মনীষা মুখার্জী,কলকাতা,১৬ সেপ্টেম্বর : বাঘাযতীন খ্যাত জনপ্রিয় অভিনেতা কোলাজ সেনগুপ্তের সাথে কথা হচ্ছিল। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘বর্তমানে একটা প্রশ্ন সমাজ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটা হল তিলোত্তমা একজন ডাক্তার তার পর একজন মেয়ে বলেই কি তার নির্যাতন নিয়ে এত উত্তাল হয়ে উঠল দেশ? পুরুষশাসিত সমাজে আজও কাজ করে মহিলা সেন্টিমেন্ট? তাই স্বপ্নদীপের বিষয়টা কেমন ধামাচাপা পড়ে গেল? এই বিষয়ে কী বলবেন?’
এর উত্তরে কোলাজ সেনগুপ্ত বলেন,’সঠিক উদ্দেশ্যে, জনবিরোধ অবশ্যই ভালো কথা; প্রতিবাদ প্রদর্শনের প্রয়োজনীয় প্রত্যঙ্গ। এই ঐক্য প্রশংসনীয় এবং শিক্ষণীয়। প্রতিটি মানুষ যারা আরজি করের ঘটনায় জমায়েত হয়েছেন, তাদের আমি কুর্ণিশ করি। তিলোত্তমা হোন বা স্বপ্নদ্বীপ, এইখানে প্রশ্নটা হচ্ছে মানবতা। অন্তত আমার তাই মনে হয়। মানুষ হিসেবে কিছু কিছু ব্যবহার আমরা অপর একটি মানুষের প্রতি করতে পারি না। লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে। এই ক্ষেত্রে তিলোত্তমা কাণ্ডে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে!’
তিনি বলেন,স্বপ্নদ্বীপের ঘটনা অনেকেরই মনে নেই। এখানে তুলনা টানার ব্যাপার নেই। দুটো ঘটনাই অত্যন্ত নিন্দনীয়! মানুষ সেটাই মনে রাখেন, যেটার মধ্যে থাকেন। বা, বলা ভাল, যেটার মধ্যে মানুষকে রাখা হয়। আমরা এখন consumerism এর মধ্যে বাস করছি। যে ঘটনা আমরা যত বেশি consume করছি, তত বেশি সেই ঘটনার প্রতি আমাদের মধ্যে আবেগ আন্দোলিত হচ্ছে। প্রশ্নটা হচ্ছে মানুষকে কনজিউম করাবার ক্ষমতা কার/কাদের হাতে ন্যস্ত? যাদের হাতে ক্ষমতা আছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতার কথা বলছি না। যেকোনো ধরনের অথরিটি বলছি। এই ক্ষেত্রে মিডিয়া একটা বড় প্রভাবশালী জায়গা! Consumerism এর মূল দায়িত্ব তাদের হাতেই। মিডিয়া যদি স্বপ্নদ্বীপের ঘটনা এমনভাবেই প্রচার করত, তাহলে এই তুলনাটাই আসতো না।
তবে এটাও ঠিক, তিলোত্তমার ঘটনা আস্তে আস্তে নানান রহস্য উন্মোচন করছে। একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এক দীর্ঘমেয়াদী দুর্নীতি। তেমন কোন তথ্য স্বপ্নদ্বীপের ক্ষেত্রে উঠে আসেনি। সুতরাং দুটো ঘটনাকে তুলনা করলে ভুল করা হবে। যদিও আবারও বলছি দুটো ঘটনাই অমানবিক! তবে তিলোত্তমা কান্ডে যে ক্ষমতার আস্ফালন চোখে পড়ছে, স্বপ্নদ্বীপের ক্ষেত্রে তেমনটা আমাদের দেখতে হয়নি।
আর সেন্টিমেন্ট তো অবশ্যই জড়িয়ে আছে! আবেগ বিজড়িত না হলে দেশের প্রত্যেকটি কোনায় প্রত্যেকটি মানুষ এমন ভাবে জেগে উঠতে পারে কখনো? এই ক্ষেত্রে সেন্টিমেন্টটাকে পুরুষ অথবা নারী দিয়ে বিচার না করাই ভালো। পুরুষ বা নারী হবার আগেও সবাই মানুষ। বিষয়টা শুনতে এমন লাগবে যে, শচীন তেন্ডুলকর আর পেলের মধ্যে কে বড় প্লেয়ার? দুজনেই খেলোয়াড়, তবে ক্ষেত্রটা আলাদা। তাই তুলনা করাটা বোকামি।
এরপর তাকে আরো একটি প্রশ্ন করা হয় তা হল, বর্তমানে মানুষ এত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রীতিমতো খেপে উঠেছে এর পিছনে কারণ কী থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়? এর উত্তরে অভিনেতা কোলাজ সেনগুপ্ত বলেন,’মানুষের ক্ষেপে ওঠার যথেষ্ট কারণ আছে। দীর্ঘদিনের অসহায়তা, অপ্রাপ্তি, কূটনীতি ও দুর্নীতির শিকার প্রায় প্রতিটি মানুষ। কোথাও না কোথাও সবারই একটা ধামাচাপা আগুন আছে! তাই পরপর যখন নানান ঘটনা উত্থিত হচ্ছে মানুষ কোথাও সাহস ফিরে পাচ্ছে! জনজাগরণ সবসময়ই সমষ্টিগত। পাশের মানুষটাকে দেখে তার পাশের মানুষটা সাহস পায়। এই ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছেন ডাক্তাররা। একজনের কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন কিঞ্জল নন্দ। আমার ভাবতে গর্ববোধ হয় আমরা একে অপরের পরিচিত।’।