এইদিন ওয়েবডেস্ক,২৩ ফেব্রুয়ারী : ইসলামি মৌলবাদীদের নারী নিপীড়ন এবং ধর্মের কুসংস্কারের সমালোচনা করে মৃত্যুর ভয়ে দেশত্যাগ করতে হয়েছিল বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে । বর্তমানে তিনি ভারতের আশ্রয়ে আছেন । তবে ভারতেও ইসলামি মৌলবাদীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে অত্যন্ত গোপনেই তিনি বসবাস করেন । ফের একবার ‘ইসলামি বর্বরতা প্রত্যাখ্যান করার’ আহ্বান জানিয়ে মৌলবাদীদের নিশানা হলেন বাংলাদেশি লেখিকা । তবে বহু মানুষ তসলিমাকে সমর্থন করে কমেন্টও করেছেন ।
আসলে কয়েক দিন ধরেই বাংলাদেশের স্কুলে শিশুদের বর্ণমালা শেখার বই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে । বর্ণমালার “গ” অক্ষর চেনানোর জন্য লেখা হয়েছে,”গান বাজনা ভালো নয়” । “ঙ” চেনাতে “রঙ তামাশার সময় নেই” লেখা হয়েছে । আর “ছ” চেনাতে লেখা হয়েছে, “ছবি আঁকা ভালো নয়” । পাঠ্যপুস্তকের ওই অংশটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে তসলিমা লিখেছেন, ‘ইসলামিক বাংলাদেশ শিশুদের বাংলা বর্ণমালা শেখার জন্য একটি বই প্রকাশ করেছে। এটা আসলে শিশুদের মগজ ধোলাই করার জন্য। বইটিতে বলা হয়েছে যে গান ভালো না, শিল্প ভালো না, মজা ভালো না। মানে কোন ভালো জিনিস হালাল নয় । ইসলামী বর্বরতা প্রত্যাখ্যান করার সময় এসেছে ।’
তসলিমার এই পোস্টের পরেই তসলিমাকে সমর্থন করে আসেক মহবুব শাকিল লিখেছেন, ‘আমরা তালিবানি রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’ শাকিলের এই প্রতিক্রিয়ায় সুনভি নামে এক জিহাদি লিখেছেন,’কীভাবে আগাচ্ছিস? তোদের দাদাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু দেশ এখন তালিবান। সেই খবর রাখিস তো? আর কতো তালিবান নিয়ে পড়ে থাকবি। দাদাদের অনুসরণ করতে হবে তো। মাথা মোটার দল।’ সুনভি নামে ওই ব্যবহারকারী তসলিমার পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘তসলিমা নাসরিন, আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, এই বইটা বাংলাদেশের স্কুৃলের পাঠ্য বই নয়। এটি নূরানী মাদ্রাসার শিশুদের পাঠ্য বই। আর মাদ্রাসার বই নির্শ্চয় দাদাদের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে পাঠদান দেয়া হবে না। যদি সেই স্বপ্নে থাকেন, তবে সেটি নিছক স্বপ্নই থেকে যাবে ।’ রোজ নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন,’শুধু একটাই জিনিস ভালো এদের জন্যে । ৭২ হুর এর জন্য কত কি করতে হয়।’
ইমতিয়াজ আহমেদ লেখিকার বিরুদ্ধে কদর্য ভাষা প্রয়োগ করেছেন । তিনি লিখেছেন,’সত্যি তো বলছে,পতিতা নাসরিন তুর কেন জ্বলের?
তুর দরকার জনিসিনের বুঝলি পতিতা?’ বলাই পাল লিখেছেন,’মৌলবাদীরা হলো বাংলাদেশের বই লেখক। তাই জঙ্গির আবাদ হয় মসজিদ মাদ্রাসা থেকেই ।’
কুমার অখিল নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে, সেই দিন খুব বেশি দূরে নয় যখন বাংলাদেশ সরকার সঙ্গীত ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করবে। লজ্জা বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের ।’ আহমেদ এক্স লিখেছেন,’খুবই দুঃখজনক । এই ধর্মান্ধরা দেশকে আফগানিস্তান পাকিস্তান বানিয়ে ফেলবে ।’ তবে আব্দুল হাই এর কথায়,’এটা খুবই ফলপ্রসূ শেখার পদ্ধতি। আমি প্রশংসা করি!’
রনজিত দিবাকর ভারত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন,’ভারতেও কট্টরপন্থীদের আধিপত্য বাড়ছে- এভাবে চলতে থাকলে ভারতের অবস্থা হবে চতুর্দশ শতাব্দীর মতো।’
উল্লেখ্য,এক সময়ের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরই দেশে শরিয়া শাসন লাগু করেছে । ক্ষমতা দখলের প্রথম দিকেই আফগানি সঙ্গীত শিল্পিদের বাদ্যযন্ত্র ভেঙে চুরমার করে দেয় তালিবানরা । আফগান মহিলাদের শিক্ষা,প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর উপর জারি করেছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা । যেকারণে প্রতিনিয়ত তাদের কার্যত নরক যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হতে হচ্ছে ।।