দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০৭ এপ্রিল : বেআইনিভাবে রেকর্ড করে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে,ধৃতের নাম ইয়ার আলি মল্লিক । তাঁর বাড়ি কাটোয়ার গড়াগাছা গ্রামে । একই গ্রামের বাসিন্দা গোলাপ শেখ নামে এক কৃষকের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তাঁর অভিযোগ, ভুয়ো মালিক সাজিয়ে এক ব্যক্তিকে বর্ধমানে নিয়ে গিয়ে তাঁর একটি জমি নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে ইয়ার আলি মল্লিক । শুধু তাইই নয়, রেজেস্ট্রি অফিস ও ভূমি সংস্কার অফিসের একটি চক্রের সহযোগিতায় সে হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা কমলাবালা মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলার জমিও সে নিজের নামে করে নিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গোলাপ শেখ । এই অভিযোগ পেতেই বুধবার রাতে ইয়ার আলি মল্লিককে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ । বৃহস্পতিবার ধৃতকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে ৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক ।
জানা গেছে,গড়াগাছা মৌজায় ৬৯৯ দাগে ১০ শতক পরিমাণ তাঁর একটি জমি রয়েছে গোলাপ শেখের । শনিবার সকালে তিনি জমিতে চাষের কাজে গেলে ইয়ার আলি মল্লিক তাঁকে জমিতে নামতে নিষেধ করেন । কারন জিজ্ঞাসা করলে তখন তিনি জানান ওই জমি নাকি বিক্রি হয়ে গেছে । আর জমিটি সে কিনেছে । এদিকে নিজের নামে জমি বিক্রি হয়ে গেছে শুনে কার্যত আকাশ থেকে পড়েন গোলাপ শেখ ।
গোলাপ শেখ বলেন, ‘প্রথমে কাটোয়া রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজখবর নিই । জানতে পারি বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট রেজেস্ট্রি অফিস থেকে জমিটি নিজের নামে খোশকবালা করে নিয়েছে ইয়ার আলি মল্লিক । যার দলিল নম্বর ২৫৮৬/১৮ । আমার ভূয়ো সচিত্র পরিচয়পত্র দাখিল করা হয়েছে । মালিক সাজিয়ে এক ব্যক্তিকে নিয়ে গিয়ে টিপ সই দেওয়া হয়েছে ।’ তাঁর কথায়,’শুধু আমার সঙ্গেই নয়,কমলাবালাদেবীর মারা যাওয়ার সুযোগে গড়াগাছা মৌজায় অন্তর্গত তাঁর সমস্ত জমি এভাবে নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে ইয়ার আলি মল্লিক । আর এর পিছনে রয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর এবং রেজিস্ট্রি অফিসের একটা দুষ্টচক্র । তাই বাধ্য হয়ে আমি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি ।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পূর্ব বর্ধমান জেলার রেজিস্ট্রি অফিস এবং কাটোয়া,ভাতার প্রভৃতি এলাকার ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসের অসাধু কর্মীদের সঙ্গে জমি মাফিয়াদের যোগসুত্র রয়েছে । অর্থের বিনিময়ে জমির মিউটেশন করে নেওয়ার ঘটনা আকছাড় ঘটে থাকে এই সমস্ত এলাকায় । অতি সহজে অন্যের জমি রেকর্ড হয়ে গেলেও আসল মালিক জমিটি তাঁর নিজের নামে ফের রেকর্ড করতে গিয়ে চুড়ান্ত নাকাল হন । তাঁকে তারিখের পর তারিখ দিয়ে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ । এমনই অসংখ্য নজির রয়েছে ভাতার ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসে । এই কারনে সম্প্রতি ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসগুলিকে ‘বাস্তু ঘুঘুর বাসা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু এই চক্র এতটাই বেপরোয়া যে, কোনও কিছুর পরোয়া না করে অর্থের লোভে এখনও বেআইনি কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের ।।