এমনিতেই গান্ধী-নেহেরু পরিবারকে নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে । প্রথম বিতর্ক হল মোহনদাস করমচাঁদের গান্ধী পদবি ব্যবহার নিয়ে ৷ মাঝেমধ্যেই বিজেপি অভিযোগ তোলে যে এই গান্ধী পদবিটি আদপে চুরি করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা ও তার পরিবার ! এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারের সবচেয়ে বিতর্কিত চরিত্র হলেন সোনিয়া গান্ধী,জন্মসূত্রে একজন ইতালিয় । ইন্দিরা পুত্র রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে যার নাম ছিল ‘আন্তোনিয়া আলবিনা মাইনো’ (Antonia Albina Maino)। যার অতীত জীবন ছিল বিতর্কে ভরা । এই প্রতিবেদনে আন্তোনিয়া আলবিনা মাইনো থেকে সোনিয়া গান্ধীতে উত্তরণের ইতিহাস তুলে ধরা হল ।
আসলে,ব্রিটেন বাসের সময় আন্তোনিও মাইনোর প্রেমে পড়ে যান ইন্দিরা গান্ধীর জ্যেষ্ঠপুত্র রাজীব । যখন ইন্দিরা গান্ধীকে বলা হয়েছিল যে তার প্রিয় ছেলে আন্তোনিও মাইনোর প্রেমে পড়েছেন,যে কিনা কেমব্রিজের একটি রেস্তোরাঁ-কাম-বারে ওয়েটার হিসাবে কাজ করে । তখন ইন্দিরা গান্ধী রাজীব গান্ধীকে বোঝানোর জন্য অনেক লোককে কাজে লাগান। অধ্যাপক সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও তখন কেমব্রিজে ছিলেন এবং সেই সময় কেমব্রিজে অধ্যয়নরত বেনজির ভুট্টোও সেখানে ছিলেন। বেনজির ভুট্টো এবং ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে মা-মেয়ের মতো সম্পর্ক ছিল । কারণ ইন্দিরা গান্ধীর জীবনী নিয়ে লেখা বই যেটি তার বন্ধু পুপুল জয়কার লিখেছেন, তাতে তিনি লিখেছেন, ইন্দিরা গান্ধী বেনজির ভুট্টোর প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।
সবাই রাজীব গান্ধীকে জাতপাত, প্রতিপত্তি ইত্যাদির কথা বলে অনেক বুঝিয়েছিল । কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । কারন তখন মাইনোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন রাজীব । তারপর যখন ইন্দিরা গান্ধীও জানতে পারলেন যে এই আন্তোনিও মাইনোর বাবা একজন ইতালীয় অপরাধী যিনি একবার মুসোলিনীর ফ্যাসিবাদী সংগঠনে ছিলেন এবং একবার বা দুবার নয় বরং ২৬ বার জেলে গিয়েছিলেন। বারবার পুলিশ আসায় বিরক্ত এই মেয়েটি শরণার্থী হিসেবে ব্রিটেনে এসেছে,তারপর কেমব্রিজের একটি রেস্তোরাঁ-কাম- বারে ওয়েটার হিসাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে এবং যখন তিনি জানতে পারেন যে তার ছেলের প্রেমিকার পড়াশোনা মাত্র নবম শ্রেণী পর্যন্ত, একথা শুনে ইন্দিরা আরও অস্থির হয়ে ওঠেন । এদিকে শত বোঝানোর পরেও রাজীব গান্ধী রাজী না হয়ে বললেন, বাচ্চাদের জেদের সামনে বড় মানুষকেও মাঝে মধ্যে হার স্বীকার করতে হয় ।
এরপর অ্যান্টোনিও মাইনোকে ভারতে ডেকে আনা হয় এবং ইন্দিরা গান্ধী তাকে অমিতাভ বচ্চনের বাড়িতে কয়েকদিনের জন্য হিন্দি ও ভারতীয় ভাষা শেখার জন্য পাঠিয়ে দেন । যেখানে অমিতাভ বচ্চনের মা প্রয়াত তেজি বচ্চন এবং অমিতাভ বচ্চনের বাবা অজিতাভ বচ্চন এবং অমিতাভ বচ্চনের দুই ভাই ভারতীয় সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত করতে শুরু করেছিলেন মাইনোকে ।
তারপর রাজীব গান্ধী এবং আন্তোনিও মাইনো ওরফে সোনিয়া গান্ধীর বাগদান হয়েছিল অমিতাভ বচ্চনের একই বাংলোতে যেখানে সোনিয়া গান্ধীর মায়ের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি অমিতাভ বচ্চনের মা তেজি বচ্চন আয়োজন করেছিলেন ।
