এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ ডিসেম্বর : গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে নিরামিষ বলে মুরগির প্যাটিস বিক্রি করা হকারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিরাজ বিশ্বাস । শেখ রেয়াজুল নামে ওই হকারের বিরুদ্ধে “গীতাপাঠে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে ব্রিগেড চত্বরে আমিষ বিক্রি করে পবিত্রতা লঙ্ঘনের” অভিযোগে কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজারে বুধবার(১০ ডিসেম্বর ২০২৫) তিনি এই এফআইআর দায়ের করেছেন । যে হকারের পক্ষে আসরে নেমে “ভিকটিম কার্ড” খেলতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলপন্থী মিডিয়া ও বামপন্থীদের । বিশেষ করে এই বিষয়ে বামপন্থীদের প্রচেষ্টা একটু বেশিই লক্ষ্য করা যায় ।
আইনজীবী বিরাজ বিশ্বাস এফআইআর-এর কপিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে লিখেছেন,’গত ৭ তারিখ কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে ঐতিহাসিক গীতাপাঠে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে ব্রিগেড চত্বরে আমিষ বিক্রি করায় শেখ রেয়াজুলের বিরুদ্ধে আজ লালবাজার, কলকাতা পুলিশ সদর দপ্তর অভিযোগ দায়ের করলাম। সেদিন, গীতা পাঠ উপলক্ষ্যে ব্রিগেড ময়দানে লক্ষ লক্ষ বৈষ্ণব হাজির হয়েছিলেন। আমিষ চিকেন প্যাটিস বিক্রি ওই স্থলে বিক্রি লক্ষ লক্ষ হিন্দু ভক্তর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে এবং গীতাপাঠের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে। তাই, এর পেছনে কোনো চক্রান্ত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য শেখ রিয়াজুলকে তদন্তের আওতায় এনে তাকে দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানাচ্ছি।’
আইনজীবী বিরাজ বিশ্বাস তার এফআইআর-এ জানিয়েছেন,ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে একটি বিশাল গীতা পাঠ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে প্রায় পাঁচ লক্ষ হিন্দু ভক্ত উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে অসংখ্য বৈষ্ণব সাধুও ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটি ছিল একটি সম্পূর্ণ এবং কঠোর ধর্মীয় সমাবেশ, যা কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক পাঠ এবং ভক্তির জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি কোনও ধর্মনিরপেক্ষ বা বাণিজ্যিক জনসমাবেশ ছিল না যেখানে কোনও ধরণের খাবারের স্টল বা মিশ্র খাবার বিক্রি করা যেতে পারে। সকল অংশগ্রহণকারীই সম্পূর্ণরূপে সচেতন ছিলেন যে কেবলমাত্র বৈষ্ণব রীতিনীতি মেনে চলা নিরামিষ খাবারই প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকতে পারে।
দুপুর ১২:৪০ নাগাদ, অভিযুক্ত শেখ রেজাউলকে প্যাটি বিক্রি করতে দেখা যায়, যেগুলোকে সে মিথ্যাভাবে “নিরামিষ প্যাটি” হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। ভক্তরা, আমি সহ, এই অনুষ্ঠানের ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলার বিশ্বাসে এই জিনিসগুলি কিনেছিলাম। পরে জানা যায় যে প্যাটিগুলিতে আসলে মুরগি ছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে ছদ্মবেশে এবং একটি পবিত্র হিন্দু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সন্দেহাতীত ভক্তদের প্রতারণা করার জন্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
এই কাজটি ইচ্ছাকৃত, পরিকল্পিত এবং বিদ্বেষপূর্ণ ছিল, স্পষ্টভাবে জেনেও যে অনুষ্ঠানটি একটি বৈষ্ণব ধর্মীয় সমাবেশ ছিল যেখানে আমিষ খাবার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তার এই আচরণ ইচ্ছাকৃত প্রতারণা এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনুসারীদের ধর্মীয় অনুভূতির উপর সরাসরি আক্রমণের শামিল। অনেক ভক্ত যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে তারা অজান্তেই কঠোরভাবে ভক্তিমূলক পরিবেশে নিষিদ্ধ খাবার খেয়েছেন, তখন তারা মানসিক আঘাত, যন্ত্রণা এবং আধ্যাত্মিক লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন।
ঘটনাটি অসংখ্য অংশগ্রহণকারী ভিডিওতে ধারণ করেছিলেন। এই ভিডিওগুলি তখন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে, যা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। একাধিক প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হাউস ঘটনাটি রিপোর্ট করেছে এবং মুখ এবং নাম দিয়ে অভিযুক্তকে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করেছে। এই মিডিয়া রিপোর্ট এবং প্রচারিত ভিডিওগুলিতে, তাকে ধারাবাহিকভাবে শেখ রেজাউল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার ফলে তাকে সম্পূর্ণরূপে চেনা যায় এবং সহজেই সনাক্ত করা যায়। প্রয়োজনে, আমি এমন ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করতে প্রস্তুত যা স্পষ্টভাবে তাকে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি এবং ভুলভাবে উপস্থাপন করার চিত্র তুলে ধরে।
এই দৃশ্যগুলির দ্রুত বিস্তার জনসাধারণের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করেছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হওয়ার প্রকৃত ঝুঁকি বহন করে, বিশেষ করে উপস্থিত ভক্তদের সংখ্যা এবং অনুষ্ঠানের পবিত্রতা বিবেচনা করে। অভিযুক্তের আচরণ কেবল একটি পবিত্র হিন্দু অনুষ্ঠানকে অপবিত্র করেনি বরং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যা জরুরি ব্যবস্থা না নিলে ব্যাপক অস্থিরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
উপরোক্ত বিষয়গুলির পরিপ্রেক্ষিতে, আমি আপনার নিকট বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যে আপনি অবিলম্বে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করুন, অভিযুক্তের ব্যবহৃত অবশিষ্ট সমস্ত উপকরণ বাজেয়াপ্ত করুন, সমস্ত ভিডিও প্রমাণ পরীক্ষা করুন, ভুলভাবে উপস্থাপন করা খাদ্যদ্রব্যের উৎস খুঁজে বের করুন এবং অভিযুক্তকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রেপ্তার করুন যাতে সে পলাতক না হয় বা প্রমাণ নষ্ট না করে। তদন্তের সময় প্রয়োজনীয় আরও তথ্য, নথিপত্র বা প্রমাণ সরবরাহ করতে আমি প্রস্তুত। ধর্মীয় মর্যাদা বজায় রাখার জন্য এবং জনসাধারণের শান্তি রক্ষার জন্য সরল বিশ্বাসে এই অভিযোগ করা হয়েছে ।
এখন দেখার বিষয় যে এই এফআইআর -এর ভিত্তিতে পুলিশ কি ব্যবস্থা নেয় । কারন আমিষ প্যাটিস বিক্রি করায় যারা প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের অতি সক্রিয়তা দেখা গিয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে ।।

