দিব্যেন্দু রায়,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১৩ আগস্ট : স্ত্রী চেয়েছিলেন স্বামীর মদের নেশা ছাড়াতে । কিন্তু কিছুতেই এঁটে উঠতে পারেননি স্বামীকে । শেষ পর্যন্ত মদ্যপ স্বামীর হাতেই নৃশংসভাবে খুন হতে হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার পালিটা গ্রামের গৃহবধূ ফুলেশ্বরী ফৌজদার(৪৩)কে । এই ঘটনায় ঘাতক স্বামী সন্তোষ ফৌজদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । নেশা কাটতেই বুঝতে পারছেন নিজের সুস্থ স্বাভাবিক পরিবারটার কি সর্বনাশ তিনি করে ফেলেছেন । থানার লক আপের ভিতরে বসে নিজের মনেই কি যেন অনর্গল বলে যাচ্ছেন প্রাক্তন সেনাকর্মী সন্তোষবাবু । তবে তিনি এটাও বুঝতে পারছেন যে তাঁর স্ত্রী এখন অতীত,আর শত চেষ্টা করেও ফিরে পাবেন না তাঁকে । তাই অনুশোচনায় মাঝে মধ্যেই দু’হাত দিয়ে নিজের মাথাটা চেপে ধরে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে ।
কেতুগ্রাম থানার পালিটা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় কৃষক মধূসুদন ফৌজদারের দু’মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ছোট সন্তোষ ফৌজদার । তার দিদিদের বিয়ে হয়ে গেছে । সন্তোষবাবু সেনাবাহিনীতে গাড়িচালকের চাকরি পাওয়ার আগে তাঁদের আর্থিক অবস্থা তেমন স্বচ্ছল ছিল না । তিনি চাকরি পাওয়ার পর থেকেই সংসারে স্বাচ্ছল্য আসে । দু’তলা পাকা বাড়ি নির্মান করেন তিনি । সন্তোষবাবুর একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন । বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ছিল তাঁর সুখের সংসার । কিন্তু বছর দেড়েক আগে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই মদের নেশায় জড়িয়ে পড়েন তিনি ।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে,ফুলেশ্বরীদেবী স্বামীর নেশা ছাড়াতে বহু কাটখড় পুড়িয়েছেন । গত বছর স্বামীকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তিও করেন । মাস চারেক সেখানে ভর্তি থাকেন সন্তোষ ফৌজদার । নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পর মোটামুটি ঠিকঠাক থাকলেও ফের মদের নেশায় জড়িয়ে পড়েন তিনি ।
সন্তোষ ফৌজদারের জামাইবাবু শ্যামল পাল বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে গাড়িচালকের চাকরির সময় তার মদ্যপানের অভ্যাস গড়ে ওঠে সন্তোষের । তবে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল । কিন্তু অবসরের পর থেকেই তার মদের নেশা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় । সন্তোষের মদের নেশা ছাড়াতে বহু চেষ্টা করেছিলেন তার স্ত্রী । কিন্তু নেশার ঘোরে সন্তোষ যে এই ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে দেবে তা আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি ।’
গত শুক্রবার গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় সন্তোষ ফৌজদার । পরের দিন সকালে তার স্ত্রী ফুলেশ্বরীদেবীকে উদ্ধার করে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ । কিন্তু তার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর । শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করে । আজ রবিবার তাকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে তিনদিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক ।।