এইদিন ওয়েবডেস্ক,মায়ানমার,১২ ডিসেম্বর : একদিকে ভারতকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মৌলবাদী মুসলিমরা এবং পাশাপাশি সেদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নৃশংস বর্বরোচিত অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে । অন্যদিকে তখন বাংলাদেশের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’ । ‘আরাকান আর্মি’ কৌশলগত মংডু শহর এবং ২৭১ কিলোমিটার বাংলাদেশ সীমান্তের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখল করেছে, সমস্ত পরিবহন রুট স্থগিত করে দিয়েছে । আরাকান আর্মি ঘোষণা করেছে যে তারা মায়ানমার -বাংলাদেশ সীমান্তে সীমান্ত শহরের শেষ জান্তা ব্যাটালিয়ন,৫ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে পরাজিত করার পর রবিবার রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, নিয়েছে ।
মংডও টাউনশিপের সামরিক ব্যাটালিয়ন ৫-এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আরাকান সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন ও হয়রানি শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা শুরু হয়েছে । বাংলাদেশের মুসলিমদের দ্বারা যেমন হিন্দুদের উপর ‘জিজিয়া’ কর দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠছে অন্যদিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের আরাকান আর্মি নির্দেশ দিয়েছে যে আরাকানে থাকতে হলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে । এছাড়া আরও অনেক বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের উপর ।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী,মায়ানমারের বিদ্রোহী ‘আরাকান আর্মি’ বাংলাদেশ সীমান্তে শেষ সামরিক চৌকি দখল করে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন,আরাকান আর্মি একটি সীমান্ত নদীকে সমস্ত পরিবহনের জন্য বন্ধ করে দেয় কারণ তারা পালিয়ে যাওয়া জান্তা বাহিনীকে খুঁজছিল। জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহীরা বাংলাদেশের সীমান্তে মায়ানমারের শেষ সামরিক অবস্থানটি দখল করে নিয়েছে, এর রক্ষকরা, যার মধ্যে বেশিরভাগ মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জান্তা-পন্থী সন্ত্রাসীসহ, পোস্টটি পরিত্যাগ করে পালিয়ে গেছে । বাংলাদেশের সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটার বা ১৬৮ মাইল এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে । বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার মংডু, বুথিডং ও পালেতাওয়া দখলের নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। প্রদেশের মংডু শহর হল রাজ্যে সবচেয়ে বড় শহর এবং সামরিক দৃষ্টিকোন থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা । প্রদেশটিতে মূলত রোহিঙ্গা মুসসলিমদের বসবাস ৷ জান্তা বাহিনীর সাহায্যকারী রোহিঙ্গা মুসলিমরা এখন সমুদ্রপথে নৌকায় বাংলাদেশে পালাচ্ছে ।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইং থু খা বলেছেন, এরই মধ্যে তারা পশ্চিম অঞ্চলের জান্তা বাহিনীর কমান্ড হেডকোয়ার্টার দখলসহ রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই অংশের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরই বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আরকান আর্মি। আরাকান আর্মির ওই ঘোষণার পর নাফ নদীতে নৌ চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয় বাংলাদেশের পক্ষে । এই ঘটনায় বাড়ানো হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির টহল।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের চলমান এই যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সহযোগী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি-এআরএ ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাসহ কয়েকটি মুসলিম সংগঠনের অবস্থান ছিল জান্তা বাহিনীর পক্ষে।
যে কারণে সীমান্তবর্তী আরাকান রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার ফলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ও বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘এর ফলে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টা আরো বেশি জটিল ও আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর সেখানে সরকার গঠন করে সামরিক বাহিনী জুন্টা । বিগত আড়াই বছর তাদেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল দেশ। সেই থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বার বার বিদ্রোহ হয়েছে মায়ানমারে। এরপর ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গড়ে বাঁধে তিন বড় বিদ্রোহী গোষ্ঠী টিএনএলএ (তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি), আরাকান আর্মি ও এমএনডিএএ (মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি)। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে বিদ্রোহী জোট শুরু করে ‘অপারেশন ১০২৭’। এর জেরে মায়ানমারের বেশ কয়েকটি প্রদেশে প্রবল লড়াই শুরু হয় । গৃহযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু মায়ানমারের উত্তরের রাজ্য রাখাইন দখল করে নেয় আরাকান আর্মি ।।