এ তো গেল প্রথম অংশ, এখন জেনে নিন দ্বিতীয় অংশটি যা খুবই বিপজ্জনক। আসলে,অমিতাভ বচ্চনের পরিবার কয়েক দশক ধরে কংগ্রেসের অনুগত ছিল । কারন রাজীব গান্ধী এবং অমিতাভ বচ্চন ভালো বন্ধু ছিলেন । যখন চলচ্চিত্র জীবনের খ্যাতির শীর্ষে, তখন রাজীব গান্ধীর নির্দেশে চলচ্চিত্র জগত ছেড়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন অমিতাভ বচ্চন । এলাহাবাদ থেকে কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং তৎকালীন দেশের বড় নেতা হেমবতী নন্দন বহুগুনার জমানত বাজেয়াপ্ত হয়।
কিন্তু অমিতাভ বচ্চন রাজনীতির অন্ধকার জগত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেননি ৷ বোফর্সের দালালির কলঙ্কও তাঁর গায়ে লেগেছিল এবং তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে ফিরে যান ফের চলচ্চিত্র জগতে। তারপর অমিতাভ বচ্চন ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন এবং সমাজবাদী পার্টির নেতা অমর সিং-এর অনুরোধে সাহারা গ্রুপের কর্ণধার সুব্রত রায়ের মতো কিছু লোকেরা তাকে সাহায্য করেন এবং ঋণের জাল থেকে মুক্ত করেন । কৃতজ্ঞতা স্বরূপ অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী জয়া বচ্চন সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন । এরপর অমিতাভ বচ্চন এবং গান্ধী পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা ও দূরত্ব বেড়ে যায়।
ইতিমধ্যে অমিতাভ বচ্চনের মা তেজি বচ্চন মারা যান । এরপর যে বিষয়টি এখানে উত্থাপন করা হচ্ছে তা অমিতাভ বচ্চন নিজেই একটি টিভি চ্যানেলে বলেছিলেন । অমিতাভ বচ্চন বলেছিলেন যে আমি শুধু আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে গান্ধী পরিবার অবশ্যই আমার মায়ের শেষকৃত্যে আসবে, কারণ আমার মা সোনিয়া গান্ধীর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন । যেকারণে আমি মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ৪ ঘন্টা দেরি করে করেছিলাম,কারণ আমি গান্ধী পরিবারের লোকজনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তারপর অবশেষে তেজি বচ্চনকে দাহ করা হয় এবং যথারীতি গান্ধী পরিবারের কেউ তেজি বচ্চনের শেষকৃত্যে যাননি । পাশাপাশি অমিতাভ বচ্চন এটাও বলেছিলেন যে, গান্ধী পরিবার হল রাজ পরিবার, আমরা দরিদ্র, একজন রাজা কেন একজন দরিদ্রের শেষকৃত্যে আসবে ? সর্বোপরি, একজন রাজার সাথে একজন দরিদ্রের সম্পর্ক থাকবে কেন? অমিতাভ বচ্চনের এই মন্তব্য ছিল নেহেরু-গান্ধী পরিবারের গালে একটা সপাটে চড়ের সমান ।
একটু ভেবে দেখুন তো, এই কংগ্রেসের তাঁবেদাররা আজ সর্বত্র আন্তোনিও মাইনো ওরফে সোনিয়া গান্ধীকে মা বলে ডাকছে এবং তাকে ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতো জড়িত বলে দাবি করছে । কিন্তু এই কংগ্রেসি তাঁবেদারদের জানা উচিত যে সনাতন সংস্কৃতিতে জন্মদাতা মায়ের মর্যাদা সর্বকদা বেশি হয় । সোনিয়া গান্ধী তার কন্যাদান করা মা তেজি বচ্চনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যাননি শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠার অহংকারের জন্য । আর বিদেশী সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা এবং বিদেশী সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী একজন নারীই এমন কাজ করতে পারে, ভারতীয় সংস্কৃতির নারী কখনোই নয়।।