দিব্যেন্দু রায়,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),০৯ এপ্রিল : প্রতিবন্ধী মানুষদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘মানবিক’ প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার । ওই প্রকল্পের আওতায় মাসিক এক হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে । আর সেই টাকার লোভেই ভূয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্র দাখিল করে ‘মানবিক’ প্রকল্পে আবেদন করার হিড়িক পড়ে গেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম-১ ব্লকে । যদিও তদন্তের পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই প্রায় দুই শতাধিক আবেদনপত্র বাতিল করে দিয়েছে ব্লক প্রশাসন ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,মূলত দুয়ারে সরকার শিবিরেই জমা পড়েছিল ওই আবেদনপত্রগুলি । এযাবৎ চার থেকে পাঁচ দফায় দুয়ারে সরকার শিবির হয়েছে কেতুগ্রাম ১ ব্লকে । লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন হাজার হাজার নামুষ । আর তাদের মধ্যেই ৩০০ এর অধিক ‘মানবিক’ প্রকল্প বা প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন জমা পড়ে । নিয়ম অনুযায়ী আবেদনকারীদের আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটও জমা দিতে হয়েছিল ।
জানা গেছে,একটা ব্লকের মধ্যে এক সঙ্গে এত সংখ্যক মানুষ প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয় । তাই আবেদনপত্রের সঙ্গে দাখিল করা প্রতিবন্ধী শংসাপত্রগুলি আদপেই আসল কিনা তা জানতে
আবেদনকারীদের নামের তালিকা পাঠানো হয় স্বাস্থ্য দপ্তরে । যেখানে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয় ওইসমস্ত আবেদনকারীদের নামে আদৌ প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে কিনা । তার উত্তর পৌছালে কার্যত চোখ কপালে উঠে যায় প্রশাসনের । দেখা যায় ওই তালিকার মধ্যে দুশোর বেশি আবেদনকারীদের নামে আদৌ কোনও প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটই ইস্যু করা হয়নি । অর্থাৎ তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য জমা দেওয়া আবেদনপত্রের সঙ্গে দাখিল করা প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটগুলি সব ভূয়ো ।
কেতুগ্রাম ১ বিডিও পূর্নেন্দু স্যানাল বলেন, ‘দুয়ারে সরকার শিবিরে মানবিক প্রকল্পের জন্য প্রায় তিনশোর কাছাকাছি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব প্রতিবন্ধী শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল দেখা যায় তার সিংহভাগই ভুয়ো । আমরা ওই আবেদনপত্রগুলি বাতিল করে দিয়েছি । ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে । যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’
প্রসঙ্গত,মানুষের সুবিধার্থে এবং প্রশাসনিক কাজে গতি আনতে ‘দূয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চালু করেছে রাজ্য সরকার । এতে সাধারণ মানুষ সহজেই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন । কিন্তু এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে গজিয়ে উঠেছে অসাধু চক্র । আর কেতুগ্রাম ১ ব্লকে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদনের হিড়িকই তার প্রমান । প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,কেতুগ্রামে ‘ভূয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্র’ কান্ডে প্রশাসনের তরফ থেকে এফআইআর দায়ের করা হতে পারে ।।