দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৪ সেপ্টেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ায় মারকুটে ষাঁড় ‘ডন’-এর হামলায় প্রাণ হারালেন এক বৃদ্ধ গোপালক । মৃতের নাম রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (৬৪) । তাঁর বাড়ি কাটোয়া থানার মোস্তাপুর গ্রামে । সোমবার সন্ধ্যা ষাঁড়টির গুঁতোয় গুরুতর আহত হন রবীন্দ্রনাথবাবু । তাঁকে উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন ৷ মৃত বৃদ্ধের বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী সরস্বতীদেবী । একমাত্র ছেলে ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন । জনমজুরির পাশাপাশি গোপালন করে দু’জনের সংসার চালাতেন রবীন্দ্রনাথবাবু । তাঁর মৃত্যুতে কার্যত অসহায় হয়ে পড়লেন বৃদ্ধা সরস্বতীদেবী ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর পাঁচেক আগে এলাকায় হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে কালচে খয়েরি রঙের গোলগাল চেহারার ওই ষাঁড়টির । মোস্তাপুর, রায়পাড়াসহ দুতিনটে গ্রামে সে নিজের মন মর্জি মত ঘুরে বেড়াতো । গ্রামবাসীরা খেতে দিলে খেত, না দিলে মাঠে চড়ে পেট ভরাতো । প্রথম দিকে শান্তশিষ্ট হয়েই গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াত ষাঁড়টি । কিন্তু বছর দুয়েক আগে তার স্বভাবের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় । হঠাৎ করে খুব উগ্র স্বভাবের হয়ে ওঠে ষাঁড়টি । তার হামলায় মোস্তাপুর গ্রামের প্রায় দু’ডজন মানুষ আহত হয়েছিলেন । সেই কারনে গ্রামবাসীর সর্বদা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন । উগ্র স্বভাবের জন্য গ্রামের ছেলে ছোকরারা ষাঁড়টি ‘ডন’ নাম রাখে । তারপর থেকেই এলাকায় ওই নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে ষাঁড়টি ।
জানা যায়,ডনের আক্রমনাত্মক রূপ দেখে গ্রামবাসীরা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বনদপ্তরের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন । কিন্তু গরু গৃহপালিত পশু বলে বনদপ্তর বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি । তখন গ্রামবাসীরা তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিল । কিন্তু ষাঁড়টিকে এলাকা ছাড়া করা যায়নি । এদিকে পরবর্তীকালে তার মধ্যে মারকুটে স্বভাবও কেটে যায় । তাই ষাঁড়টিকে গ্রামছাড়া করার বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখাতেন না গ্রামবাসীরা । কিন্তু ইদানিং ষাঁড়টি ফের উগ্র স্বভাবের হয়ে উঠেছিল বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা ।
জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার দিকে রবীন্দ্রনাথবাবু তাঁদের গাভীটিকে নিয়ে গোয়ালে ঢোকাতে যাচ্ছিলেন । তখন আশপাশে চড়ছিল ষাঁড়টি । সেসময় আচমকা সে রবীন্দ্রনাথবাবুকে গুঁতিয়ে দেয় । ফলে তিনি গুরুতর জখম হন । তাঁকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । ষাঁড়টি ফের পুরানো স্বভাবে ফিরে আসায়
গ্রামে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে । স্থানীয়দের দাবি ঘাতক ষাঁড়টিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করুক প্রশাসন ।।