দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৬ এপ্রিল : প্রতিবেশী কিশোরের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন গৃহবধু । কিছুদিন পর থেকেই কিশোর প্রেমিককে তিনি টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন । গত মাসের শেষের দিকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয় ওই কিশোর । কিশোরের লেখা সুইসাইড নোট ও স্মার্টফোনে গৃহবধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবি দেখে মৃত্যুর কারন বুঝতে পারে কিশোরের পরিবার । পরিবারের তরফ থেকে গৃহবধুর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয় থানায় । শেষে অভিযোগের ভিত্তিতে গৃহবধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার ভাটাকুল গ্রামের ঘটনা । পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত মহিলার নাম কাকলি দাস(৩১) । মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় । বুধবার তাঁকে বর্ধমান আদালতে পাঠানো হয় ।
জানা গেছে, নিহত কিশোরের নাম বিনোদ দাস ওরফে রাহুল । তার বাবা অনেক দিন আগে মারা গেছেন । বাড়িতে আছেন বিধবা মা জোৎস্নাদেবী ।জোৎস্নাদেবী জনমজুরের কাজ করেন । রাহুল তাঁর একমাত্র সন্তান । অন্যদিকে রাহুলদের বাড়ির পাশেই শ্বশুরবাড়ি কাকলি দাসের । তাঁর স্বামী শ্রমিকের কাজ করেন । তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে । ওই গৃহবধু বেশ কিছুদিন ধরে ১৭ বছর ৮ মাস বয়সী প্রতিবেশী কিশোরের রাহুলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন । একথা ঘূনাক্ষরেও কেউ টের পায়নি । মহিলার কিশোর প্রেমীক আত্মঘাতী হওয়ার পরেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ।
জানা গেছে,গত ২৯ মার্চ ভাটাকুল গ্রামের পাশে মাঠে ছাতারপুকুর পাড়ে একটি শিশুগাছের ডালে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে রাহুল । কিন্তু সে ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়ার প্রায় সাথে সাথেই পরিবারের লোকজন দড়ি কেটে তাকে গাছ থেকে নামিয়ে তড়িঘড়ি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে । কিন্তু দুদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় । ছেলের মৃত্যুর পরে জোৎস্নাদেবী পোশাক কাচার সময় প্যান্টের পকেট থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেন । বিনোদের হাতে লেখা চিঠিতে ওই গৃহবধূর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা লেখা আছে । আত্মঘাতী কিশোর চিঠিতে উল্লেখ করেছে,চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে সে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। চিঠি পাশাপাশি রাহুলের স্মার্টফোনে মহিলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের কিছু ছবি দেখতে পায় তার পরিবারের লোকজন । এরপর সেগুলি ভাতার থানার পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে প্রতিবেশী গৃহবধু কাকলি দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন জোৎস্নাদেবী । আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
মৃত কিশোরের মামা উত্তম দাসের অভিযোগ,’দিদির পাশের বাড়ির ওই বধূর সঙ্গে ভাগনার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । ওই মহিলা আমার ভাগনাকে ব্লাকমেইল করছিল । টাকার জন্য লাগাতার চাপ দিচ্ছিল । তার ফলে ভাগনা মানসিক দুঃচিন্তার মধ্যে ছিল । শেষে কোনও উপায় দেখতে না পেয়ে মারাত্মক এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে ।’ অভিযুক্ত মহিলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে মৃত কিশোরের পরিবার ও পরিজন ।।