এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,৩০ সেপ্টেম্বর : স্বাধীনতা পূর্ব ও উত্তর সময়কালে ব্রিটিশ ব্রিটিশ ও কংগ্রেসের আনা এমন কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়েছে যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে বলে মনে করা হয় । এমনই একটা আইন হল “হিন্দু ধর্ম দান আইন ১৯৫১”(Hindu Donations Act 1951) । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত ছাড়ার পরবর্তী কালে দক্ষিণ ভারতের বহু রাজ্য নিজের মত করে আইন প্রণয়ন করে হিন্দু মন্দিরগুলিকে দখল করার চেষ্টা করছে । তৎকালীন কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারের পাশ করা ‘কর্ণাটক এনডাউমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৭২’ আইন তার জলন্ত উদাহরণ । ২০১৯ সালের এপ্রিলে তামিলনাড়ু সরকার যখন চিদাম্বরম শ্রী নটরাজ মন্দির দখল করার চেষ্টা করেছিল, তখন সুপ্রিম কোর্ট কটুক্তি করে বলেছিল যে ‘সরকারের কাজ মন্দির চালানো নয়, ভক্তদের এটি পরিচালনা করা উচিত’। যখন কেরালার কমিউনিস্ট সরকার তিরুবনন্তপুরমের শ্রী পদ্মনাভ স্বামী মন্দির দখল করার চেষ্টা করে । তখন মন্দিরে ছিল কোটি কোটি টাকা মূল্যের সোনা এবং অন্যান্য সম্পদের। সুপ্রিম কোর্ট কেরালা সরকারের যুক্তি বাতিল করে এবং ত্রাভাঙ্কোরের রাজপরিবারের অধিকার বহাল রাখে । এমন অনেক অসংখ্য নজির আছে কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা, তামিলনাড়ুতে ।
এমনকি ২০২০ সালে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার পর্যন্ত সবচেয়ে পবিত্র বদ্রীনাথ, কেদারনাথ মন্দির সহ ৫১ টি হিন্দু মন্দির দখল করে, তখন অনেক হিন্দু সাধু এমনকি বিশ্ব হিন্দু পরিষদও এর বিরোধিতা করেছিল। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী । এনিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হলে উত্তরাখণ্ডের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারান । নবনিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রী তীরথ সিং রাওয়াত এসে মন্দিরগুলি ফের হিন্দুদের কাছে ফিরিয়ে দেন ।
প্রসঙ্গত,তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সরকারগুলি সারা দেশে শুধুমাত্র হিন্দু মন্দিরগুলোই দখল করে নিচ্ছে এবং এর ফলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অখণ্ড ভারত সংকল্প মন্দির সংস্কৃতি প্রতিরক্ষা সভার একটি সমাবেশের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া “এক্স”-এ পোস্ট করে লিখেছে,’ভারতে গির্জা এবং মসজিদ স্বতন্ত্র । তারা সরকারকে কোনো টাকা দেয় না। উলটে তারা সরকারের কাছ থেকে টাকা পায় ।কংগ্রেস “হিন্দু ধর্ম দান আইন ১৯৫১ তৈরি করেছিল যাতে সমস্ত মন্দির সরকার দখল করতে পারে এবং অন্যান্য ধর্মের বিকাশ করা যায় ।’ ওই পোস্টের সাথে হ্যাশট্যাগ ‘বাচাও হিন্দু মন্দির’ ব্যবহার করা হয়েছে
বছর তিনেক আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ব্রহ্মঋষি পরশুরাম চেতনা জাগৃতি মঞ্চের প্রধান দেবপ্রিয় ত্যাগী একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন । তিনি বলেছিলেন,’আচার্য চাণক্য বলেছিলেন যে কোন ধর্মকে শেষ করতে চাইলে তার আশ্রয়স্থল যেমন মঠ, মন্দির ইত্যাদি শেষ করে দাও। সেই লক্ষ্যে কংগ্রেস সরকার হিন্দু ধর্ম দান আইন ১৯৫১-এর মাধ্যমে কোনও কারণ ছাড়াই কোনও মন্দির দখল করার অধিকার রাজ্যগুলিকে দিয়েছে। এই আইন হওয়ার পর অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার প্রায় ৩৪ হাজার মন্দিরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় । তিরুপতি বালাজি মন্দিরের বার্ষিক আয় প্রায় ৩,৫০০০ কোটি টাকা।’
তাঁর অভিযোগ ছিল,’এত টাকা পাওয়ার পরেও তিরুপতি মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের তহবিলের মাত্র সাত শতাংশ ফেরত পায়। এই মন্দিরের মূল্যবান রত্ন ব্রিটেনের বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মন্দির থেকে প্রাপ্ত দানগুলির ৮০ শতাংশ অ-হিন্দু উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়। মন্দির তহবিলে দুর্নীতির অবস্থা এমন যে কর্ণাটকের ২ লক্ষ মন্দিরের মধ্যে প্রায় ৫০,০০০ মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই, যাতে জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘিত না হয়। কিন্তু ভারতে তাই হচ্ছে। সরকার মন্দির ধ্বংস করেছে ।’
তিনি বলেছিলেন,’তারা মন্দির দখল করে নেয় কারণ তারা জানে যে মন্দিরে দেওয়া নৈবেদ্য থেকে সরকার অনেক সুবিধা পেতে পারে। বর্তমানে ভারতে প্রায় নয় লাখ মন্দির রয়েছে, যার মধ্যে চার লাখ মন্দিরের মালিকানা সরকারের। মন্দিরের সোনা হিন্দু সমাজের সম্পত্তি, সরকারের নয়। যারা মঠ-মন্দিরে টাকা পড়ে থাকতে দেখেছে, তারা কি দেশে দানের নামে লাখ লাখ কোটি টাকার দান দেখতে পায় না? তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে হিন্দু মন্দিরের ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রাচীন ঋষি ঐতিহ্যে গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজ করার।’
তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন। আজও একই দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন দেশের হিন্দুরা । চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা ৫ দিনের সংসদের বিশেষ অধিবেশনে “হিন্দু ধর্ম দান আইন ১৯৫১” বিলোপের বিষয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছিল । কিন্তু তা না হওয়ায় হিন্দু সমাজের মধ্যে চুড়ান্ত হতাশার সৃষ্টি হয় ।।