প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ আগষ্ট : বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় অভাবনীয় জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।তৃতীয় বারের জন্য বাংলায় সরকার গঠন করার পর এখন তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য ’ত্রিপুরা’ জয়।দলের এমন সাফল্যের মাঝেও ’র্যঙ্ক ডিমোশন’ হল তৃণমূলের পার্টি অফিসের।শুধু ’র্যঙ্ক ডিমোশন-ই ’ নয় ,বদল ঘটেছে পার্টি অফিসের কর্তৃত্বকরীদেরও।বিধানসভা ভোটের আগে যা ছিল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ’ব্লক’ তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় ভোটের পর তার ’র্যাঙ্ক ডিমোশন’ হয়ে হয়েছে জামালপুর “২“ তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়।অর্থাৎ জামালপুর ২ অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সৌজন্যেই ’ব্লক’ তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের এই ’র্যাঙ্ক ডিমোশন’ বলে দাবি করেছেন ব্লকের একাংশ তৃণমূল নেতৃত্ব ।
বাম আমলে জামালপুর তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক পার্টি অফিস বলে কিছু তেমন ছিল না । বর্তমান ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন পুলমাথা সংলগ্ন এলাকায় থাকা তাঁর বস্ত্র প্রতিষ্ঠানে বসেই তখন দলের কাজকর্ম চালাতেন । ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের অন্যন বিধানসভার পাশাপাশি জামালপুর বিধানসভাতেও ’ঘাসফুল’ ফোটে । বিধায়ক নির্বাচিত হন উজ্জ্বল প্রামাণিক। এরপর ২০১৪ সালে জামালপুর বাস স্ট্যান্ডের গায়ে থাকা জায়গায় গড়ে তোলা হয় দ্বিতল তৃণমূলের একটি পার্টি অফিস। তখন থেকেই ওই পার্টি অফিসের দেওয়ালে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল ’জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়’।বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক সহ ব্লক তৃণমূলের তদানিন্তন সভাপতি অরবিন্দ ভট্টাচার্য ও বিধায়ক ঘনিষ্ট অন্য তৃণমূলের নেতা, কর্মীরা সেখানে বসেই দলের কাজকর্ম চালাতেন । অন্যদিকে একই সময়কালের মধ্যে পুলমাথা সংলগ্ন এলাকায় দলের নামে থাকা জমিতে পার্টি অফিস গড়ে ফেলেন তৃণমূল নেতা মেহেমুদ খাঁন ।সেখানে বসেই আজও তিনি দলের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
উজ্জ্বল প্রামাণিক বিধায়ক হওয়ার কয়েক বছর পর থেকে তাঁর সঙ্গে মেহেমুদ খাঁনের সম্পর্কে টানাপড়েন শুর হয় । সময় গড়ানোর সাথে সাথে দন্দও বাড়ে । যার পরিণামে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে জামালপুর বিধানসভা আসনে লড়ে পরাজিত হন উজ্জ্বল বাবু । জয়ী হন বাম প্রার্থী সমর হাজরা ।এরপর ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে
দল অরবিন্দ ভট্টাচার্যকে সরিয়ে জামালপুর নিবাসী জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি শ্রীমন্ত রায়কে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি করে।দল এবার উজ্জ্বল প্রামাণিক কে আর জামালপুর বিধানসভার প্রার্থী করে নি ।পরিবর্তে গলসির বিধায়ক অলোক মাঝিকে জামালপুর বিধানসভার প্রার্থী করে দল । তার পরেই শ্রীমন্ত রায়কে ব্লক তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে দল মেহেমুদ খাঁন কে সভাপতি করেদেয়। মেহেমুদ খাঁনের সাংগঠনিক শক্তিতে ভর করে অলোক মাঝি বিধায়ক নির্বাচিত হন।এর কিছুদিন পরেই ’র্যাঙ্ক ডিমোশন’ ঘটে যায় উজ্জ্বল প্রামাণিকের সাধের ’জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের’।ওই কার্যালয়ের দেওয়ালে লেখা থাকা “ব্লক“ শব্দটি মুছে দিয়ে সেখানে “২” লিখে দেওয়া হয়েছে । অর্থাৎ ’ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় ’এখন ’জামালপুর ২ অঞ্চল তৃণমূলে কার্যালয়ের’ রুপ পেয়েছে ।পাশাপাশি বদল ঘটেছে ওই তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের কর্তৃত্বকারীর।
এই বিষয়ে ব্লক তৃণমূলের পূর্বতন সভাপতি শ্রীমন্ত রায় কারুর নাম মুখে না এনে বলেন,ভোটের ফল বের হওয়ার কয়েকদিন পর দলেরই একাংশ তাঁদের পার্টি অফিসের দখল নিয়েছে । অন্যদিকে জামালপুরের শুড়েকালনা নিবাসী জেলা তৃণমূল নেতা প্রদীপ পাল এই ঘটনার জন্য সরাসরি ব্লক তৃণমূলের বর্তমান সভাপতি মেহেমুদ খাঁন ও যুব সভাপতি ভূতনাথ মালিক কে দায়ী করেছেন ।তিনি অভিযোগ করেছেন , ‘বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষনার পর মেহেমূদ খাঁন ও ভূতনাথ মালিক দলবল নিয়ে তাঁদের জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের দখল নেয়। তারপর দেওয়ালের লেখা মুছে দিয়ে ’জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালটিকে’ জামালপুর ২ অঞ্চল অফিসে পরিণত করা হয়েছে’। প্রদীপ পাল বলেন ,’ঘটনা সবিস্তার লিখে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী সহ জেলা ও রাজ্য তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন।দল এই বিষয়ে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে ’। যদিও জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন ও যুব সভাপতি ভূতনাথ মালিক দাবি করেছেন , উদ্দেশ্য প্রণদিত ভাবে তাঁদের নামে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে । ওই পার্টি অফিসে তাঁরা যানও না । ওখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেই বিষয়ে তাঁরা ওয়াকিবহালও নন । তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু বলেন ,’কি ঘটনা ঘটেছে তা জানা নেই । খোঁজ খবর নিয়ে জেনে তার পর মন্তব্য করব।’।