জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),২৭ জুলাই : সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য দরকার তেত্রিশ শতাংশ। কিন্তু হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ও মূল্যবোধহীন ভোগসর্বস্ব মানুষের সৌজন্যে গাছের পরিমাণ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। আধুনিক যন্ত্র পরিচালিত জীবনে নিত্য নতুন নগর সৃষ্টির নেশায় পাগল মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে প্রতিদিন কেটে চলেছে অসংখ্য গাছ। ধ্বংস করে চলেছে অরণ্য। বাস্তবে ইঁটের পরে ইঁট সাজিয়ে তৈরি আকাশ ছোঁয়া বিশাল বাড়ির মাঝে মানুষ যেন অসহায় কীট।
সারাদেশের সঙ্গে তার আঁচ এসে পড়ে এই রাজ্যেও। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে নেওয়ার ফলে একটা সময় সেটা কমতে কমতে বনভূমির আয়তন সতের শতাংশে এসে পৌঁছে যায়। আধুনিক নগরজীবনে ক্লান্ত বিধ্বস্ত কবিও একদিন ব্যাকুল হয়ে ‘সে অরণ্য’ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। অবশ্য ২০১১ সালের পর থেকে এই রাজ্যে গাছের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে প্রায় ২২ শতাংশ হয়েছে। সৌজন্যে বনমহোৎসব এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্রিয়তা। তাদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপণ শুরু হয়েছে।
ঠিক যেমন রোটারি ক্লাব অফ বর্ধমান ডায়মণ্ডের উদ্যোগে ২৭ শে জুলাই গুসকরা পিপি ইন্সটিটিউশনে বনমহোৎসব পালিত হয় । এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে ১০০ টি চারগাগাছ তুলে দেয়। শুধু তাই নয় ওড়গ্রাম বনদপ্তর থেকেও ৯৫ টি চারগাগাছও দেওয়া হয়। জানা যাচ্ছে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠের চারপাশে চারাগাছগুলি বপন করা হবে। প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগে বিধ্বংসী ঝড়ে বিদ্যালয়ের একাধিক গাছ ভেঙে পড়ে। এরফলে বিদ্যালয়ের যেমন সৌন্দর্যহানি হয় তেমনি প্রাক্তনীরা মানসিক দিক দিয়ে কষ্ট পায়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশা এই গাছগুলো বড় হলে আবার বিদ্যালয় তার আগের সৌন্দর্য ফিরে পাবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার, গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী, ভাইস চেয়ারম্যান বেলি বেগম, প্রধান শিক্ষক রাজীব কুমার ঘোষ সহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা এবং ছাত্রছাত্রীরা। রোটারি ক্লাবের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি অরিন্দম নন্দী, সদস্য সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, রথীন দাস, অরূপ কুমার আঁশ ও রোটারী ক্লাবের ‘পাবলিক ইমেজ’ কুন্তল চ্যাটার্জ্জী। অনুষ্ঠানে প্রতিটি বক্তা বর্তমান পরিস্থিতি বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে যাতে বৃক্ষচ্ছেদন না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য অনুরোধ করেন।
কুন্তল বাবু বলেন,’আমি স্থানীয় ছেলে এবং জঙ্গলমহলের বাসিন্দা। সুতরাং গাছের গুরুত্বের ব্যাপারে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। তাই সবাইকে অনুরোধ করব আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে সমস্ত ফাঁকা জায়গাগুলোতে গাছ লাগাই। এতে সবার উপকার হবে।
কুশল মুখার্জ্জী বলেন,’আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু হলেও বারবার তাকে মানুষের চূড়ান্ত অবহেলার শিকার হতে হচ্ছে। সেজন্যই সমগ্র পরিবেশ আজ সংকটের সম্মুখীন। মানব সভ্যতার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গ্যাছে। ফলে নিজেদেরই স্বার্থেই বৃক্ষরোপন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। জনগণের কাছে তার আবেদন – বাঁচার তাগিদে বৃক্ষ রোপণ যেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে।’।