এইদিন ওয়েবডেস্ক,নাটোর(বাংলাদেশ),২১ এপ্রিল : কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হিন্দু বিধবা মহিলার বাড়িতে চড়াও হয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালালো এক মুসলিম ব্যক্তি । ঘটনাটি বাংলাদের নাটোর শহরের মল্লিকহাটি এলাকার । রবিবার(৯ এপ্রিল ২০২৩) বিকাল ৬ টা নাগাদ প্রতিবেশী ওই হিন্দু মহিলার বাড়িতে চড়াও হয় আনোয়ার হোসেন (৪০) নামে ওই দুষ্কৃতী । মহিলা ও তাঁর বাবা,মা ও ভাইকে ব্যাপক মারধর করে সে। বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র, পোশাক পরিচ্ছদসহ সমস্ত সামগ্রী সে ছুড়ে ফেলে দেয় আনোয়ার । এমনকি মহিলাকে পরিবারের সামনে ধর্ষণের চেষ্টাও করে । তার কবল থেকে কোনো রকমে ছিটকে বাড়ির বাইরে চলে এসে চিৎকার করে লোকজন ডাকাডাকি করে ভুক্তভুগী মহিলা । এরপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিতে দিতে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী ৷ ঘটনার পর ওইদিন রাতেই নাটোর সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই হিন্দু মহিলা । তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
ঘটনা প্রসঙ্গে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি নাছিম আহমেদ বলেন,’এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাতেই অভিযান চালিয়ে আনোয়ার হোসেন নামে ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।’ তিনি আরও বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আনোয়ার একজন দুষ্কৃতী ও খারাপ লোক । তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ।’ এদিকে ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে আক্রান্ত হিন্দু মহিলার পরিবার ।
মিডিয়া রিপোর্টে জানা গেছে,ভুক্তভোগী হিন্দু মহিলার নাম জয়া । বছর খানেক আগে তাঁর স্বামী মারা যান । তারপর ৭ বছরের কন্যাসন্তানকে নিয়ে বাবা তাপস আচার্য্যের কাছে নাটোরশহরের মল্লিকহাটিতে চলে আসেন । স্ত্রী,কন্যা ও এক পূত্রকে নিয়ে মল্লিকহাটি মহল্লায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তাপসবাবু । একই এলাকায় বাড়ি বিবাহিত ব্যক্তি আনোয়ার হোসেনের । তার ৫-৬ টি ছেলেমেয়ে আছে । তাদের মধ্যে কয়েকজনের বিয়েও হয়ে গেছে । এদিকে বাবার কাছে আসার পর থেকেই জয়ার উপর কুনজর দিতে শুরু করে আনোয়ার । আনোয়ার প্রায় ওই হিন্দু মহিলাকে রাস্তাঘাটে আটকে উত্যক্ত করত । মহিলাকে সে কুপ্রস্তাব দিত । কিন্তু সেই নোংরা প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আনোয়ার প্রায় ওই হিন্দু মহিলা ও তার পরিবারের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে শুরু করে ।
জানা গেছে,ওই মুসলিম ব্যক্তির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে বাড়ি বদল করতে বাধ্য হন তাপস আচার্য্য । তিনি নাটোর শহরের দক্ষিণ আলাইপুর মহল্লায় অন্য একটি বাড়ি ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকতে শুরু করেন । কিন্তু সেখানেও হানা দেয় আনোয়ার । ঘটনার দিন রবিবার প্রথমে সে জয়ার মোবাইলে ফোন করে । কিন্তু ফোন রিসিভ করেননি জয়া । সেই আক্রোশে ওই হিন্দু বিধবস মহিলার বাড়িতে গিয়ে তাকে পরিবারের সামনে ধর্ষণের চেষ্টা করে আনোয়ার । বাধা পেয়ে জয়া ও তার পরিবারের লোকজনদের সে ব্যাপক মারধর করে । ঘরে ভাঙচুর চালায় । এরপর জয়া কোনো রকমে বাড়ির বাইরে পালিয়ে এসে লোকজন ডাকাডাকি করে । তার চিৎকার শুনে লোকজন জড়ো হতে শুরু করে । এই দেখে জয়া ও তার পরিবারের লোকজনদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিতে দিতে পালিয়ে যায় আনোয়ার হোসেন ।
নির্যাতিতা মহিলা জয়া বলেন,’আমি টিউশানি করে আমার দরিদ্র বাবা মাকে সহায়তা করি । কোনো রকমে আমাদের সংসার চলে । তবুও আজ পর্যন্ত আমি আমার চরিত্রে কলঙ্কের দাগ লাগতে দিইনি । কিন্তু আনোয়ার আমার ও আমার পরিবারের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে । রবিবারেও সে আমায় ফোনে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল । তারপর থেকে আমি তার ফোন রিসিভ করিনি । আর সেই আক্রোশে সে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা,মারধর করে । বাড়ির লোকজনদেরও মারধর করার পাশাপাশি ভাঙচুর চালিয়েছে ।’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন,’আমার শিশু কন্যার মুখের দিকে চেয়ে না পারছি মরতে, না পারছি বাঁচতে ।’
জয়ার বাবা তাপস আচার্য্য বলেন,’এর আগেও আনোয়ার হোসেন আমাকে ও আমার ছেলেকে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর করাসহ আমার মেয়েকে তার হাতে তুলে দিতে বলে । তার অত্যাচারে বাধ্য হয়ে মল্লিকহাটি থেকে আলাইপুরে ঘর ভাড়া করি । কিন্তু এখানে এসেও আনোয়ারের কবল থেকে রেহাই পায়নি । এখন আমি পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো?’