শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্ব মেদিনীপুর,১৫ মার্চ : শুক্রবার বীরভূম জেলার নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের কীর্ণাহার থানার অন্তর্গত আনাইপুর গ্রামে হোলি খেলার সময় হামলার অভিযোগ উঠেছে৷ এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিশানাকে করেছেন অমিত মালব্য ও রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । কীর্ণাহারের আনাইপুর গ্রামের হামলার কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক শহরের নিমতলা এলাকায় হিন্দুদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে । অভিযোগ যে ‘হিন্দু’ পরিচয় জানার পর বেছে বেছে মারধর করেছে একদল মুসলিম বাইক আরোহী । আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন । স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ যে হামলার সময় পুলিশের গাড়ি ছিল এবং পুলিশই হামলাকারীদের আড়াল করে । এ নিয়ে তীব্র খুব প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাকে ‘জিহাদী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন ।
ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ দুপুরে কয়েকজন আহতদের সঙ্গে নিয়ে তমলুক শহরের নিমতলা এলাকায় পদযাত্রা করেন শুভেন্দু অধিকারী । আহতদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । যন্ত্রণায় কাতড়ানো সুকদেব মাইতি নামে ওই আহত ব্যক্তিও শুভেন্দু অধিকারী পদযাত্রায় শামিল হয় । শুভেন্দু অধিকারী তাকে জিজ্ঞেস করেন,’আপনাকে কালকে মেরেছে ? চিকিৎসা করেননি কেন ?’ উত্তরে সুকদেব মাইতি বলেন,’হাসপাতাল চিকিৎসা করতে অস্বীকার করেছে ।’ তখন শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’নার্সিংহোমে ঢোকাও৷ টাকার অভাব নাকি ? কে আছো আমার অফিসের ?’ একজন এগিয়ে এলে শুভেন্দু তাকে নির্দেশ দেন ‘এখনই নার্সিংহোমে ঢোকাও৷ এরপর তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে নেয়নি ! এটা কি মমতার বাপের হাসপাতাল ?’
পরে হ্যান্ড মাইক নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘তমলুক নগর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার হিন্দু জনগণ, গতকাল নিমতলার হামলা গোটা বাংলা দেখেছে । ভারতবর্ষের মিডিয়া দেখাচ্ছে । আমরা এই জিনিস মানবো না । অবিলম্বে জিহাদীদের যদি গ্রেফতার না করা হয়, মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলে আমরা তমলুক নগরের সমস্ত হিন্দু সংগঠন মিলে বন্ধের ডাক দেব । বিজেপির সমস্ত রাষ্ট্রবাদী কর্মীরা রাস্তায় নামবে ।’
যন্ত্রণায় কাতরানো আহত সুকদেব মাইতি কে দেখিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’একে দেখুন আপনারা চোখের সামনে । সরকারি হাসপাতাল কাল থেকে তাকে ভর্তি নেয়নি । সরকারি হাসপাতাল কি পাকিস্তানে আছে ? ওই সরকারি হাসপাতাল ট্যাক্স এর টাকায় চলে । বলছে জয় বাংলা বলতে হবে । সরাসরি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও তার পুলিশমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রত্যক্ষ মদতে নিরীহ হিন্দুর জনগণ এবং দোকানদের ওপর হামলা হয়েছে । তৃণমূলকে যে হিন্দুরা ভোট দেন তারাও আক্রান্ত হয়েছে । জাগো হিন্দু জাগো । বাঁচতে গেলে জোট বাঁধতে হবে ।’ শুভেন্দু অধিকারী সুকদেব মাইতির মুখের সামনে মাইক্রোফোন ধরলে তিনি বলেন,’আমরা ওই কোনে দাঁড়িয়ে ছিলাম । ওরা গ্রিলের উপর দিয়েই আমাদের মেরেছে ।’ শুভেন্দু অধিকারী জিজ্ঞেস করেন, ‘অপরাধ কি আপনি হিন্দু ?’ উত্তরে তিনি বলেন,’বলছে তুই হিন্দু না মুসলিম ? আমি বললাম আমি হিন্দু৷’ এরপর শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’দেখুন দেখুন, যে হিন্দুরা এখনো মমতা ব্যানার্জির দলের পোঁ ধরে আছে তারা শুনুন ।’
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘মমতাকে না সরালে বাংলায় হিন্দু বাঁচবে না । এই ঘটনার জন্য পুলিশ মন্ত্রী দায়ী৷ পুলিশ দায়ী । সিসিটিভি ফুটেজ পাঠিয়ে দেব দেখবেন যে ওরা এসেছে আর পুলিশ গাড়ি ঘুরিয়ে পালিয়ে গেছে ।’ সব জায়গায় হামলার কিসের ইঙ্গিত ? এই প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’সব জায়গা দখল করবে । ওদের সরকার ওদের মুখ্যমন্ত্রী আছে না । মুখ্যমন্ত্রী কাজী নজরুলের গান গান না… মোরা একই বৃন্তে দুইটি কুসুম।’
