প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ মার্চ : ছাত্রীদের শরীরে ’ব্যাড টাচ’। তা নিয়ে কয়েক দিন অগেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর একটি স্কুলের তিন শিক্ষকের বিরূদ্ধে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের দু’জন শ্রীঘরে যেতে হয়। এক শিক্ষক এখনও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যেই এবার ছাত্রীদের ’ব্যাড টাচ’ করার অভিযোগ উঠলো জেলার কালনার একটি গার্লস স্কুলের এক ক্লার্কের বিরুদ্ধে।
ওই ক্লার্কের শাস্তির দাবিতে সোমবার স্কুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বহু ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকরা । একই সময়ে আবার সহ- শিক্ষিকারা ওই বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পদের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে সরব হন।এসব নিয়ে উত্তেজনা চরমে পঁছালে কালনা থানার পুলিশ স্কুলে পৌছে পরিস্থিতি সামাল দেয়।পরে স্কুলে হওয়া বৈঠকে অভিযোগের সমাধানের আশ্বাস মিললে ক্ষোভ বিক্ষোভ উঠে যায়।
কালনা মহকুমার একের পর স্কুলের ছাত্রীরা “ব্যাড টাচের’ অভিযোগ তুলতে শুরু করায় প্রশাসনও বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছে। সম্প্রতি এই ’ব্যাড টাচ“ নিয়ে পূর্বস্থলীর একটি স্কুলে অশান্তি চরমে ওঠে। পড়ানোর নাম করে ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হাত দেওয়া,রাতে ছাত্রীদের ফোনে অশ্লীল মেসেজ পাঠানো ,এসব নিয়ে ভিক্ষোভে উত্তাল হয় পূর্বস্থলীর ওই স্কুল।স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত সহ-শিক্ষকদের স্কুলে ঘেরাও করে রেখে শাস্তির দাবি করে বিক্ষুব্ধ ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকরা ।’ব্যাড টাচে’ অভিযুক্ত তিন অভিযুক্ত সহ-শিক্ষকের মধ্যে ২ শিক্ষক ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। আদালতের নির্দেশে দুই শিক্ষককে শ্রীঘরে যেতে হয় । বাকি এক অভিযুক্ত শিক্ষক গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে । পুলিশ তারও সন্ধান চালাচ্ছে।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে কালনা ১ ব্লকের এটি গার্লস স্কুলের ক্লার্কের বিরুদ্ধে ’ব্যাড টাচেয়’ অভিযোগ আনলো ওই স্কুলেরই ছাত্রীরা। সেই অভিযোগ ঘিরে সোমবার স্কুলে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। দফায় দফায় স্কুলে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকরা।স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর দুই ছাত্রীর অভিযোগ করে,“তাঁদের স্কুলের ক্লার্ক বয়সে তাঁদের পিতৃতুল্য ।এহেন ব্যক্তি কয়েকদিন আগেই বিভিন্ন অছিলায় তাঁদের বুকে ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হাত দিয়েছে। দুই ছাত্রী বাড়ি ফিরে ক্লার্কের এই কীর্তির কথা দুই ছাত্রী তাদের অভিভাবকদের জানায় ।
অভিভাবকদের অভিযোগে বলেন,“ওই ক্লার্ক নানা অছিলায় স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হাত দেয়।উনি দীর্ঘদিন ধরেই এমন ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। এই কারণে অনেক ছাত্রী স্কুল আসতে ভয় পায়।স্কুলে যদি মেয়েদের নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে কোথায় মেয়েরা পড়তে যাবে ? ক্লার্কের এমন আচরণের কথা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানানো হলে তিনি বলেন,’উনি পিতৃতুল্য । ভালোবেসে করেছে।এইসব এইভাবে সামনে নিয়ে আসা ঠিক নয় বলে জানিয়ে প্রধান শিক্ষিকা ক্লার্কের কু-কীর্তি ধামাচাপা দিয়ে দেন।” এর কারনে ক্লার্কের শাস্তির দাবিতে সরব হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষিকার অপসারণের দাবি করেছেন।
স্কুলের কন্যাশ্রীদের নোডাল টিচার বলেন,’গুড টাচ ও ব্যাড টাচ নিয়ে আমরা ছাত্রীদের সচেতন করি । তার কারণে ছাত্রীরা কোনটা গুড টাচ আর কোনটা ব্যাড টাচ সেটা খুব ভালই বোঝে।ক্লার্কের ব্যাড টাচ করা নিয়ে ছাত্রীরা আমাকেও অভিযোগ জানায়। ক্লার্কের এই আচরণ নিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে জানানো হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।” প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে সহ-শিক্ষিকারা আরও জানান,“উনি প্রধান শিক্ষিকা পদের অপব্যবহার করেন। দীর্ঘ চার-পাঁচ মাস ধরে উনি ছুটিতে থাকেন। স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্কুলে আসেন না। সহ-শিক্ষিকাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এর আগে অন্য যে দুটি স্কুলে উনি ছিলেন সেখানেও একই ঘটনা ঘটিয়েই এখানে এসেছেন। প্রধান শিক্ষিকাকে এই স্কুল থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত ও ওই ক্লার্ককে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সহ-শিক্ষিকারা।”
এই প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষিকা বলেন,আমি এই স্কুলে চার বছর হল এসেছি।আমি স্কুলে আসিনা বলে যে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়।অভিভাবক, ব্লক প্রশাসন ও পুলিশকে নিয়ে হওয়া এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে,’ব্যাড টাচ’ সমর্থযোগ্য নয়। ক্লার্ক কে এদিন বলে দেওয়া হয়েছে,“ছাত্রীদের আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণ হলে তাকে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে ।” কালনার মহকুমা সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক কৌশিক ঘোষ বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”।
“Bad touch” of female students – Now a school clerk in Kalana is targeting female students

