আমেরিকা গত ১০০ বছর ধরে একটি মহাশক্তি। তারা তাদের চ্যালেঞ্জ করা প্রতিটি দেশকে ধ্বংস করেছে।জাপান যখন তাদের চ্যালেঞ্জ করেছিল, তারা তাদের ধ্বংস করেছিল। যখন ইউএসএসআর তাদের চ্যালেঞ্জ জানায়, তারা তাদের ১৭ টুকরো করে ভেঙে ফেলে।যখন ইরাক মাথা তুলেছিল, তারা তাদের ধ্বংস করেছিল। তারা ইরানের সাথেও একই কাজ করেছিল।আজকাল আমেরিকার নিশানায় ছিল চীন । কিন্তু ভারত যখন ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অর্জন করছে, তখন এবার ভারতের পালা।
গত ১০০ বছর ধরে, আমেরিকান শিল্পপতিরা বিশ্বের শীর্ষ দশ শিল্পপতির উপর তাদের আধিপত্য বজায় রেখেছেন। শীর্ষ ১০ জনের মধ্যে ৮-৯ জনই কেবল আমেরিকান শিল্পপতি এবং অন্য কেউ এর কাছাকাছিও নন । যখন চীনের “জ্যাক মা” তৃতীয় স্থান অধিকার করে, তখন তার বিরুদ্ধে “লবিং” শুরু হয় এবং তাকে পালিয়ে যেতে হয়।এখন তারা আদানি ও আম্বানির মতো ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পিছনে ছুটছে।
আমেরিকার শক্তি হলো তার শিল্প,তারা প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যের শক্তি দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে । যদি কোন দেশ বা শিল্পপতি তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে বা তাদের চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে তারা তাদের ধ্বংস করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ।
গত পাঁচ বছরে, ভারতীয় শিল্পপতি আদানি আকাশছোঁয়া ভাবে উড়ে যাচ্ছিলেন। গত বছর তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পপতি হয়েছিলেন। যদি এই গতি অব্যাহত থাকত তাহলে তিনি ২০২৪ সালে বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পপতি হয়ে উঠতেন । পুরো বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকত।
জ্বালানির উপর নির্ভরতা ভারতের দুর্বলতা, যার কারণে ১৯৯১ সালেও ভারতকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ভারতের তেল আমদানি বিলের বিশাল বৃদ্ধির কারণে সংকট আরও গভীর হয়েছে। আদানি ভারতের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে ভারতের জ্বালানি নিরাপদ করার লক্ষ্যে কাজ করছেন – বিশ্বের সবচেয়ে কম খরচের সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্প, যা সময়ের সাথে সাথে তেল ও গ্যাস প্রতিস্থাপন করবে। এজন্যই আদানির উপর হিন্ডেনবার্গের বারবার আক্রমণ করে যাচ্ছিল । আর সিএনবিসি সম্প্রতি আদানিকে বিশ্বের দ্বিতীয় ট্রিলিয়নেয়ার হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে, তাই এখান থেকে এই গোষ্ঠীর উপর আক্রমণ আরও তীব্র হবে।
যদি ভারত “আত্মনির্ভর ভারত” এবং “মেক ইন ইন্ডিয়া” প্রচারণা চালায়, তাহলে এর অর্থ হল ভারত একটি বিশাল বাজার – বিশ্বের জনসংখ্যার ২০%, যা অন্য যেকোনো অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে ভারত যদি স্বনির্ভর হয়ে ওঠে, তাহলে আমেরিকা, ইউরোপ, চীনের পাশাপাশি আরব বিশ্বকেও বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপি শক্তিশালী হতে থাকবে । ভারতেও লবিং শুরু হয়েছে ।
ভারতে বোকা, পাপ্পু, জয়চাঁদ, বিশ্বাসঘাতকের অভাব নেই । এখানে মিডিয়া কেনা যায় । পূর্বের শাসক