হামলার ঘটনার পর আনন্দধারা নামে একটা ইউটিউব চ্যানেলে বেশ কয়েকজনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছিল ।
তাদের মধ্যে পৃথা অধিকারী নামে একজন বিজেপি যুবনেত্রী অভিযোগ করেছেন,’যতগুলো দোকান প্রতি দোকানে প্রতিদিন ১০-১৫টা করে মুসলমান ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে । এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় কেউ বেরুতে পারেনা । গোটা শহরের একই অবস্থা । আজকে হোলির দিনে ৫০ টার মতো প্রায় গাড়ি, তাকে প্রায় ১০০টা লোক মাথায় টুপি পরা, এখানে দাঁড়িয়েছে, তার আগে তাল-পুকুরে মারপিট করেছে । ওখানে একট ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল, তাকে জিজ্ঞেস করল তুই কি হিন্দু ? তার অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে তাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করে দিয়েছে । একটা জেঠুকে এমন ঠেলেছে তার মাথার বাম দিকে একবারে ফ্রাকচার হয়ে গেছে । বলছি একটা ইউপি না, এখানে আল্লাহু আকবর ও জয় বাংলা বলতে হবে । না বললে কি যাকে খুশি কেটে দেওয়া যাবে নাকি এখানে ? আজকে এখানে হচ্ছে, কালকের টাউনের ভিতরে হবে, মানিকতলায় তো যাওয়াই যায় না । প্রশাসন তো দাঁড়িয়ে আছে৷ প্রশাসন কোন কাজের নয় । এবারে মনে হচ্ছে নিজের পরিবারের দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে । তাতে যদি জেল হয় হবে । ডান্ডা নিয়ে বেরুনো হবে । কাল থেকে আমরা যদি একটাও ছেলেকে এখানে দেখতে পাই তাহলে ডান্ডা দিয়ে মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেবো ।’
তমলুক পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি সঞ্জয় পন্ডিত বলেন,’আজ তমলুকের ওপর এরকম অত্যাচার হচ্ছে ? আমরা নিমতলাবাসী এটা কখনো মেনে নিতে পারব না৷ এখানে একশ খানা বাইক এসে হঠাৎ করে মারপিট শুরু করে দেয় । একজন মোবাইলে ভিডিও করছিল তাকেও মারধর করা হয়েছে । কি কারণে এই হামলা হল আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না । যাকে পারল তাকে মারধর করে চলে গেল । নিমতলা মোড়ে চার-পাঁচজনকে এসে মারধর করে চলে গেল । পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়েছিল কিন্তু দেখেও চলে গেল ।’
ঝুমুর অধিকারী নামে একজন গৃহবধূ বলেন,’আমাদের ছেলে মেয়েরা বেরিয়ে যাচ্ছিল বলে আমরা দাঁড়াতে এসেছিলাম । তখন দেখলাম একশো টার মত বাইক ছিল এবং প্রায় ৩০০ লোক ছিল । সব মাথায় টুপি এবং সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি । পরিষ্কার ভাষায় তারা মুসলিম । ‘আল্লাহু আকবার’,’জয় বাংলা’ ও ‘এটা বিহার নয়’ বলে মারাত্মক চিৎকার করছিল । এসব বলতে বলতে মারধর শুরু করে ।’ রাত্রি আটটা ১০-১৫ নাগাদ এই হামলা হয় বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন,’আসলে তালপুকুরে একটা ঘটনা ঘটেছিল । সেই সূত্র ধরে তারা ওইসব করতে করতে এখানে এসেছিল । ট্রাক টার্মিনাসের ভেতরে ঢুকেছে৷চালকদের সঙ্গে নাচ গান করেছে । তারপর প্রত্যেককে ধরেছে এবং জিজ্ঞেস করেছে হিন্দু কিনা । আর হিন্দু শুনেই মারধর করেছে । দুজন হাসপাতালে আছে ।’ তিনি কয়েকজন আহতের নাম জানান ।
তিনি বলেন সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হলো যে পুলিশের একটা গাড়ি দাঁড়িয়েছিল । আমার স্বামী ছুটে একজন হামলাকারীকে ধরতে যাচ্ছিল । কিন্তু পুলিশের গাড়িটা দিয়ে হামলাকারীদের কে সেভ সাইড করে দিল ।’।
জানা গেছে, ঘটনার প্রতিবাদে রাতে পথ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা । পুলিশ হামলাকারীদের দু’ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত করানোর আশ্বাস দেয় বলে জানান ওই মহিলা ।।
Along with Kirnahar, there are allegations of attacks on Hindus in Tamlu, several injured, anger over the role of the police, ‘Hindus will not survive in Bengal if Mamata is not chased away’: said Shuvendu Adhikari