প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ জুলাই : সম্পত্তি ফিরিয়ে নেওয়ায় শ্বশুরকে নৃশংশভাবে খুনের অভিযোগ উঠলো জামাইয়ের বিরুদ্ধে । বুধবার চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার দীর্ঘনগর এলাকায় । মন্তেশ্বর থানার পুলিশ এদিনই মৃত শ্বশুর নূর আলম মিদ্দে (৬৫) এর মৃতদেহ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে পাঠায় । এই ঘটনায় মৃতর মেয়ে হাসিরা বেগম তাঁর স্বামী নসরত শেখ, শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে এদিনই মন্তেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন । অভিযোগের ভিত্তিতে নসরতের বাবাকে একজ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে,বাকি দুই অভিযুক্ত পলাতক । তাদের সন্ধান চলছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ,
মন্তেশ্বরের দীর্ঘনগর এলাকাতেই বাড়ি নূর আলম মিদ্দের । এদিন সকালে বাড়ি সংলগ্ন সার্ভিসিং সেন্টারের মধ্যে ওই বৃদ্ধকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের লোকজন।ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে । খবর পেয়ে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায় । মৃতদেহ খতিয়ে দেখে পুলিশ ও স্থানীয় মানুষজন নিশ্চিৎ হয় ভারী কিছু বস্তু দিয়ে মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দিয়ে নূর আলম মিদ্দেকে খুন করা হয়েছে।
মৃতর মেয়ে হাসিরা বেগম পুলিশকে জানিয়েছেন,
৮ বছর আগে মন্তেশ্বরের আজহারনগর গ্রামের ।যুবক নসরত শেখের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় । তাঁদের তিনটি সন্তান রয়েছে । একমাত্র মেয়ে হাসিরা ও জামাই নসরতের জীবন যাতে সুখের হয় তার জন্যে নূর আলম বাবু দীর্ঘনগরের বাড়ির সামনেই জামাইকে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টারও করে দেন । পাশাপাশি কয়েকবছর আগে জমি বিক্রি করে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে জামাইকে একটি পিকআপ ভ্যান গাড়িও কিনে দেন নূর আলম । এতকিছু দিয়েও জামাইয়কে সন্তুষ্ট করতে পারেননি নূর আলম ।এরপর থেকে জমি ,বাড়ি সহ যাবতীয় সম্পত্তি তাঁর নামে করে দেওয়ার জন্যে নসরত তাঁর শ্বশুরকে চাপ দেওয়া শুরু করে। ময়ের ভবিষ্যৎতের কথা ভেবে নূর আলম তাঁর সব সম্পত্তি জামাইকে দিয়েও দেন। এর পর শ্বশুরের দেওয়া জমি ও বাড়ি বন্ধক দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা লোন নেওয়ার জন্য নসরত উঠেপড়ে লাগে।হাসিরা বলেন ,সম্প্রতি তাঁর বাবা নূর আলম জানতে পারেন সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পর নসরত মোজাহারনগর গ্রামের অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেছে।তা নিয়ে অশান্তি চরমে উঠলে হাসিরা তাঁর স্বামী নসরতের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন । সেই কথা জানতে পেরেই নসরত গা ঢাকা দেয়। জামাইয়ের কীর্তিকলাপ
মেনে নিতে না পেরে নূর আলম জামইকে লিখে দেওয়া সব সম্পত্তি ফিরিয়ে নেন নিজের মেয়ে হাসিরাকে দেবেন বলে।হাসিরা জানান ,এই কথা জানতে পারার পর থেকেই নসরত ফেনে তাঁর বাবাকে হুমকি দেওয়া শুরু করে । হাসিরার উপরেও নির্যাতন চালানো শুরু করে নসরত । মেয়ের জীবন সংশয় হতে পারে আশঙ্কা করে হাসিরাকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে চলে আসেন নূর আলম । অভিযোগ মঙ্গলবার রাতেও ফোনকরে নূর আলমকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় নসরত ।তারপরেই এদিন সকালে নূর আলমের রক্তাত ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয় । হাসিরা বলেন ,“তিনি নিশ্চিৎ যে সম্পত্তি ফিরিয়ে নেওয়ার বদলা নিতেই তাঁর বাবাকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে । খুনের ঘটনায় তাঁর স্বামীই জড়িত ।’
মৃত ব্যক্তির ভাইপো আব্বাস শেখ বলেন, ‘জামাইকে দেওয়া সব সম্পত্তি নুর আলম তাঁর মেয়ের নামে ঘুরিয়ে নিয়েছে বলে মঙ্গলবার তিনি তাঁদের জানিয়েছিলেন। এরপর থেকে জামাই নসরত বারবার নূর আলমকে প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে । সেই কারণে নূর আলম কেসও করে দেন।জমি,সম্পত্তি লোভ ছাড়তে না পেরে জামাই নসরত-ই তাঁর বৃদ্ধ শ্বশুর নূর আলমকে খুন করেছে বলে দাবি করেছেন মৃতর ভাইপো । এসডিপিও সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য জানিয়েছেন ,“বৃদ্ধ খুনের ঘটনায় তিন জনের নামে অভিযোগ জমা পড়েছে । একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে ।’।