প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ জানুয়ারী : লোকসভা ভোটের আগে ’দেবতারাই’ যেন বনে গিয়েছেন ভারতীয় রাজনীতির ’আইকন’।সেই মতই অযোধ্যায় ’রাম’ মন্দির উদ্বোধন নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে উন্মাদনা জাগিয়ে তুলেছে মোদী শিবির । একই রকম উন্মাদনা বাংলাতেও জাগাতে দিদির ইচ্ছায় দিঘাতে জোর কদমে চলছে ’জগন্নাথ’ মন্দির তৈরির কাজ।এমন আবহের মধ্যেই আবার বাংলায় সিদ্ধিদাতা ’গণেশের’ বন্দনারও হিড়িক পড়ে গিয়েছে ।
’গণেশের বন্দনা’র সেই হিড়িকের প্রকাশ এখন দেখা যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে চলা ’বসুন্ধরা’ উৎসবে । সেখানকার পুষ্প শোভিত প্রাঙ্গনে সবার মধ্যমনি হয়ে আসন অলংকৃত করে আছেন সিদ্ধিদাতা। তাঁকে স্মরণ করে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ,শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি ও নাম সংকির্তনের মধ্যদিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন গেরুয়া বসনা সন্ন্যাসীরা।উৎসবের প্রদর্শনীতে অযোধ্যায় নব নির্মিত রাম মন্দিরের একাধীক মডেলও শোভা পাচ্ছে। সে সব চাক্ষুষ করতে মোদী ভক্তরাও উৎসাহী হয়ে উৎসব স্থলে ঢু মেরে যাচ্ছেন।
’বসুন্ধরা’ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বেশ কয়েক বছর ধরে জামালপুরের শুঁড়েকালনায় বসুন্ধরা উৎসবের’ আয়োজন করে আসছে।তাদের উৎসব এ বছর ১৫ তম বর্ষে পাদার্পণ করেছে।এবছরের ’বসুন্ধরা উৎসবের“ কেন্দ্র বিন্দুতে যিনি রয়েছেন তিনি হলেন হিন্দুদের অন্যতম আরাধ্য দেবতা সিদ্ধিদাতা গনেশ। উৎসব প্রাঙ্গনের ফুলের বাগানে তিনি-ই মধ্যমনি হয়ে অধিষ্ঠান করছেন। গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী শিবানন্দজী মহারাজ,বর্ধমানের নতুন গঞ্জের গীতা সংস্কৃত চর্চা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ স্বামী শ্রেষ্ঠানন্দ মহারাজ এবং বর্ধমানের সুভাষপল্লীর সারদাশ্রমের স্বামী দুর্গেশানন্দ পুরী মিলে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণে মধ্য দিয়ে ১৯ জানুয়ারি উৎসবের উদ্বোধন করেন। ওই দিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ঠ অতিথি হিসাবে জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাঝিও উপস্থিত থাকেন।উদ্বোধনের পর থেকে উৎসব প্রাঙ্গনে যাঁরাই যাচ্ছেন তাঁরা কৃষি, পুষ্প ও হস্তশিল্প প্রদর্শনী দেখার পর সিদ্ধিদাতাকে প্রণাম নিবেদন না করে ফিরছেন না।
এদিকে অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে যখন
গোটা দেশ উন্মাদনায় ভাসছে,তখন বসুন্ধরা উৎসবে সিদ্ধিদাতাকে তুলে ধরার কারণ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।এবিষয়টি নিয়ে বসুন্ধরা উৎসব কমিটির সভাপতি প্রদীপ পাল একেবারে ধুরন্ধর রাজনীতিকের মতই এর ব্যখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ রাম মন্দির চেয়েছে ,তাই রাম মন্দির হয়েছে।একই ভাবে বাংলার মানুষ চাইছে বলেই এই রাজ্যে জগন্নাথ মন্দির হচ্ছে। যে রাজ্যের মানুষ যা চাইছে সেই রাজ্যের সরকার তা পূরণ করছে । আর আমরা উৎসব প্রাঙ্গনে দেবতা গনেশকে স্মরণ করছি কারণ,তিনি-ই হলেন সর্বকাজের সিদ্ধিদাতা । তাকে বাদ দিয়ে কিছুই হতে পারে না । তাই আমরা সিদ্ধিদাতাকেই স্মরণ করছি ।’ বিধায়ক অলোক মাঝি বলেন,’জ্ঞান ও সিদ্ধিলাভ কামনায় বসুন্ধরা উৎসব প্রাঙ্গনে গনেশের মূর্তি বসানো হয়েছে দেখে আমারও ভালো লাগছে।কারণ এটাই আমাদের সংস্কৃতি। এটা সৃজনশীলতারই অঙ্গ। ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে এই বিষয়টিকে না দেখাই ভালো ।’
আর স্বামী দুর্গেশানন্দ পুরী বলেন,’সিদ্ধিদাতা গনেশ হলেন কর্মশক্তির প্রতীক। তিনি সিদ্ধিদান করেন। তাই বসুন্ধরা উৎসব প্রাঙ্গণে তার মূর্তি রাখাটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়েছে।’ পাশাপাশি তিনি এও বলেন,’রামচন্দ্রের আদর্শই ভারতবর্ষের আদর্শ ।রামচন্দ্র হলেন ত্যাগ ও সুশাসনের প্রতীক। সেই কারণেই তিনি মর্যাদা পুরুষোত্তম ।’ ভারতে প্রভু রামচন্দ্রের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করাটাই রামমন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে দুর্গেশানন্দ দাবি করেন।
কিন্তু যে দেশের রাজনীতির সঙ্গে ’চোর’ আর ’চুরি ’ বিষয়টি সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে সেই দেশের রাজনীতিকরা কি দেশ কিংবা রাজ্য চালাতে রামচন্দ্রের আদর্শকে পাথেয় করবে ? এর উত্তরে দুর্গেশানন্দজী বলেন,’চৌর্যবৃত্তি প্রাচীন কালেও ছিল,এখনো আছে । এই চৌর্যবৃত্তি বন্ধে দরকার প্রকৃত শিক্ষা । আমাদের ধর্ম আর সনাতন আদর্শকে মেনে চললে তবেই সেই শিক্ষার বিকাশ ঘটবে ।’ স্বামী শ্রেষ্ঠানন্দ মহারাজ বলেন,’ধর্ম বাদ দিয়ে ভারতবর্ষ চলতে পারে না। রামচন্দ্রের আদর্শকে দেশের পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে দিতে পারলো তবেই রাম মন্দির গড়ার উদ্দেশ্য স্বার্থক হবে ।’।