এইদিন ওয়েবডেস্ক,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১৫ জানুয়ারী : নিজের সম্প্রদায়ের এক যুবককে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল বছর ২৭-এর এক আদিবাসী তরুনী । দুই কন্যাসন্তানও হয় তাদের । কিন্তু স্বামীর মদের নেশা সুখের সংসারে অশান্তি ঢুকে যায় । বধূ প্রতিবাদ করলে জুটতো স্বামীর নির্মম মার । তবুও দুই শিশুসন্তানের কথা ভেবে তিনি মুখ বুজে সব সহ্য করে যেতেন । কিন্তু সোমবার রাতে সমস্ত নৃশংসতার সীমা ছাড়িয়ে যায় স্বামী । মদপানের কারনে দম্পতির ঝগড়ার মাঝেই দুই শিশুসন্তানের সামনেই স্ত্রীর মাথায় একটা লোহার শাবল দিয়ে সজোরে আঘাত করে স্বামী । তাদের মৃত্যু হয় হতভগ্য মহিলার । এখানেই শেষ নয় । এরপর মানবিকতাকে লজ্জিত করার মত ঘটনা ঘটিয়ে দেয় ঘাতক । স্ত্রীর রক্তাক্ত নিথর দেহটা বাড়ির একটা ঘরের মেঝে খুঁড়ে পুঁতে দিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে পাশের ঘরে দুই সন্তানে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোয় ঘাতক স্বামী । এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার জঙ্গলমহল আউশগ্রামের যদুগড়িয়া গ্রামে । যদিও মায়ের এই মর্মান্তিক পরিণতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা বধূর দুই শিশুকন্যা সোনিয়া(৬) ও রাখী(৩) সব ঘটনা পুলিশকে জানিয়ে দেয় । অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের দেখানো ঘরের মেঝে খুঁড়ে লক্ষ্মী হাঁসদা(২৭) নামে ওই বধূর মৃতদেহ উদ্ধার করে আউশগ্রাম থানার পুলিশ । পুলিশ ঘাতক স্বামী সোম হাঁসদাকে গ্রেফতার করে । আজ বুধবার তাকে বর্ধমান আদালতে পাঠায় । পাশাপাশি মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ।
ধৃত সোম হাঁসদার মা পানমনি হাঁসদা বলেন,’ওরা ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। প্রথম দিকে ছেলে মন দিয়ে সংসারও করছিল । কিন্তু সম্প্রতি সে মদের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে । কাজেও যেত না । দিনভর মদপান করে নেশায় চুর হয়ে বাড়িতে পড়ে থাকত । বৌমা বাধা দিলে ঘরে অশান্তি করতো। বউমা জনমজুরে কাজ করে সংসার চালাচ্ছিল ।’ তিনি বলেন,’মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে বৌমাকে দেখতে না পেয়ে ছেলেকে জিজ্ঞেস করি । ছেলে জানায় সে মার খেয়ে পালিয়ে গেছে। পরে সন্ধ্যার দিকে আউশগ্রাম থানার পুলিশ এসে একটা ঘরের মেঝে খুঁড়ে বউমার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় । ছেলেকেও ধরে নিয়ে যায় ।’
পরিবার সূত্রে খবর,মৃতার বড় মেয়ে সোনিয়া হাঁসদা জানায় যে সোমবার সন্ধ্যায় তার বাবা নেশা করে এলে তার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হয় । সেই সময় একটা লোহার শাবল দিয়ে মায়ের মাথায় সজোরে আঘাত করে তার বাবা । তারপর মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যায় । পানমনি হাঁসদা বলেন,’ঘটনাস্থলেই বৌমা মারা যায়। বাড়ির একটা ঘরের মেঝের মধ্যে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহ মাটি চাপা দিয়ে রাখে। কেউ যাতে কিছু বুঝতে না পারে সেজন্য দরজায় তালা দিয়ে রাখে সোম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ তালা ভেঙে মেঝের মাটি খুঁড়ে লক্ষ্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।’
জেলা পুলিশ সুপার সায়ক দাস জানিয়েছেন,অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটি বাচ্চাকে উদ্ধার করে আপাতত থানায় রাখা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের হোমে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।।