মেঘ থেকে ভোর ঝুরঝুর করে নেমে আসতেই
রঙের খেলা শুরু হয়ে গেল।
প্রজাপতি বিস্ময় রেখে গেল ফুলে,
তুমি এত মিষ্টি কেন আজ?
ফুল একটু হাসি ঢাললো প্রজাপতির বিস্ময়ে।
বললো, জানো না বুঝি আজ আমাদের জলসা হবে?
রং ছড়াবে সুখ আর আমরা মিলবো বসন্ত উৎসবে…
মাটির প্রদীপ গড়ছিল মেয়েটা।
বাতাস তাকে ডাকতে গেল।
সে মেয়ে তো কিছুতেই শোনে না কথা…
বললো, এ হয় না!
আমার সব রং ধুয়ে গেছে যুদ্ধে।
কফিনে শুধু রক্তের রং ছিল,
শুকনো জমাট বাঁধা।
সেদিনও বসন্ত ছিল।
প্রদীপ থেকে মাটি খুলে গলে পড়লো তার কান্নায়। জিজ্ঞেস করলো,
তবে আমায় গড়ছো কেন?
অন্ধকারে ভয় পাই যে খুব…
মেয়েটার কণ্ঠে কান্না।
হঠাৎ ঝড় উঠলো। প্রদীপ নিভে গেল।
বাতাস ক্রুদ্ধ।
ইতিহাসে বাঁচতে সে চায় না।
জলসায় রবীন্দ্রনাথ শোনাতে চায়।
ঝড় হয়ে উঠলো। বজ্রকে ডেকে আনলো।
বজ্র এসে হেসে লুটোপুটি…
একজন নেই বলে অন্যজন কালো?
আমি আছি। আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধো বুকে।
জলসায় তোমাকে কত্থক রাখতে হবে পায়ে।
মেয়েটা কপালে লাল টিপ আঁকলো।
ডুমুরের ফুল, বাদামের শাক, সর্ষের হলুদ
রং ছুঁড়ে ছুঁড়ে খুব খানিক মাখামাখি করে নিল।
আমের মুকুল হামা দিতে দিতে মাটিতে নেমে এলো।
ওরা জলসায় সমবেত গাইছে।
ওরা আলোর সুরে, স্বপ্নের কথায়, প্রেম গেঁথে গেঁথে গাইছে।
ওদের গাওয়া শেষ হলে মেঘ থেকে আবির নামিয়ে ওরা গায়ে গায়ে ছুঁয়ে নিল।
তিল ফুল এগিয়ে এসে বললো, মধু খাও। মিষ্টি মুখ করো…
মাটির বুকে লাল নীল স্রোত।
হৃদয়ে হৃদয়ে জড়াজড়ি। হাসাহাসি।
মাটি হেসে বললো, তাই তো এ বসন্ত উৎসবে কে
সুখ, কে দুঃখ চেনা তো না যায়!
মেয়েটার কপালের লাল টিপ থেকে নরম আদর
নেমে এলো।
বসন্তের গায়ে সে আদর হাত রেখে বললো,
রং দিয়ে এভাবে সারা বছর দুঃখকে আড়াল রাখতে পারো?
এত রং বসন্তের গায়ে! এত আয়োজন!
বসন্ত মেয়েটার ছোট্ট প্রশ্ন শুনতেই পেল না।
ক্রোধ ভুলে আনন্দে ভাসতে ভাসতে বাতাস
রবীন্দ্রনাথে আনন্দ খুঁজে নিল…
“কে রঙ লাগালে বনে বনে।
ঢেউ জাগালে সমীরণে॥
আজ ভুবনের দুয়ার খোলা
দোল দিয়েছে বনের দোলা–
দে দোল! দে দোল! দে দোল!’।