দলটিই ছিল সেই শক্তি যা এক দশক আগে কৃষ্ণা গোদাবরী (কেজি) অববাহিকায় ভারতের তেল ও গ্যাস প্রকল্পের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল । ইউটিউব, ফেসবুক, গুগল, টুইটার, এই সব প্ল্যাটফর্ম আমেরিকার, তারা যখন খুশি যে কারো বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে পারে। কিন্তু চীনে এসব সহজ নয়, সেখানে গণতন্ত্র নেই……সেখানে অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার ছড়ানো সহজ নয়…..চীন নিজেই ভারতকে এগিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে।
আগামী সময়ে ভারতের জন্য আরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে ।
আমেরিকা আফগানিস্তানে কোটি কোটি ডলার খরচ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তালেবানের মতো সংগঠন তৈরি করেছে। ভারতকে অস্থিতিশীল করা আরও সহজ, এখানে বিশ্বাসঘাতক এবং বিশ্বাসঘাতকের অভাব নেই, এখানকার কিছু নেতার বক্তব্য দেখুন, তারা প্রকাশ্যে বিদেশী এজেন্টের মতো কাজ করছে, বিচারক বিক্রি হয়ে গেছে, মিডিয়া বিক্রি হয়ে গেছে, নেতারা বিক্রির জন্যে প্রস্তুত । এই পরিস্থিতিতে ভারতের জনগণকে নতুন করে ভাবতে হবে যে তারা প্রকৃতই স্বাধীনতা চায়, নাকি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পদলেহন করতে চায়।
ভারত একটি বিশাল বাজার, কোনও দেশই চাইবে না যে ভারত স্বনির্ভর হোক, তাই তারা ভারতের উত্থান রোধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে । বিদেশী শক্তিগুলো ভারতে একটি “মিশ্র/দুর্বল” সরকার চায়, যা সর্বদা পতনের ঝুঁকিতে থাকে এবং তাদের আজ্ঞাবহ হবে ।
গত দশ বছর ধরে ভারতে একটি স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী সরকার রয়েছে।তারা এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে ভারত সরকার তার নিজস্ব শিল্পপতিদের শক্তিশালী করছে, তাদের চিন্তাভাবনা তাদের ডানা কেটে ফেলার। যেকোনো দেশের শক্তি হলো তার শিল্পপতি । যারা তাদের দেশের দক্ষতা এবং জিনিসপত্র বিদেশে বিক্রি করে,তাই তাদের স্বার্থ রক্ষা করা সরকারের কাজ।
আজ আদানি-আম্বানি-টাটা-মাহিন্দ্রা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, তাদের টেনে নামানোর চেষ্টা করছে আমেরিকা সহ পশ্চিমি দেশগুলি । বাইডেন-ওবামা- ক্লিন্টন ও জর্জ সোরসের ষড়যন্ত্রে হিন্ডেনবার্গের মিথ্যা রিপোর্টে আদানির শেয়ার বাজারে ব্যাপক পতনের পর আমাদের দেশের যে বিশ্বাসঘাতকরা ধ্বংস উদযাপন করছিল তারা কি বিদেশী এজেন্ট নয় ? এদেরকে চিনুন এরাই প্রকৃত মীরজাফর ও দেশদ্রোহী ।
এই মীরজাফররা এতটাই বিষাক্ত সাপ যে তারা ভারতবিরোধী প্রতিটি কাজেই সুখ খুঁজে পায়। দেশের অগ্রগতি সম্পর্কিত কোনও পরিসংখ্যান বা প্রতিবেদন তারা মেনে নিতে প্রস্তুত নয় কিন্তু কোথাও দেশের বিরুদ্ধে কিছু দেখলে তারা আনন্দে পাগল হয়ে যায়। আর ভারতীয় মিডিয়া বিক্রি হওয়ার প্রস্তুত । কিন্তু আমরা অসহায় নই ।
আমরা যদি কিছুও না পারি, ক্ষমতালোভী এই বিশ্বাসঘাতকদের অন্তত ব্যালট বাক্সে ধরাশায়ী করতে পারি । তবেই দেশের মঙ্গল । মার্কিন ডিপ স্টেটকে আমাদের পরাজিত করতেই হবে । তারা ইতিমধ্যেই মনিপুরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে । তামিলনাড়ুর দিকেও হাত বাড়িয়েছিল । ভাষা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও কর্ণাটকে অশুভ আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা মার্কিন ডিপ স্টেটেরই অবদান । কিন্তু আমাদের এই অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে হবে বর্তমান ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য । আর যদি না ভারতের জনগণ জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান হয়, তাহলে ভারত কোনো দিনই মহাশক্তি হতে পারবে না ।।