জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,উত্তর ২৪ পরগণা,২৬ সেপ্টেম্বর :আর মাত্র কয়েকদিন। তারপর সমস্ত বাঙালি মেতে উঠবে তাদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয়। কিন্তু স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পর আজও ওরা অবহেলিত থেকে গ্যাছে। পুজোর সময় একদল মানুষ যখন রঙিন পোশাক পরিধান করে রঙিন আনন্দে মেতে উঠবে ওরা তখন দূর থেকে কেবল দর্শক হিসাবে সেগুলো উপভোগ করবে। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে কাপড়ের দোকানের দিকে। নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার ক্ষমতা ওদের মা-বাবার নাই। উত্তর চব্বিশ পরগণার ভিলপাড়া, সন্তোষপুর, দত্তপুকুরের আদিবাসী পাড়া হলো এরকমই একটি অবহেলিত পাড়া।
এখানকার বাসিন্দারা সাঁওতাল পরিবারের। এরা মূলত দিন মজুর। কেউ বা ইঁট ভাটায় কাজ করে। আর্থিক দিক দিয়ে পেছিয়ে থাকার কারণে ইচ্ছে থাকলেও ছেলেমেয়েদের জন্য কিনে দিতে পারেনা নতুন পোশাক। উৎসব ওদের কাছে মানসিক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়ায়। ওরাও যাতে পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারে তার জন্য ওদের পাশে এসে দাঁড়ায় ‘আমরা মানবিক’। সংস্হার সদস্যদের অনেকের এখনো পড়াশোনার পাট চোকেনি। তার মধ্যেও সময় বার করে ওরা অসহায় মানুষের পাশে থাকে। সম্বল সহৃদয় মানুষের সাহায্য এবং ওদের আন্তরিকতা।
অন্য সময় ব্যবহারযোগ্য পুরনো পোশাক তুলে দিলেও এবার দুর্গাপুজোর সময় অসহায় ছেলে মেয়েদের জন্য ছিল নতুন পোশাক। গত কয়েকদিন ধরে ‘আমরা মানবিক’-এর সদস্যরা আদিবাসী পাড়ায় ঘুরে ঘুরে প্রাপকদের তালিকা তৈরি করে। তারপর ‘আমরা মানবিক’ পৌঁছে যায় গোপালপুরের কাঞ্চন-১ ইঁটভাটায়। সেখানে প্রায় ত্রিশ জন শিশুর হাতে এবং সোদপুরের ‘হোপ ফাউন্ডেশন’-এর সহযোগিতায় বালিশা ইঁটভাটায় প্রায় কুড়ি জন শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন পোশাক। সঙ্গে চারটি পরিবার পায় মাসিক র্যাশন। ব্যারাকপুর ‘প্রত্যয়’-এর সহযোগিতায় ‘মানবিক পাঠশালা’-র প্রায় পঞ্চান্ন জন শিশু পায় নতুন পোশাক। ‘ইচ্ছেডানা’-র সহযোগিতায় ময়না ও কাঞ্চন-২ ইঁটভাটায় বেশ কিছু শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন পোশাক। আপাতত সব মিলিয়ে দুই শতাধিক শিশুর হাতে ওরা নতুন পোশাক তুলে দিতে পেরেছে। যেভাবে মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে তাতে ওদের আশা পুজোর আগে আরও কিছু শিশুর হাতে ওরা নতুন পোশাক তুলে দিতে পারবে।
প্রতিবারের মত পোশাক বিতরণের সময় ‘আমরা মানবিক’-এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিল প্রায় সমস্ত সদস্যরা । সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্হা ও সহৃদয় মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সদ্য কলেজে পা রাখা ‘আমরা মানবিক’-এর অন্যতম কনিষ্ঠা সদস্য অদিতি গাইন বলল- আন্তরিকতা আমাদের বড় সম্বল। সেটাই পাথেয় করে এগিয়ে চলেছি। দরকার একটু আর্থিক সাহায্য। তাহলে আমরা আরও বেশ কিছু অসহায় ছেলেমেয়েদের হাতে পুজোর আগেই নতুন পোশাক তুলে দিতে পারব। আশা করি সহৃদয় ব্যক্তিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। সে আরও বলে – দিনের শেষে ওদের মুখের খুশির হাসিটুকু আমাদের প্রাপ্তি, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।।