এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১০ ফেব্রুয়ারী : পরপর দু’দিন বিজেপি শাসিত পৃথক দুই রাজ্যে ব্যাপক হিংসা ছড়িয়েছে ইসলামি কট্টরপন্থীদের দল । বৃহস্পতিবার উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানির বনভুলপুরায় সরকারি জায়গায় জবরদখল করে নির্মিত মাজার-মাদ্রাসা উচ্ছেদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছে পুলিশ ও পুরকর্মীদের । ওই হামলার নেপথ্যে ‘সাদাব চৌহান’ নামে এক মৌলবাদীর উসকানি এবং বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে ।
হলদওয়ানির ঘটনার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই উত্তরপ্রদেশের বেরেলিতে ইসলামি কট্টরপন্থীদের দল ব্যাপক হিংসা ছড়িয়েছে । শুক্রবার জুমার নামাজের পরে মসজিদ থেকে বেড়িয়ে এসে মুসলিম জনতা হিন্দুদের মারধর করে, গাড়ি ভাঙচুর করে, পাথর ছুঁড়ে এবং পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। আর এই হামলার পিছনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাওলানা তৌকীর রাজা খান (Maulana Tauqeer Raza Khan) নামে এক মৌলবাদীর বিরুদ্ধে । মাওলানা জ্ঞানভাপির বেসমেন্টে আদালত কর্তৃক পুজা পুনরায় শুরু করার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার এবং ‘জেল ভরো’ প্রচারণা ঘোষণা করেছেন । শুক্রবারের আগে মাওলানা তৌকীর রাজা খানের তরফে প্রচারপত্র বিতরণ করা হয় । এরপর জুমার নামাজের পর ভিড় জড়ো হওয়ার পর হট্টগোল ও সহিংসতা শুরু হয়।দোকানপাটও ভাঙচুর করা হয়, একটি দোকানের ফুল ছিনিয়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী দোকানদার জানান, তার প্রায় ২,০০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে । এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জনতা পাথরও ছুড়েছে, সবই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তিনি জানান, লিফলেটে মাঠে জড়ো হতে বলা হয়েছে। নাবালক শিশুদেরও সামনে রাখা হয়েছিল ।
অপর একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নামাজের পর চলে যাওয়া লোকজন সহিংসতা শুরু করে এবং দোকানপাট ধ্বংস করে দেয়। অন্যদিকে, মাওলানা তৌকীর রাজা বলেছেন যে তিনি জ্ঞানভাপির উপর মুসলিম পক্ষের দাবি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত, তবে প্রথমে বিজেপির লোকেরা যদি সত্যিই মন্দিরকে ভালবাসে তবে তাদের কৈলাস মানসরোবরকে চীন থেকে মুক্ত করা উচিত। তিনি দাবি করেন, মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড থাকা সত্ত্বেও আদালতে মুসলিমদের সিদ্ধান্ত ইউসিসির অধীনে নেওয়া হয়েছে, ইউসিসি ইতিমধ্যেই দেশে রয়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার বেরেলির শ্যামগঞ্জ এলাকা থেকেই তোলপাড় শুরু করে মুসলিমরা । কমল শর্মা ও সমীর সাগর নামে দুই যুবক ‘মওলানা আজাদ ইন্টার কলেজের’ সামনে উপস্থিত হলে তাদের মারধর করা হয়। তার বাইক ভাঙার পর শুরু হয় পাথর নিক্ষেপ। বিহারীপুর পুলিশ চৌকির কাছে মাওলানা তৌকীর রাজাকে আটক করে। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ছেড়ে দেয়, পরে সে তার বাড়িতে চলে যায়। জিআইসি অডিটোরিয়ামের কাছে অবস্থিত মসজিদে নামাজের পর মুসলিম জনতা ‘জেল ভরো’ অভিযান শুরু করে ।
