এইদিন ওয়েবডেস্ক,ওয়াশিংটন,২৪ সেপ্টেম্বর : কুখ্যাত খালিস্থানি সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব এখন তুঙ্গে । যত সময় যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে খালিস্থানি-মার্কিন যোগ । ‘দ্য ইন্টারসেপ্ট’-এর একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে যে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এফবিআই) -এর কর্মকর্তারা আমেরিকায় বসবাসকারী খালিস্তানিদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং তাদের সতর্ক করেছিলেন যে তাদের জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে । এমনকি এফবিআই-এর আধিকারিকরা খালিস্তানি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সতর্ক করে দেয় । ‘আমেরিকান শিখ ককাস কমিটির’ সমন্বয়কারী প্রীতপাল সিং বলেছেন যে এফবিআই ক্যালিফোর্নিয়ায় আরও দুই আমেরিকান শিখকে ফোন করে এবং তাদের বাড়িতে দেখা করার জন্য ডেকে সতর্ক করেছিল ।
তিনি বলেছেন,’২০২৩ সালের জুনের শেষের দিকে, দুজন এফবিআই অফিসার আমার সাথে দেখা করেছিলেন। তারা আমাকে সতর্ক করেছিল যে আমার জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে। তবে কোথা থেকে এই হুমকি এসেছে তা স্পষ্ট করে জানাননি তারা । তবে তারা আমাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ।’ আরও ২ জন আমেরিকান শিখও একই কথা বলেছেন । ব্রিটিশ কলাম্বিয়া গুরুদুয়ারা কাউন্সিলের মুখপাত্র মনিন্দর সিং বলেছেন যে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা তাদের সতর্ক করেছে। তবে আমেরিকা বা তার গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি ।
যদিও কানাডায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন কানাডিয়ান সিটিভি নিউজ নেটওয়ার্ককে বলেছেন, “‘ফাইভ আই’ অংশীদারদের মধ্যে ভাগ করা ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট ছিল যা কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিগুলি প্রণয়ন করতে সাহায্য করেছিল। সিটিভি নিউজ শুক্রবার রাতে কোহেনের কিছু মন্তব্য প্রকাশ করেছে । উল্লেখ্য,অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে “ফাইভ আইস” গোয়েন্দা-শেয়ারিং জোট গঠিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ।
বৃহস্পতিবার একজন কানাডিয়ান কর্মকর্তা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন যে এই হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ কানাডায় ভারতীয় কূটনীতিকদের নজরদারির ভিত্তিতে করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রধান মিত্রের দেওয়া গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে । তবে কোন মিত্র দেশ এবং কি তথ্য তা তিনি প্রকাশ করেননি ।
প্রসঙ্গত,সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিং নিজ্জার ‘খালিস্তানি টাইগার ফোর্স’ (কেটিএফ) নামে একটি সংগঠন চালাত । ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা পেশায় প্লাম্বার নিজ্জার ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ছিল । সে ভুয়ো পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করে ২০০৭ সালে কানাডায় পালিয়ে যায় । ভারত নিজ্জারকে গ্রেফতার করে হস্তান্তর করার দাবি জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কানাডা । উলটে তাকে কানাডার নাগরিকত্ব দেওয়া হয় । এরপর গত জুন মাসে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের শহরতলী সারেতে গুরুদোয়ারার বাইরে ৪৫ বছর বয়সী ওই খালিস্থানি সন্ত্রাসীকে গুলি করে করে মারে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা ।
ওই সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যুর পর কানাডার প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন,এর পিছনে ভারত সরকারের এজেন্টের হাত থাকার “বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ” রয়েছে । যদিও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লি । এরপর কানাডায় ভারতের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হলে দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকে । পালটা কানাডার এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ভারত । এছাড়াও কানাডিয়ান নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি এবং কানাডাকে তার কূটনৈতিক কর্মী কমাতে বলেছে । যদিও কানাডা এখনও ট্রুডোর অভিযোগের পক্ষে জন সমক্ষে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারেনি ।।