এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২৮ অক্টোবর : আল কায়দা, হামাসের মত বিশ্বের একাধিক কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি কট্টর ইসলামি রাষ্ট্র কাতারের তেল বেচার অর্থে প্রতিপালিত হচ্ছে । আর কাতারের এই প্রকার কুকর্মের জন্য ২০১৭ সালে বাহরাইন, মিশর, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর মত ইসলামি রাষ্ট্রগুলি কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ প্রচারের অভিযোগ এনে তার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল । এ কারণে কাতারকে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সেই সময় । দেখা দিয়েছিল চরম খাদ্য সংকট । তখন কাতারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত । ‘ভারত-কাতার এক্সপ্রেস সার্ভিস’ নামে একটি সমুদ্র সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে কাতারকে সাহায্য করেছিল ভারত সরকার । ফলে দূর্ভীক্ষের হাত থেকে বেঁচে যায় কাতার । তারপরেও পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে ক্রমাগত আক্রমণ করে ওই মুসলিম রাষ্ট্রটি । ২০২২ সালে টিভি চ্যানেলে মুসলিমদের নবী সম্পর্কে নূপর শর্মার বক্তব্যের পর প্রথম প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল ওই ‘অকৃতজ্ঞ’ রাষ্ট্রটি । কাতার হল প্রথম মুসলিম দেশ যারা নূপুর শর্মা ইস্যুতে ভারতীয় কূটনীতিককে তলব করেছিলেন। তখন নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয় । ফের একবার ভারতের সঙ্গে ‘বেইমানি’ করল কাতার ।
কাতারের একটি আদালত গুপ্তচরবৃত্তির মিথ্যা অভিযোগে ৮ প্রাক্তন ভারতীয় নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর এই রায় ঘোষণা হয় । তবে এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঠিক কি অভিযোগ রয়েছে তা ভারতকে স্পষ্ট করে জানায়নি কাতার । একই সঙ্গে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় কাতারের এই পদক্ষেপে বিস্ময় প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে তারা এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবে । তবে অনুমান করা হচ্ছে যে ফিলিস্থিনি চরমপন্থী গোষ্ঠী হামাসকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসাবেই আট ভারতীয় নাগরিককে বিনা অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চায় কাতার ।
ওই ৮ প্রাক্তন ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা হলেন ক্যাপ্টেন সৌরভ বশিষ্ঠ, কমান্ডার পূর্ণেন্দু তিওয়ারি, ক্যাপ্টেন বীরেন্দ্র কুমার ভার্মা, কমান্ডার সুগুনাকর পাকালা, কমান্ডার সঞ্জীব গুপ্ত, কমান্ডার অমিত নাগপাল এবং নাবিক রাগেশ । তাঁরা কাতারের ডাহারা গ্লোবাল টেকনোলজিস অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিস নামে একটা বেসরকারি ফার্মে কাজ করতেন ।প্রতিরক্ষা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা দাহরার মালিক হলেন রয়্যাল ওমানি এয়ার ফোর্সের অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন নেতা খামিস আল-আজমি ৷ এই বেসরকারি কোম্পানিটি কাতারি সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করে। গত বছর ৩০ আগস্ট ভারতীয়দের সাথে আজমিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কিন্তু ফিফা বিশ্বকাপের আগে তাকে ওই বছর নভেম্বরে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
তথ্য অনুযায়ী, এই ভারতীয়দের ইসরায়েলের জন্য একটি সাবমেরিন প্রোগ্রামে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ।
কিন্তু এখন প্রশ্ন যে কিভাবে ৮ নাগরিককে মুক্ত করবে ভারত সরকার ? এই বিষয়ে পাকিস্তানের হাতে বন্দী প্রাক্তন নৌ অফিসার কুলভূষণ যাদবের মত আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে নয়াদিল্লি । কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করতে হয় পাকিস্তানকে। তবে কুলভূষণ যাদবকে এখনও পাকিস্তান মুক্তি দেয়নি । তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী রয়েছেন এবং তিনি নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন । এছাড়া কাতারের উপর রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করে নাগরিকদের মৃত্যুদন্ড থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। সাহায্য নেওয়া হতে পারে জাতিসংঘেরও ।
কিন্তু পাকিস্তানপন্থী ও ভারত বিদ্বেষী বলে পরিচিত কাতারের প্রতি ভারতে কতদিন নরম দৃষ্টিভঙ্গি চালিয়ে যাবে নয়াদিল্লি? এনিয়েও প্রশ্ন উঠছে ।
প্রসঙ্গত, খাদ্য সামগ্রীর জন্য মূলত ভারতের উপরেই নির্ভরশীল কাতার । তবে কাতার থেকে সবচেয়ে বেশি এলএনজি আমদানি করে ভারত । এই প্রকার ব্যবসায়িক লেনদেন কমিয়ে কাতারকে কুটনৈতিক ভাবে চাপে রাখার কৌশল নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন অনেকেই । তবে সেক্ষেত্রে নয়াদিল্লির সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে এদেশের তথাকথিত সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলি ।।