প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ সেপ্টেম্বর :জালিয়াতি করে অন্যের জমি নিজের নামে রেকর্ড করে নেওয়ার অভিযোগে এক জমি জালিয়াতকে বিদ্যুৎতের পোলে বেধে রাখলো গ্রামবাসীরা। পাশাপাশি তারা মনোজকান্তি মণ্ডল নামে ওই জমি জালিয়াত কে ঘিরে বিক্ষোভও দেখান। এমনই ঘটনার জেরে সোমবার দুপুরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার কামালপুরের তিলডাঙা এলাকায়। খবর পেয়ে খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে মনোজকান্তি মণ্ডলকে উদ্ধার করে।পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।এলাকাবাসী জানিয়েছে,শুধু এই মাহাতো পরিবারের জমিই নয়,খণ্ডঘোষের সালুন গ্রামের এক ঘোষ পরিবারের জমি জালিয়াতির দায় ইতিপূর্বে মনোজকান্তি জেলও খেটেছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,খণ্ডঘোষের কামালপুরের তিলডাঙা এলাকায় বসবাস করেন দুষ্টু মাহাতোর পরিবার ।আর জমি জালিয়াতির অভিযোগে যে মনোজকান্তি মণ্ডলকে এদিন বিদ্যুৎতের পোলে বেঁধে রাখা হয় তিনি আগে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় থাকতেন।২০০৯ সালে বনগাঁ থেকে চলে এসে মনোজকান্তি মণ্ডল সপরিবার খণ্ডঘোষে কামালপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। কোয়াক ডাক্তারির আড়ালে মনোজকান্তি জমি জালিয়াতিতে হাত পাকিয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি ।
দুষ্টু মাহাতোর নাতি হীরু মাহাতো এদিন জানান, তিলডাঙ্গা মৌজায় ২৪০ দাগে তাঁর দাদু দুষ্টু মাহাতোর ১ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে।সেই সম্পত্তিতে তাঁদের বাড়ি ঘরও রয়েছে। প্রায় ৫০-৬০ বছর ধরে তাঁদের পরিবার সেখানে বসবাসও করছেন।দাদুর নামে থাকা ওই সম্পত্তির দলিল পরচাও তাঁদের কাছে রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁরা জানতে পারেন ,তাঁর দাদুর নামে থাকা সম্পত্তি ভূমি দফতরের রেকর্ডে আর দাদুর নামে নেই । হীরু মাহাতো ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা এদিন দাবি করেন ,তাঁরা ভূমি দফতরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন জাল দলিল তৈরি করে দুষ্টু মাহাতোর সম্পত্তি মনোজকান্তি মণ্ডল নিজের পরিবারের লোকের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে ।
বিষয়টি জানার পর মাহাতো পরিবারের সদস্যরা মনোজকান্তি মণ্ডল কে ওই জমি তাঁদের ফিরিয়ে দিতে বলেন। হীরু মাহাতো বলেন,’জমি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বললে মনোজকান্তি মণ্ডল উল্টে তাঁদের বলেন জমিটি কিনতে হবে।পরে অনেক আলোচনার পর মনোজকান্তি জমি ফিরিয়ে দেবার আশ্বাস দেন ।কিন্তু তা সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন ধরে জমি ফিরিয়ে না দিয়ে মনোজকান্তি টালবাহানা করে চলেছে।বিষয়টি নিয়ে এলাকার তৃণমূল নেতা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সদস্য সবাইকেই তাঁরা বিষয়টি জানান ।কিন্তু কেউ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দেয় নি।তাই এদিন তাঁরা জমি জালিয়াত মনোজকান্তি মণ্ডলকে বিদ্যুৎতের পোলে বেঁধে রেখে জমি ফিরৎতের দাবি জানিয়েছেন।এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন ,ওই প্রতারকে বিরুদ্ধে আগেও মামলা হয়েছে। তবে এদিনের ঘটনা বিষয়ে খণ্ডঘোষ থানায় কোন অভিযোগ এখনও জমা পড়ে নি।অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’
এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোজকান্তি মণ্ডল শুধু যে দুষ্টু মাহাতোর জমি জালিয়াতিতে জড়িত এমনটা নয়।এলাকাবাসী জানান,জমি জালিয়াতি নিয়ে খণ্ডঘোষের সালুন গ্রাম নিবাসী ইন্দ্রজিৎ ঘোষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ চলতি বছরের জনুয়ারি মাসের প্রথমদিকে মনোজকান্তি মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে । গ্রেপ্তারির পর বেশ কিছুদিন জেলও খাটে মনোজকান্তি ।
ইন্দ্রজিৎ ঘোষ পুলিশকে জানান,খণ্ডঘোষের কামালপুর মৌজায় তাঁর ৬০ শতক চাষ জমি রয়েছে ।ওই জমি তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ বিক্রি করেননি । অথচ ওই জমি বিক্রির জাল দলিল তৈরি করে সেই জমির নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নেওয়ার জন্য কুখ্যাত জমি জালিয়াত মনোজকান্তি মণ্ডল খণ্ডঘোষ ব্লকের ভূমি দফতরে নথি দাখিল করে । ভূমি দফতর মাধ্যমে সেই বিষয়টি জানার পরেই ইন্দ্রজিৎ ঘোষ খণ্ডঘোষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।দায়ের হওয়া সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জমি জালিয়াত মনোজকান্তি মণ্ডলকে গ্রেফতার করে ।।