর্বরোচিত অত্যাচার চলছে তার আংশিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস । বৃহস্পতিবার হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসে ২৮ জনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে এবং ৪৪ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে । এর মধ্যে ১৫ জন কিশোরী; ১৮ নারী ও কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। চারজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে; একজন আত্মহত্যা করেছেন।
পাশাপাশি হিন্দুদের সংগঠন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের ৪৮টি জেলায় ২৭৮টি হামলা হয়েছে। অন্যদিকে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নামে আর একটি সংগঠন দাবি করেছে, ৫২টি জেলায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের অন্তত ২০৫টি ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন নামের একটি সংগঠন দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলার তদন্তের জন্য একটি ‘সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছে।
তবে, এই সংগঠনগুলোর দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কতগুলো ঘটনা ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে, আর কতগুলো আক্রমণ ছিল সরকারপন্থী লোকদের উপর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশে ডঃ ইউনুস তদারকি সরকারের দায়িত্ব হাতে তুলে নেওয়ার পর থেকে হিন্দুরা চরম বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে । তাদের যুক্তি যে ইউনুসকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা চালাচ্ছে বিএনপি ও জামাত ইসলামি ।
প্রসঙ্গত,বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার পরিবর্তনের সাথে সাথে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ব্যাপক হারে নিশানা করতে শুরু করে সংখ্যাগুরু মুসলিমরা । বাংলাদেশে বিগত চার দশকের রাজনীতিতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে বা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হলে, হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা প্রচুর বেড়ে যায় । ১৯৯০ সালের ২৯ অক্টোবর, এরশাদের শাসনকালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় “বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর, দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের বাড়ি, দোকান এবং মন্দিরে ব্যাপক হামলা চালানো হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও হিন্দু সংগঠনের নেতাদের মতে, ১৯৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর ঠিক কি পরিমানে আক্রমণ হয়েছিল তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই । তখন কট্টব ইসলামি দল বিএনপি সরকারের নেতৃত্বে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন।
এরপরে ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে হিন্দুদের উপর ব্যাপক আক্রমণ হয়। বিএনপি নির্বাচনে জয়ের পরপরই দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালানো হয়। তবে তখন বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিন থেকে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সময় পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের উপর হামলা হয়। এমনকি বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও বিভিন্ন হামলার ঘটনা ঘটে। এই অভিযোগগুলোর পেছনে বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত অনেকের নাম উঠে আসে।
সর্বশেষ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর হিন্দুদের উপর লাগাতার হামলা চলছে । শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর কতটি আক্রমণ হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, হিন্দুরা যে ভয় ও সন্ত্রাসের মধ্যে বসবাস করছে, তা বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠনের নেতা রানা দাসগুপ্ত মনে করেন,’বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার ক্ষেত্রে এক ধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। যারা এই হামলাগুলোতে জড়িত, তাদের অতীতে কখনো বিচার হয়নি। ফলে এটি থামানো যায়নি।যারা ধর্মীয় সহাবস্থানে বিশ্বাস করে না, তারাই হিন্দুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।’ তিনি বলেন, এই প্রবণতা পাকিস্তান আমল থেকে চলছে।’
তিনি বলেন,’গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে ‘অতীতের বৈষম্য’ দূর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু হিন্দুদের সংখ্যা বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার আট শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও, নিয়োগ ও পদোন্নতি সে অনুপাতে হয়নি। যখন সংখ্যালঘুদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন বলা হয় সংখ্যালঘুরা সবকিছু দখল করছে।’ হিন্দুরা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের পক্ষে কখনোই অবস্থান নিতে পারে না বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশের দুটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা একটি প্রতিবেদনে বলেছে যে, দেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতার ৭০ শতাংশ ভূমি সংক্রান্ত। ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা বিশ্লেষণ করে সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস (CA)-এর বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (BPO) এই তথ্য দিয়েছে। এই সহিংসতার বেশিরভাগই হিন্দুদের বিরুদ্ধে হয়েছে। যা শেখ হাসিনার পলায়নের পর ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে ।।