এইদিন ওয়েবডেস্ক,ইসলামাবাদ,২৭ আগস্ট : স্বাধীতনাকামী সংগঠন বেলুচি লিবারেশন আর্মি (BLA) ও পাকিস্তান সেনার দফায় দফায় সংঘর্ষে শতাধিক জনের মৃত্যু হয়েছে । বেলুচ লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র জিয়ান্দ বালোচ একটা বিবৃতিতে বলেছেন,’মাজিদ ব্রিগেডের ফিদায়ীন ৪০ জনেরও বেশি সৈন্যকে হত্যা করেছে, গত ৬ ঘণ্টা ধরে বেলা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করেছে বিএলএ। বেলুচ লিবারেশন আর্মির ফিদায়েন অপারেশন “হেরফ” এর অধীনে বিএলএ-র মাজিদ ব্রিগেডের ফিদায়েন ইউনিট দখলদার বাহিনীর বেলা ক্যাম্পে আক্রমণ করে, এ পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি সামরিক কর্মীকে হত্যা করেছে এবং গত ছয় ঘন্টা ধরে শত্রুর বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার সময় ক্যাম্পের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করেছে । বিএলএ-র মাজিদ ব্রিগেড ক্যাম্পের প্রধান প্রবেশদ্বার এবং নিকটবর্তী নিরাপত্তা পোস্টে দুটি বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এর পরে, মাজিদ ব্রিগেডের হেরোফ ফিদায়েন ইউনিট ক্যাম্পে প্রবেশ করে,৪০ জনেরও বেশি সামরিক কর্মীকে হত্যা করে এবং সফলভাবে ক্যাম্পের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সমস্ত ফিদায়ীন এখনও নিরাপদ এবং আমাদের সংস্পর্শে রয়েছেন । এই সময়, ক্যাম্পের ভিতরে সৈন্যদের শক্তিশালী করার জন্য আগত একটি সামরিক কনভয় ফিদায়িনদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ইতিমধ্যে, বেলুচিস্তান জুড়ে সমস্ত হাইওয়ে চেকপয়েন্ট স্থাপন করে বিএলএর ফাতাহ স্কোয়াড এবং এসটিওএস দ্বারা দখল করা হয়েছে। এ পর্যন্ত, অবরোধ ও সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ৬২ জন কর্মী নিহত হয়েছে, এতে শত্রু সামরিক বাহিনীর মোট নিহতের সংখ্যা ১০২ হয়েছে, যখন ২২ জনেরও বেশি সামরিক, পুলিশ এবং লেভিস কর্মী বিএলএ-তে হেফাজত রয়েছেন৷’
জানা গেছে , গত ২৩ আগস্ট রাতে হামলায় বেলুচ বিদ্রোহীদের দ্বারা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেলুচিস্তানে পাক সেনা ও চীন দ্বারা ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সেতু এবং অর্ধ শতাধিক পাকিস্থান সেনা,পুলিশ নিহত হয়েছে। বিএলএ যোদ্ধারা বেলুচিস্তানের সমস্ত প্রধান সড়কের নিয়ন্ত্রণ দখল করেছে। পাকিস্থান সেনার অনেক স্থাপনায় সরবরাহ রুট বন্ধ হয়ে গেছে । সোমবার সকাল পর্যন্ত দফায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে রবিবার রাতে ও সোমবার সকালে অন্তত ছয় দফা হামলা চালায় স্বাধীতনাকামী বিএলএ যোদ্ধারা । বেলুচিস্তান ও পাঞ্জাবের সীমান্তে মুসাখেল জেলার রারাশাম এলাকায় সবচেয়ে মারাত্মক হামলাটি হয়েছে রবিবার রাতে। পুলিশ বলছে, বেলুচিস্তান প্রদেশের প্রবেশমুখের সড়কে গাড়ি থামিয়ে অন্তত ২৩ জনকে টেনে নামায় বিএলএ যোদ্ধারা । তাদের পরিচয়পত্র দেখে পাঞ্জাবের অভিবাসী শ্রমিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য শনাক্ত হলেই তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে । পাঞ্জাবের প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটার দক্ষিণ সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানের কালাত জেলায় সশস্ত্র যোদ্ধারা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালায়। এতে অন্তত ১০ জন পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ নিহত হয়েছে।
কোয়েটার দক্ষিণ-পূর্বে বোলান জেলায় সোমবার ভোরে পাঞ্জাবের চার নাগরিকসহ ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও পাঞ্জাবের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় সামরিক বাহিনীর আরো পাঁচজন কর্মীসহ ১৪ জন নিহত হয়েছে বিএলএ যোদ্ধাদের হামলায়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বলেছে, এসব হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ২১ জন বিএলএ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন ।
সর্বশেষ এমন দফায় দফায় হামলার দায় স্বীকার করেছে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। একটি বিবৃতিতে বিএলএ বলেছে, তারা পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং প্রদেশজুড়ে হাইওয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে।
বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য কয়েক দশক ধরে বিএলএসহ সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রীয় রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরের মধ্যে সম্প্রতি তাদের সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে। চলতি বছরে এসে তারা বেসামরিক নাগরিক, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, দেশি-বিদেশি শ্রমিক ও রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, গত বছরের মে মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বড় ধরনের হামলা হয়েছিল, কিন্তু গত দুইদিনের ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ। বিএলএ যোদ্ধাদের হামলার ধরন এই বার্তাও দিচ্ছে যে বেলুচিস্তানে বহিরাগতরা নিরাপদ নয়। এই বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও পাকিস্থান ইনস্টিটিউট অব পিস স্টাডিজের (পিআইপিএস) পরিচালক মুহম্মদ আমির রানা বলেন, পাঞ্জাবের কাছে মহাসড়ক অবরুদ্ধ, রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা পাঞ্জাবে বা কাছাকাছি সংঘাতকে প্রসারিত করার ক্ষমতা প্রদর্শন করছে।
বেলুচিস্তানসহ আশপাশের অঞ্চলে পাঞ্জাব থেকে কর্মী কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছে স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা ।
ওয়াশিংটন, ডিসিতে অবস্থিত বেলুচিস্তান বিশেষজ্ঞ মালিক সিরাজ আকবর বলেন, বেলুচ জাতীয়তাবাদীরা চীনা ছাড়াও নির্দিষ্ট গোষ্ঠী যেমন নিরাপত্তা বাহিনী, পাঞ্জাবি শ্রমিক এবং উন্নয়ন প্রকল্পে জড়িত শ্রমিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হল দেশি-বিদেশি শ্রমিকদের বেলুচিস্তানে আসতে নিরুৎসাহিত করা।।