এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,২৮ জানুয়ারী : খোদ কলকাতা মহানগরী ও শহরতলীর একের পর এক বহুতল হেলে পড়ার ঘটনাকে ঘিরে যখন রাজ্যজুড়ে তোলপাড় চলছে, তারই মাঝে বর্ধমান শহর থেকে একটা চাঞ্চল্যকর খবর সামনে এল । বর্ধমান শহরের অভিজাত এলাকা উল্লাস উপনগরীতে সম্পূর্ণ বিনা অনুমতিতে নির্মিত হয়েছে ৪ তলা বিশিষ্ট একটা আস্ত আবাসন । পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জায়গায় এবং জেলা পরিষদ ও বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডিএ) নাকের ডগায় কিভাবে বিনা অনুমতিতে এই বহুতল নির্মিত হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । এই বিষয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বিডিএ’কে ।
উল্লাস উপনগরী সন্নিহিত জোতরাম এলাকার বাসিন্দা গৌরাঙ্গ মিত্র জানিয়েছেন, এই ফ্ল্যাট তৈরী করছেন নিজামুদ্দিন সেখ নামে একজন প্রমোটার । তিনি কোনোরকম বৈধ অনুমতি,পরিকল্পনা ছাড়াই এই আবাসন তৈরী করছেন। তার অভিযোগ,’এমনকি জোতরাম মৌজায় আমার একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে প্রমোটার নিজামুদ্দিন । জমির বিনিময়ে টাকা দেবার কথা থাকলেও দেয়নি। আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত,বর্ধমান জেলা পরিষদের অধীনে রয়েছে বর্ধমান শহরের অভিজাত এলাকা উল্লাস উপনগরী । আর খোদ জেলা পরিষদের জায়গাতেই নির্মিত হয়েছে চারতলা বিশিষ্ট ওই আবাসনটি । জেলা পরিষদ ও বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডিএ) মদত ছাড়া এত বড় বেআইনি কাজ কি করে সম্ভব হল তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন । এদিকে এই বেআইনি কাজের দায় এড়াতে জেলা পরিষদ ও বিডিএ একে অপরকে দোষারোপের পদ্ধতি অবলম্বন করেছে ।
তবে জানা গেছে যে সাধারণত, বিডিএ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কোনো নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেয় বিডিএ । প্রমোটার নিজামুদ্দিন সেখ নির্মিত আবাসনটি পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জায়গাতে হলেও আইন অনুযায়ী বিডিএ-এর কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার কথা । যদিও বিডিএ-এর চেয়ারম্যান কাকলী গুপ্ত তা জানিয়েছেন যে ওই ফ্ল্যাট তৈরীর কোনো প্রমাণপত্রই নেই। এমনকি তাঁরা কোনো অনুমোদনও দেননি তিনি । তাহলে বিডিএ-এর নাকের ডগায় কিভাবে ওই আবাসন তৈরি হল ? এই বিষয়ে কাকলিদেবীর সাফাই, ‘উল্লাস উপনগরী জেলা পরিষদের অধীন।’
তিনি এও বলেছেন,’আমাদের নিজামুদ্দিন সেখ এসেছিলেন এবং ঝুরি ঝুরি মিথ্যা কথা বলেছেন। এরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে জেলা পুলিশের সহায়তায় আমরা ওই নির্মাণকে শুধু বন্ধই নয়, পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া হবে ।’
এই বিষয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে অভিযোগ এসেছে। বিডিএ এব্যাপারে কোনো অনুমোদন দিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। এমনকি জানানো হয়ও না। যেহেতু তাঁদের কাছে অভিযোগ এসেছিল, তাঁরা সরজমিনে খতিয়ে দেখেছেন। অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এব্যাপারে আইনানুগভাবেই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন । অন্যদিকে,অভিযুক্ত প্রমোটার নিজামুদ্দিন সেখের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি অভিযোগের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি ।
প্রসঙ্গত, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে । বিডিএ পরিচালিত হয় বর্ধমান শহরের তৃণমূল নেতাদের দ্বারা । এমতবস্থায় শাসকদলের নেতাদের প্রচ্ছন্ন মদত ছাড়া নিজামুদ্দিন সেখ ওই বহুতল নির্মাণ করার সাহস কিভাবে পেল ? এমনই প্রশ্ন তুলছেন শহরের বাসিন্দারা । তাদের সন্দেহ যে বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ‘ব্লেম গেম’ খেলছে জেলা পরিষদ ও বিডিএ ।।