দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),৩১ ডিসেম্বর : শ্বশুর তৃণমূল নেতা । বর্তমানে তিনি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের পদে রয়েছেন । অন্যদিকে জামাই বছর খানেক আগে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন । তিনি বর্তমানে বিজেপির জেলা যুব মোর্চার পদে আসীন রয়েছেন । এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক কমিটির বিভিন্ন পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা হয়েছে দিন দুয়েক আগে । সেই তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই দেখা যায় ব্লক কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শ্বশুরকে । তার অব্যবহিত পরেই জামাইকে বিজেপির সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাতের অন্ধকারে কেউ বা কারা বাজারে পোস্টার সাঁটিয়ে দিয়েছেন । ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে । ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় ।
জানা গেছে,শ্বশুরের নাম জয়ন্ত হাটি । ভাতার থানার কামারপাড়া বাজারের বাসিন্দা জয়ন্তবাবু ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির একজন কর্মাধ্যক্ষ । বছর দুয়েক আগে ভাতার থানার বেলেন্ডা গ্রামের বাসিন্দা সৌমেন কার্ফার সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয় । সৌমেনবাবু সিপিএমের যুব সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন । কিন্তু ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন । দল তাঁকে পূর্ব বর্ধমান জেলার যুব মোর্চার অবজার্ভারের দায়িত্ব দিয়েছেন । এতদিন তাঁকে নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরে কোনো প্রশ্ন না উঠলেও তাঁর শ্বশুরকে তৃণমূলের ভাতার ব্লক কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব দিতেই বিজেপি কর্মীদের মধ্যে কাঁনা ঘুঁষো শুরু হয়েছে ।
পোস্টার বিতর্কে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য শুনুন
এদিন শনিবার সকালে ভাতার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কিছু পোস্টার নজরে পড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের । পোস্টারের উপরের বামদিকে রয়েছে শ্বশুর জয়ন্ত হাটি ও ডানদিকে জামাই সৌমেন কার্ফার ছবি । আর নিচে লেখা হয়েছে,’বহিষ্কৃত সিপিএম কর্মী সৌমেন কার্ফা ২০২১ সালে বিজেপি জয়েন করে কিছুদিন বিজেপির কলেজ সেলের দায়িত্বে ছিলেন ।
বর্তমানে বিজেপি যুব মোর্চার অবজারভার ( বর্ধমান
সাংগঠনিক জেলার) তার শ্বশুর তৃনমূল নেতা, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ও বর্তমানে তৃণমূল ভাতাড় ব্লক কমিটির সম্পাদক। এমতাবস্থায় ভাতাড় বিজেপি কার্যকর্তাদের পক্ষ থেকে জেলা তথা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন অবিলম্বে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক নাহলে হয়তো ভাতাড়
বিজেপি কার্যকর্তারা বিপদের সম্মুখীন হতে পারে যা
সাংগঠনিক শ্রীবৃদ্ধির পক্ষে অন্তরায় ।’যদিও এই পোস্টার কারা দিয়েছে তা স্পষ্ট নয় ।
স্থানীয় সিপিএম নেতা সুভাষ মণ্ডলের কাছে ওই পোস্টার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,’ওসব পোস্টার নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই ।’ তবে তৃণমূল নেতা শান্তনু কোঁয়ারের অনুমান পোস্টারটি বিজেপির লোকেরাই সাঁটিয়েছেন । পাশাপাশি শ্বশুর-জামাইয়ের ভিন্ন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হওয়ায় কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি । শান্তনুবাবু বলেন,’বাংলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি । অতীতেও দেখেছি একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্য বিভিন্ন দলের সাথে যুক্ত ছিলেন । স্বামী এক দল করেন,স্ত্রী অন্য দল করেন,এরকম নজির অনেক আছে । বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিতে চাই না । তবে জয়ন্ত হাটী আমাদের দলের পুরনো নেতা এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন । ওনাকে নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই ।’
অন্যদিকে পোস্টারের দাবি সম্পর্কে সহমত পোষণ করেছে বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার তফসিলি মোর্চার সভাপতি ভাতার থানার বড়বেলুন গ্রামের বাসিন্দা রাজকুমার হাজরা । তিনি বলেন, ‘দলের কর্মীরা সৌমেন কার্ফাকে নিয়ে আতঙ্কিত ও ভীতসন্ত্রস্ত । কারন তাঁর শ্বশুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ । এখন উনি ভাতারে তৃণমূলের সম্পাদক হয়েছেন । ফলে আমাদের দলের খবর অন্য দলের কাছে চলে গেলে কর্মীরা বিপদে পড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন অনেকে । তাই জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য আমি অনুরোধ করছি ।’
সৌমেন কার্ফার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ,’২০২১ সালে যখন রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসা নিয়ে জল্পনা চলছিল সেই সময় সৌমেন কার্ফা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন । উনি ভাতার বিধানসভায় বিজেপির কোনো নেতা নন । তবে সৌমেন কার্ফার একটা সমস্যা হল, উনি কোনো পদকে সম্মান দিতে চাননা । নেতৃত্বকেও মানতে চাননা এবং দলের পুরনো কর্মীদের উনি অসম্মান করেন । সিপিএমে যুক্ত থাকার সময়েও উনি একই কাজ করতেন । সেই কারনে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল ।’।