দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২০ ডিসেম্বর : কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ বা রাজ্য সরকারের দেওয়া নাম ‘আবাস প্লাস যোজনা’র যোগ্য ও অযোগ্য বাছাইয়ের দায়িত্ব আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের উপর দেওয়া হচ্ছে । আর নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওই সমস্ত মহিলা কর্মীরা পড়ছেন আবাস যোজনার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া মানুষের ক্ষোভের মুখে । ইতিমধ্যে রাজ্যের একাধিক জেলা থেকে আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের শারিরীকভাবে হেনস্থা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে । এবারে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে তালিকা থেকে বাদ যাওয়া মানুষের রোষের মুখে পড়লেন এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও একজন আশাকর্মী । দুই মহিলাকে স্কুলঘরে আটকে রেখে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ । মঙ্গলবার এই ঘটনাটি ঘটেছে ভাতার থানার সেরুয়া গ্রামে। খবর পেয়ে ভাতার থানা থেকে পুলিশবাহিনী গিয়ে ক্ষিপ্ত জনতাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা পর দুই মহিলাকর্মীকে উদ্ধার করে । যদিও এদিন দুপুর পর্যন্ত এনিয়ে থানায় নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানা গেছে ।
জানা গেছে,আক্রান্ত দুই মহিলাকর্মী হলেন ভাতারের বামুনাড়া পঞ্চায়েতের সেরুয়া গ্রামের ২৯৫ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী মাধবী গড়াই ও একই এলাকার আশাকর্মী অর্চনা মালিক । ওই দুই কর্মীর উপর এলাকায় আবাস যোজনার সার্ভের দায়িত্ব বর্তেছে । মাধবীদেবীর অভিযোগ,’এদিন সকাল প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ আমি নিজের কেন্দ্রেই ছিলাম । সেই সময় কিছু লোকজন আমার কেন্দ্রে এসে আবাস যোজনার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে স্কুলের ঘরে আমায় আটকে রেখে মারধর করে । আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে আমরা শুধু সার্ভে করেছি,তালিকা থেকে কারোর নাম বাদ দেওয়ায় আমাদের কোনো হাত নেই । কিন্তু আগত লোকজন আমার কোনো কথাতেই কর্নপাত করেনি ।’ আশাকর্মী অর্চনা মালিকের অভিযোগ, ‘আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এসে চড়থাপ্পর মেরে স্কুল ঘরে আটকে রেখে দেয় । বিনা অপরাধে আমাদের হেনস্থা করা হল ।’
যদিও তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় ওই দুই মহিলা কর্মীকেই দায়ি করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসী পিযুষ মণ্ডল,শ্যামল ঘোষরা । তাঁদের দাবি,’প্রথমে ৩২৪ জনের নাম ছিল তালিকায় । কিন্তু সার্ভের পর প্রায় দেড়শো জনের নাম বাদ চলে গেছে । বাদ যাওয়ার তালিকায় অনেক যোগ্য ব্যক্তিও রয়েছেন । ওই সমস্ত ব্যক্তিদের মাটির বাড়ি,দরিদ্র পরিবার ।’
প্রসঙ্গত,আবাস যোজনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের শারিরীকভাবে হেনস্থা হওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয় । রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে । আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সার্ভের কাজে লাগানোয় রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের ইতিমধ্যেই বিরোধিতা করেছে রাজ্য বিজেপি । সোমবার ভাতারে এসে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী কটাক্ষ করেন, আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ফায়ার করছে রাজ্য সরকার । তিনি দলীয়ভাবে ওই সমস্ত কর্মীদের পাশে থাকার বার্তাও দিয়ে গেছেন ।।