আমি সেই নারী ,
যার জন্ম ক্ষণে ছিলনা উলুধ্বনি,
ছিল না শঙ্খধ্বনি।
শঙ্খ ধরা ছিল বাড়ির মহিলাদের হাতে
উলু দেবার জিভ ঠোঁট পর্যন্ত এসে
ভিতরে ঢুকে গেল।
সবাই যখন ঠোঁট বাঁকিয়ে চেঁচিয়ে বলল
মেয়ে হলো গো! শঙ্খ মুখ পর্যন্ত গিয়েও ধীরে ধীরে নেমে এলো।
যারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল
তারা ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে গেল।
আমি সেই সদ্য জন্ম নেওয়া এক নারী।
যার বিছানা হয়েছিল খড়ের উপর
চট বিছিয়ে।
ধীরে ধীরে শৈশব ছেড়ে কৈশোরে
পদার্পণ করলাম।
আমার নারী সত্তা ধীরে ধীরে
বিকশিত হতে লাগল।
তৈরি হল আমার জন্য শৃঙ্খল।
পরিয়ে দেওয়া হল আমার দু পায়ে ।
আমি যে নারী !
আমার চোখে বেঁধে দেওয়া হল
মোটা পর্দা।
আমি সেই নারী যে প্রকৃতির সৃষ্টিকে
প্রত্যক্ষ করা থেকে বঞ্চিত।
যার হাঁটা চলা
গুণে গুণে কয়েক পা।
যাকে সমাজের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকতে হয়
প্রতি পদে ।
আমি সেই নারী যে যৌবনে পা দেওয়ার আগেই
ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলে যেতে কারো হাত ধরে।
যাকে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে অপমানিত হতে হয়।
যাকে পঞ্চ পিতার এক পিতার হাতে
লাঞ্ছিত হতে হয়।
যার ঈশ্বর প্রদত্ত জিভ আছে
কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস নেই।
আমি সেই নারী যার লাঞ্ছনার সুবাদে খবরের শিরোনামে উঠে আসে গ্রামের নাম।
লাঞ্ছনার খবর বিক্রি হয় মোটা দামে।
আমি সেই নারী যার পিঠ আজ দেওয়ালে
ঠেকে গেছে, কোনো পথ নাই এগিয়ে যাওয়ার।
সামনেই আছে নরপিশাচ মানুষের দল।
রক্তাক্ত করে দেবে শরীর টাকে।
আজ আমি সেই রক্তদন্তিকা অসুর নিধন কারী নারী ,
যে তার দশ হাত দিয়ে বিনাশ করেছিল
অসুরকে।
দেশকে করেছিল অসুর মুক্ত ।
আমি সেই নারী যে রক্ত বীজের ঝাড়কে
করেছিল ধ্বংস ।
যার সম্মান রক্ষার্থে হয়েছিল লঙ্কা দহন ।
আমি সেই নারী যাকে সতীত্ব প্রমানের জন্য স্বামীর আদেশে দিতে হয়েছিল অগ্নিপরীক্ষা।
আমি সেই নারী যে নিজের আত্মসম্মান জন্য করে ছিল পাতাল প্রবেশ ।
আমি জগদ্ধাত্রী যে জগতকে ধারণ করে আছে।
আমি সেই নারী যে সন্তানকে দশ মাস গর্ভে ধারণ করে স্তন পান করিয়ে ঘুম পাড়ানি গান করে।
আমি সেই নারী যে এক হাতে দোলনা দোলায়
অপর হাতে বিশ্ব শাসন করে।
যে ভাতৃদ্বিতীয়ায় ভাইয়ের কপালে টিপ দিয়ে মঙ্গল কামনা করে।
আমি সেই নারী যাকে বিচারের আশায় ঘুরে বেড়াতে হয় বিচার হয় না।
যাকে বিচার কক্ষে কালিমা লেপন করার জন্য মুখিয়ে থাকে অগণিত মানুষ,
যে বিপ্লবী আন্দোলনের সামনে থেকে বুকে গুলি বিদ্ধ হয়ে জীবন উৎসর্গ করে দেশ মাতৃকার জন্য ইতিহাসের পাতায় যাদের নাম থাকে না।
আমি সেই নারী ।।