শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারি(পূর্ব বর্ধমান),০৪ নভেম্বর : সরকারি আবাস যোজনার সার্ভের কাজের দায়িত্ব অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের উপর দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার । কিন্তু তাদের সার্ভের পর চুড়ান্ত তালিকায় দেখা গেছে অনেক পাকাবাড়ির মালিক বিত্তবান ব্যক্তিরা আবাস যোজনার অনুদান পেলেও প্রকৃত দাবিদারদের বঞ্চিত করা হয়েছে । এক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে পিছন থেকে ‘কলকাঠি নাড়ার’ অভিযোগ উঠছে বহুদিন থেকে । এদিকে ঘর না পেয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের । ফলে তারা ‘বলির পাঁঠা’ হচ্ছেন বলে অভিযোগ । ফের এমনই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি-২ ব্লকের বোহার-২ অঞ্চলের অন্তর্গত বোহার হাটতলায় । আবাস যোজনার তালিকায় নাম না ওঠায় আজ সোমবার বোহার হাটতলার ১৯৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের ঘরে আটকে রেখে তুমুল বিক্ষোভ দেখালো বেশ কিছু গ্রামবাসী । অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ডলি সিংহরায় ও সহায়িকা মৌসুমী নাথ চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন । পরে সাতগেছিয়া পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে ক্ষিপ্ত জনতাকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ।
জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বোহার গ্রামের আবাস যোজনার সার্ভের দায়িত্ব বর্তেছিল ১৯৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ডলি সিংহরায়ের উপর । তিনি যথারীতি নিজের কাজ করার পর তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জমা দেন । কিন্তু আবাস যোজনার সম্ভাব্য অনুদান প্রাপকদের নামের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় যে পাকা বাড়ির মালিকের নাম থাকলেও মাটির বাড়িতে বসবাসকারী অনেক গ্রামবাসীর নাম নেই । যদিও ওয়াজ ডলি সিংহ রায় বলেছেন,কোন গরিব মানুষকে বঞ্চিত করার কথা আমি চিন্তাই করতে পারি না । আমি সৎভাবে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি ।’ যদিও তিনি কিভাবে পাকা বাড়ির মালিকের নাম সরকারি আবাস যোজনা তালিকায় উঠলো সেবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ।
এদিকে বিক্ষোভকারী মাজাহারি সর্দার,দিপালী রায়, নমিতা রায়দের অভিযোগ যে ডলি সিংহ রায় তাদের নাম কেটে দিয়ে পাকা বাড়ির মালিকদের নাম ঢুকিয়েছে । তারা মাটির বাড়িতে থাকেন এবং তাদের বাড়ির সার্ভেও হয়েছিল কিন্তু তাদের আবাস যোজনা অনুদান দেওয়া হয়নি । যদিও গ্রামবাসীদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডলিদেবী ।
আজকের এই বিক্ষোভ প্রসঙ্গে মেমারি-২ বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্যের মতামত চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এবারে আমাদের বাংলা আবাস যোজনার যে সার্ভে হচ্ছে সেগুলো আমাদের ব্লকের স্টাফ দিয়ে করানো হচ্ছে । আগের লিস্টে যদি অযোগ্য ব্যক্তির নাম থাকে সেগুলো বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে এবং যারা যোগ্য ব্যক্তি তারা অবশ্যই ঘর পাচ্ছে । এবারের সার্ভেতে আমরা অঙ্গনওয়াড়ি বা আশা কর্মীদের লাগাইনি পুরোপুরি সরকারের লোকেদের দ্বারা কাজটা করানো হচ্ছে ।’ কিন্তু গত অর্থ বছরের তালিকায় অযোগ্য ব্যক্তিদের নাম কিভাবে ঢুকলো সেই সম্পর্ক তিনি কোন মন্তব্য করেননি ।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আবাস যোজনার অনুদান পাওয়া না পাওয়া নিয়ে গ্রামাঞ্চলে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল । পূর্ব বর্ধমান জেলার একাধিক ব্লকে পাকা বাড়ির মালিকদের আবাস যোজনার অনুদান পাইয়ে দেওয়ার ভুরি ভুরি অভিযোগ ওঠে । আর এর পিছনে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ । কিন্তু বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় শুধু অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মীদের । এ কারণে অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মীরা আর সার্ভের কাজ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন । আবাস যোজনার সার্ভের কাজ থেকে অব্যাহতির দাবিতে তারা বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন ।।