জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),১২ অক্টোবর : ‘ঢাকের তালে কোমর দোলে/খুশিতে ভরে ওঠে মন’ – খুশি তো হবেই! একবছর পর ঘরের মেয়ে দশভুজা ‘মা’ দুর্গা কৈলাশ থেকে কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি আসছেন। মেয়ের আগমনকে কেন্দ্র করেই শুরু হতে চলেছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। চারদিকে সাজো সাজো রব। তার মাঝেও কোথাও যেন বিবর্ণতা উঁকি দিচ্ছে। পুজো এলেই স্থানীয় দর্জিদের ব্যস্ততা চরম বেড়ে যেত। অতিরিক্ত কারিগর নিয়োগ করার পরেও পরিবারের সদস্যরা পর্যন্ত হাত লাগাতে বাধ্য হত । পুজোর দু’মাস আগেও জামা-প্যান্ট তৈরি করতে দিলেও সেটা যে সঠিক সময়ে পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা ছিলনা । সেখানে ভিড় লেগেই থাকত।
কিন্তু আজ সেখানে মরুভূমির শূন্যতা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে মরুদ্যানের মত কিছু কিছু জায়গায় ভিড় দেখা গেলেও অধিকাংশ দর্জির দোকান ফাঁকা। রেডিমেড জামা-প্যান্টের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় দর্জিরা কার্যত আগের মত কাজ পাচ্ছেনা। সারাবছর পোশাকের বিক্রিবাটা যাইহোক উৎসবের মরশুমে সেটা অনেক বেড়ে যায়। বড় বড় কাপড়ের দোকানগুলো বেশ কিছু অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে। গ্রামের ছোট দোকানগুলোতে ভিড় খুব একটা কম থাকেনা। মালিক থেকে শুরু করে কর্মচারী, এমনকি পরিবারের সদস্যদের, প্রত্যেকের ব্যস্ততা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
এখন সব কিছু কেমন যেন পাল্টে গেছে। করোনা জনিত লকডাউন এবং অনলাইনে বস্ত্র কেনার হিড়িক স্থানীয় কাপড়ের দোকানের বিক্রির উপর আঘাত হেনেছে। পাশাপাশি এই রাজ্যে একশ দিনের কাজ বন্ধ। তারপর এখনো পাকা ধান ওঠেনি। পুজোর মুখে সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ নাই। তারই প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাজারে।
পুজোর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও কাপড়ের দোকানগুলো কার্যত ফাঁকা। প্রত্যাশার চেয়ে বিক্রি অনেক কম। পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরার অনেক কাপড়ের দোকানের মালিকের আশা হয়তো মহালয়ার পর বিক্রি বাড়তে পারে। স্থানীয় গ্রামের একটা ছোট কাপড়ের দোকানের মালিক বিশ্বজিৎ মণ্ডল বললেন,’আমার দোকানের খরিদ্দার মূলত গ্রামের। আগে একশ দিনের কাজের টাকা হাতে পেত এবং কেনাকাটা করত। এখন সেটা বন্ধ। পুজো তো কয়েকদিন দেরি আছে। হয়তো ধানটা উঠলে কিছুটা বিক্রি বাড়তে পারে।’
অন্যদিকে গুসকরা শহরের এক বড় কাপড়ের দোকানের মালিক সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় বললেন,’এটা ঠিক এখনো প্রত্যাশা মাফিক বিক্রিবাটা হচ্ছেনা ঠিকই, তবে আশা করছি মহালয়ার পর বিক্রি বাড়বে। আসলে অনলাইনে কেনাকাটা আমাদের বিক্রির উপর কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। যদিও ধীরে ধীরে মানুষ আবার আমাদের কাছে ফিরে আসছে।’
এখন দেবী দূর্গার কৃপায় কতটা লক্ষ্মীলাভ হয় সেদিকেই তাকিয়ে আছেন গুসকরা ও সংলগ্ন এলাকার বস্ত্র ব্যবসায়ীরা ।।