প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১ জুলাই : ব্যাপক মারধোর করে ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতিকে প্রাণে মেরে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠলো দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে । দলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের আগে এহেন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের তৃণমূল শিবিরে । মারধোর ও হামলার ঘটনায় জড়িত দলেরই এক পঞ্চায়েত সদস্য সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মন্তেশ্বর থানায় এফআইআর রুজ করেছেন আক্রান্ত যুব সভাপতি দেবপ্রিয় যশ । যদিও এফআইআর-এ নাম থাকা ব্যক্তিরা তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । তবে পুলিশ অভিযুক্তদের কাউকে এখনও গ্রেপ্তার না করলেও এই ঘটনায় যথেষ্টই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।
মন্তেশ্বর ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতি দেবপ্রিয় যশ পুলিশকে জানিয়েছেন,গত শনিবার তিনি দলের ২১শে জুলাই এর সভা সংক্রান্ত দলীয় কর্মসূচী যোগ দেন। সেই কর্মসূচী সেরে তিনি যাধ মন্তেশ্বরের ঠাকুর পুকুর মোড় এলাকা নিবাসী তাঁর বৌদির বাড়িতে।সেখানে খাওয়া দাওয়া সেরে রাত আনুমানিক ৯টা ৫০ মিনিট নাগাদ তিনি বাইকে চেপে মন্তেশ্বরে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন।পথে মন্তেশ্বরের কামারশালা মোড়ের কাছে তাঁর বাইক দাঁড় করায় স্থানীয় অতনু সামন্ত। দেবপ্রিয় বাবুর
অভিযোগ, তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর জামার কলায় ধরে টানতে শুরু করে অতনু সামন্ত। জোর পূর্বক টেনে হিঁচড়ে তাকে খানিকটি দূরে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে আগে থেকেই হাজির ছিল মন্তেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য জগন্নাথ ঘোষ সহ স্থানীয় কুন্তল চৌধুরী ,পার্থ ঘোষ ও তপন ঘোষ ।এই সকল ব্যক্তিরা তাঁকে প্রাণে মেরে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তায় ফেলে লোহার রড দিয়ে নির্মম ভাবে পিটিয়ে জখম করে।এমনকি এই আক্রমনকারীরা তাঁকে প্রাণে দেওয়ার ও তাঁর পার্টি অফিস ভেঙে ফেলে দেবে বলেও হুমকি দেয় বলে দেবপ্রিয় যশ অভিযোগ করেছেন।দেবপ্রিয় বাবু পুলিশকে এও জানিয়েছেন,কোনরকমে নিজেকে প্রাণে বাঁচিয়ে তিনি সেখান থেকে পালায়ে এসে মন্তেশ্বর ব্লক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান।
ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতির আনা এই অভিযোগ যদিও মানতে চান নি মন্তেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য জগন্নাথ ঘোষ। তিনি বলেন ,“তাঁর সঙ্গে দলের যুব সভাপতি দেবপ্রিয় যশের কিছুই হয়নি ।এমন কোন ঘটনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত নন । তাঁর নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। পাল্টা অভিযোগে, জগন্নাথ বাবু বলেন,মন্তেশ্বরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা এক বিধবার সঙ্গে পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়েছে দেবপ্রিয় যশ ।এই সম্পর্কের বিষয়টি সেখানকার লোকজন মেনে নেননি ।তারাই শনিবার রাতে দেবপ্রিয় যশ কে দু’চার চাপ্পড় দিয়ে এলাকা থেকে ভাগিয়ে দিয়েছে।অথচ এই ঘটনা আড়াল করতেই দেবপ্রিয় যশ মিথ্যা করে তাঁর নামে ও অন্য কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ।
একই কথা জানিয়েছেন, মন্তেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ- প্রধান রফিকুল ইসলাম শেখ । পঞ্চায়েত সদস্য ও উপ- প্রধানের এই বক্তব্য থেকে পরিস্কার হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের যুব সভাপতিকে মারধোর করা হয়েছে । যাঁরা মারধোর করেছে তাঁরা যে আইন নিজেদের সাতে তুলে নিয়েছেন সেটাও এই বক্তব্য থেকেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছে । বিরোধীরা অবশ্য দাবী করেছেন,’শাসক দলের যুব সভাপতিকে পিটিয়ে প্রাণে মেরে দেওয়ার চেষ্টা করবে সাধারণ গ্রামবাসীরা করেছে ,এই কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না । বিরোধীদের দাবী যা ঘটেছে তার সবটাই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব । পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক অলক মাঝি এই প্রসঙ্গে বলেন,’মন্তেশ্বরের ঘটনার কথা শুনেছি ।দলীয় স্তরে ঘটনার তদন্ত হবে । কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’।