শ্যামসুন্দর ঘোষ,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৫ অক্টোবর : পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা পেয়েছে । আজ শুক্রবার ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতাকর্মীরা পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে দাবি করেছেন যে এলাকার মহিলারা নাকি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং কিছু মানুষের প্রয়োচনায় এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে । থানায় উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক বিরোধী দলের প্রধান নেতা অশোক হাজরা,ভাতার পঞ্চায়েতের প্রধান রূপালী ঘোষ, ভাতার অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি সোমনাথ চক্রবর্তীসহ কিছু মহিলা ও পুরুষ কর্মী । এদিকে এলাকায় নারী নিরাপত্তা নিয়ে তৃণমূলের একাংশ প্রশ্ন তোলায় বিস্তর জলঘোলা হচ্ছে জেলার রাজনৈতিক মহলে । কারন রাজ্য জুড়ে এমনিতেই প্রায় নিয়মিত ব্যবধানে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে । তার মাঝেই ভাতারের তৃণমূলের একাংশের এহেন দাবি ঘিরে শোড়গোল পড়ে গেছে।
প্রসঙ্গত,গত ২৩ অক্টোবর মঙ্গলবার, ভাতারে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্য রাস্তায় নেমে এসেছিল । ওইদিন বাজারের হাউজিং কমপ্লেক্সের মাঠে বিধায়কের ডাকে বিজয়া সম্মেলনির আয়োজন করা হয়েছিল । মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী ও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু কোঁয়ার । সভা শুরুর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই অশোক হাজরার গোষ্ঠীর লোকজন দলীয় পতাকা হাতে শ্লোগান দিতে দিতে মঞ্চের দিকে এগুতে শুরু করে । তারা মঞ্চের কাছে পৌঁছতেই দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে ঠেলাঠেলি শুরু হয় । এনিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । শান্তনু কোঁয়ার তখন মঞ্চ থেকে নেমে কোথাও সরে যান । মঞ্চের সামনে ঝামেলার সময় অশোক হাজরাকে একটু দূরে দেখা গেলেও শান্তনু কোঁয়ারকে দেখা যায়নি৷ তার আগে ভাতার বাজারে বর্ধমান -কাটোয়া রাজ্য সড়কের উপরেও অশোক হাজরা ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে বিধায়কের একপ্রস্ত বচসা হয় । পরে দলীয় কর্মীরাই বিধায়ককে সরিয়ে নিয়ে যান। বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানের দিন ঝামেলার জন্য আজ মানগোবিন্দবাবু কারোর নাম না করে অশোক হাজরাকেই দায়ি করেন । তিনি বলেন,’বিজয়া সম্মিলনীর দিন যে অশান্তি হয়েছিল সেটা কে বা কারা করেছিল এলাকার মানুষ জানেন।’ কিন্তু ওই ঘটনার ঠিক দু’দিন পর ফের দুই গোষ্ঠীর কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়ে গেছে শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব ।
রূপালী ঘোষের অভিযোগ যে এলাকায় কিছু মানুষের প্রয়োচনায় অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে । অবশ্য ‘ওই মানুষরা’ কোন দলের তা তিনি না জানালেও এটা স্পষ্ট যে তার ইঙ্গিত বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী গোষ্ঠীর দিকেই । পাশাপাশি ভাতারের মহিলার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে তিনি মন্তব্য করেন । ভাতার অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি সোমনাথ চক্রবর্তীর আবার অভিযোগ যে বৃহস্পতিবার রাতে ভাতার থানার বামশোর গ্রামে তিনটি বাড়িতে পুলিশ আচমকা হানা দিয়েছিল । তাতে আতঙ্ক ছড়ায় । এর বেশি তিনি কিছু না বললেও তার ইঙ্গিত ছিল বিধায়কের দিকেই । তবে বিধায়ক বিরোধী গোষ্ঠীর প্রধান অশোক হাজরা মুখ খোলেনি । অন্যদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী বলেন,’২০২১ সাল থেকে এযাবৎ এলাকায় কোথাও কোনও অশান্তি হয়েছে বলে আমি শুনিনি । দলীয় প্রধান আমার কাছে ওই ধরনের কোনও অভিযোগ জানাননি।’
যেটা জানা যাচ্ছে যে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু কোঁয়ার ও ভাতার ব্লক সহ সভাপতি তথা কোটিপতি ব্যবসায়ী অশোক হাজরার সাথেই বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে ৷ বিধায়কের ওই দুই আত্মীয় মিলেই ব্লকের সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলাতেই । কিন্তু যখন থেকে ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির কর্তৃত্ব শান্তনু ও আর এক মুসলিম নেতার হাতে চলে যায় তখন থেকেই দু’জনের সম্পর্কে চিড় ধরে । ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির যাবতীয় টেন্ডার দেওয়ার কাজ মূলত পরিচালনা করেন শান্তনু ও আর ওই মুসলিম নেতা ৷ ফলে সমিতিতে বিশেষ সুবিধা করতে পারছেন না অশোক হাজরা । আর এ থেকেই তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে । সম্পর্কের থেকে বড় হয়ে দাঁড়ায় স্বার্থ ! এখন এই কোন্দল ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকেই তাকিয়ে আছে এলাকাবাসী ।।