অন্যদিকে দাবি করা হচ্ছে যে উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানির বনভুলপুরায় কয়েক বছর আগে মাত্র ১০,০০০ মুসলিমের বসতি ছিল, বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমরা ব্যাপক হারে ঢোকায় বর্তমানে সেই সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে । আর তারা সরকারি জায়গা জবরদখল করে ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস করছে ।
বিজেপি নেতা জীতেন্দ্র প্রতাপ সিং এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন,’আমরা হিন্দুরা অনেক সন্তানের জন্ম দিই না কারণ আমরা ভাবি যে আমরা সেই শিশুদের কীভাবে শিক্ষা দেব, আমরা তাদের কোথায় রাখব, ঘরটি ছোট প্রভৃতি । কিন্তু তাদের সমগ্র বাস্তুতন্ত্র শুধুমাত্র একটি লক্ষ্য অর্থাৎ ‘গাজওয়া-ই-হিন্দ’-এর উপর। এজন্য তাদের সব ধরনের সাহায্য করা হচ্ছে । যে শহরেই যান না কেন, রাস্তার ধারে অবৈধ দখলদার দেখতে পাবেন, তারা রাস্তার ওপর দোকান বসিয়েছে এবং পুলিশ বা পৌর কর্পোরেশন তাদের সরানোর সাহস পর্যন্ত পায় না । আমি খুব বেশি দূরের কথা বলছি না, গুজরাটে এই চিত্রই দেখে এসেছি ।আপনি যদি কখনো আহমেদাবাদে আসেন এবং ভদ্রকালী মন্দির থেকে গান্ধী রোডে যান, তাহলে আপনি ৬০ ফুট রাস্তায় হাঁটতে পারবেন না,এখন ৫ ফুটও বাকি নেই ।’
তিনি আরও লিখেছেন,’বেঁচে থাকার জন্য তারা বন বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, প্রতিরক্ষা বা রেলওয়ের সরকারী জমি দখল করে নিয়েছে।সরকার কিছুই করতে চায় না। তারপর তাদের ইকো সিস্টেমের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় এতটাই অনুপ্রবেশ করেছে যে,তারা সব কিছউ।দখল করে নিয়েছে। আইনজীবী বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং বিচারক তাদের মানবিক দৃষ্টিকোন দিয়ে দেখে তাদের বাঁচতে দেওয়ার কথা বলে। তারপর যখন একটি জায়গা দখল সম্পূর্ণ হয়, তখন তারা দ্বিতীয় স্থান, তৃতীয়, চতুর্থ স্থান দখল করতে থাকে এবং আমাদের বিচার বিভাগ, আমাদের পুলিশ ব্যবস্থা, আমাদের পুরো সরকার ব্যবস্থা তাদের সাহায্য করতে থাকে। আর এখানে আমরা হিন্দুরা শ্রমিকের মতো কঠোর পরিশ্রম করি, ট্যাক্স দিই, আমাদের মন্দিরগুলো তাদের এবং সরকার দখল করে নিয়েছে, আমরা হিন্দু মন্দিরে যে নৈবেদ্য পাই তাও তাদের জন্য ব্যবহার করা হয় ।’
উত্তরাখণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বামপন্থী মনস্ক তথা নরেন্দ্র বিরোধী বলে পরিচিত সাংবাদিক রবিশ কুমার বিরোধী দলগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন,’উত্তরাখণ্ডে মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। আহত হয় বহু মানুষ। উত্তরাখণ্ডের বনভুলপুরায় বিরোধী দলের বড় নেতাদের যাওয়া উচিত। সেখানে গিয়ে থাকা উচিত এবং জিনিসগুলি সন্ধান করা উচিত ।’ তার আরও দাবি,’সেখানে যা ঘটছে তাতে দেখা যাচ্ছে দখল অপসারণের নামে অন্য কিছু। সেখানে খবরের প্রাধান্য থাকে সরকারের পক্ষ থেকে। সেক্ষেত্রে বিরোধী দলের বড় নেতাদের মাঠে গিয়ে থেমে থেমে যোগাযোগ করে সাহস দেখাতে হবে। গোডি মিডিয়া এবং হোয়াটসঅ্যাপ প্রচারের সাহায্যে আপনি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যাকে ত্যাগ করতে পারেন না। যেভাবেই হোক নির্বাচনী মেরুকরণ হচ্ছে।’ এই সাংবাদিকের কথাতে উত্তরাখণ্ডের পুলিশের উপর হামলার কোনো উল্লেখ নেই ।।