এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেল আবিব,১৩ অক্টোবর : আজ শুক্রবার ফিলিস্থিনি সন্ত্রাসী সংগঠন ‘হামাস’ ও ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স(আইডিএফ)-এর মধ্যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে । একদিকে ফিলিস্থিনিদের গাজা উপত্যকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ২৪ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ইসরায়েল । এনিয়ে বিমান থেকে উপত্যকায় লিফলেটও ছড়ানো হয়েছে । অন্যদিকে ইসরায়েলে হামলা করার জন্য লেবাননের কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘হিজবুল্লাহ’ ইসরায়েলের দিকে আনুমানিক ৫০,০০০ রকেট তাক করে রেখেছে । এছাড়া কট্টর মৌলবাদী রাষ্ট্র জর্ডন ইসরায়েল সীমান্তের কাছে সেনা ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে রেখেছে । পাশাপাশি ইরান হুমকি দিয়েছে যে আজ ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালালে ইসলামি রাষ্ট্রগুলির মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি মিলিত ভাবে ইসরায়েলের উপর হামলা চালাবে । এত কিছুর সত্ত্বেও চুড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে ইসরায়েল । গাজা উপত্যকাকে তিন দিক থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে,যাতে হামাস সন্ত্রাসীরা কোনো ভাবেই পালাতে না পারে । কেবল খুলে রাখা হয়েছে মিশরের দিকে রাস্তাটি । ইসরায়েলের লাখ খানেক সেনা গাজায় অভিযান চালানোর জন্য নির্দেশের প্রতীক্ষায় আছে ।
বসে নেই আমেরিকাও । সন্ত্রাসী সংগঠন হামাস-এর নৃশংস হামলার পর ইসরায়েলকে সমর্থন দিতে ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড সহ একদল যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে ইসরায়েলের উপকুলে । মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন রবিবার ঘোষণা করেছেন যে বিমানবাহী রণতরীকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অ্যালার্ট মোডে রাখা হয়েছে । যাতে রয়েছে নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র ক্রুজার USS Normandy এবং চারটি নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী (USS Thomas Hudner, Ramage, Carney and Roosevelt) ।
অস্টিন এক বিবৃতিতে বলেছেন,’আমাদের যৌথ বাহিনীর অবস্থানকে শক্তিশালী করা, আমরা ইসরায়েলকে দ্রুত যে সহায়তা প্রদান করব তা ছাড়াও, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং ইসরায়েলি জনগণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে । আমার দল এবং আমি আমাদের ইসরায়েলি সমকক্ষদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অব্যাহত রাখব যাতে জঘন্য সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে তাদের নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য ।’ তিনি আরও বলেন,’প্রয়োজনে এই প্রতিরোধ ভঙ্গি আরও শক্তিশালী করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী বাহিনী প্রস্তুত রাখবে । এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার দ্রুত ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র সহ অতিরিক্ত সরঞ্জাম এবং সংস্থান সরবরাহ করবে ।’
স্ট্রাইক গ্রুপ মঙ্গলবার বিকেলে ইসরায়েলের কাছে ভূমধ্যসাগর উপকুলে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন । ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করেছে যে আরেকটি ইউএসএস ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে এই অঞ্চলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড নৌবাহিনীর নতুন এবং সবচেয়ে উন্নত বিমানবাহী রণতরী।
২০১৭ সালে কমিশন করা, জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেরাল্ড ফোর্ডের নামে, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নৌবাহিনীতে কাজ করেছিল জাহাজটি । ১,১০০ ফুটেরও বেশি লম্বা, ২৫৫ ফুট চওড়া এবং ২৫০ ফুট উঁচু, প্রায় বিলিয়ন ডলারে নির্মিত জাহাজটি এখন পর্যন্ত নির্মিত বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজ ।
পাঁচ একরের ফ্লাইট ডেক F-35 ফাইটার জেট সহ ৯০টি বিমান বহন করতে পারে, ক্যারিয়ারের আকার এটি F-35s, F/A-18 সুপার হর্নেটস, E-2D অ্যাডভান্সড হকিস সহ ৯০ টি বিমানকে এক সাথে রাখা যায় । EA-18G Growlers, SH-60/MH-60 Seahawk হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য বায়বীয় অস্ত্র রয়েছে জাহাজে । এটি কম সময়ে আকাশে আরও ফাইটার প্লেন পেতে এবং এর এয়ার উইংয়ে মনুষ্যবিহীন বিমানকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস । জাহাজটি দুটি অত্যাধুনিক পারমাণবিক চুল্লি দ্বারা চালিত এবং প্রতি ঘন্টায় ৩৪ মাইলেরও বেশি গতিতে পৌঁছাতে পারে।
জাহাজটিতে প্রায় ৪,৫০০ ক্রু সদস্য সহ নৌসেনা রয়েছে । মূলত যেকোনও ইরানি আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্য বায়ু-থেকে-আকাশ এবং আকাশ-থেকে-ভূমির ক্ষমতা সম্পন্ন এই রনতরী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা ।
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিলা ইরানের নাম না নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন যে এই অঞ্চলে অত্যন্ত সক্ষম বাহিনীর আগমন প্রতিরোধের একটি শক্তিশালী সংকেত, যদি ইসরায়েলের প্রতি শত্রুতাকারী কোনও রাষ্ট্র পরিস্থিতির সুবিধা নিয়ে হামলা চালানোর কথা বিবেচনা করে তা মাথায় রেখেই আগাম এই সতর্কতা নেওয়া হয়েছে ।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন মুখপাত্র সোমবার বলেছেন,’যদি আপনি মনে করেন যে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার এবং অন্যান্য ফ্রন্ট থেকে ইসরায়েলকে আক্রমণ করার এটাই উপযুক্ত সময়, তাহলে বলবো আর একবার ভাবুন। এটি আমেরিকান বার্তা, এবং এটি এমন একটি বার্তা যা আমরা সম্পূর্ণরূপে অনুমোদন করি ।’
অন্যদিকে ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদুল্লাহিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন,’যদি জায়নবাদী সত্তার দ্বারা সংঘটিত এই সংগঠিত যুদ্ধাপরাধগুলি অবিলম্বে বন্ধ না হয়, তবে আমরা যে কোনও সম্ভাবনা কল্পনা করতে পারি ।’ তবে তিনি এর বেশি কিছু খোলসা করেননি । তবে এটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল যে ইরান-সমর্থিত গ্রুপগুলি যুদ্ধে যোগ দিতে পারে । আমিরাবদুল্লাহিয়ান তার লেবাননের প্রতিপক্ষের সাথে বৈঠক এবং হিজবুল্লাহ সন্ত্রাসী নেতা হাসান নাসরুল্লাহর সাথে আলোচনার পর বৈরুতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।।