শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),৩০ মে : স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান গ্রামেরই বাসিন্দা । গ্রামের বাকি অংশ শাসক দলের সমর্থক হলেও মাঝের পাড়ার এলাকার বাসিন্দারা মূলত বিজেপি এবং সিপিএমের সমর্থক । যে কারণে গোটা গ্রামের রাস্তা ঢালাই ও নিকাশি নালা পাকা করা হলেও গ্রামের মাঝের পাড়ার বাসিন্দাদের ঢালাই রাস্তা এবং পাকা নিকাশি নালা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের শুশুনিয়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পশ্চিম খরমপুর গ্রামের । শাসকদলের এহেন বঞ্চনার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার কর্দমাক্ত রাস্তায় ধানের চারা গাছ পুঁতে প্রতিবাদ জানালেন ওই পাড়ার বাসিন্দারা । যদিও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শুশুনিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান প্রধান পার্থ ঘোষ । তার দাবি,’সামনেই গ্রাম্য পুজো আছে৷ তাই রাস্তার কাজ না হওয়ার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ জমেছে ।’ তিনি আরও বলেছেন,’গ্রামের মানুষ জানিয়েছেন আমায় । আমি চেষ্টা করছি যাতে আপাতত ইটভাঙা দিয়ে যাতে রাস্তা দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা যায় ।’
জানা গেছে, মন্তেশ্বর ব্লকের শুশুনিয়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পশ্চিম খরমপুর গ্রামে সম্প্রতি রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হয়। ঢালাই রাস্তা নির্মাণের পাশাপাশি দুপাশে নিকাশি নালা গুলিকেও পাকা করে দেওয়া হয় । কিন্তু পশ্চিম খরমপুর গ্রামের মাঝের পাড়ার ১৫০ থেকে ২০০ মিটার লম্বা রাস্তার কাজ কোনো এক অজ্ঞাত কারনে করা হয়নি । গ্রামবাসীরা জানান, ২০১১ সালে রাজ্যে বিধানসভার ভোটের আগে গোটা গ্রামের রাস্তায় মোড়াম ফেলা হয়েছিল । কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে পশ্চিম খরমপুর গ্রামের মাঝের পাড়ার ১৫০ থেকে ২০০ মিটার লম্বা রাস্তার কোনো সংস্কারের কাজ করা হয়নি । যেকারণে রাস্তার ওই অংশ দিয়ে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে ।
স্থানীয় মহিলা তপতী মুখার্জি বলেন,’গ্রামের প্রত্যেক জায়গায় রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। শুধু আমাদের এইটুকু অংশ ফেলে রাখা হয়েছে । ভোটের সময় যখন প্রচারে পঞ্চায়েত প্রধান এসেছিলেন তখন আমরা তাকে বলেছিলাম যে আমরা কি নাগরিক নই ? ভোট দেওয়ার অধিকার আছে কিন্তু রাস্তা পাওয়ার অধিকার কি আমাদের নেই ? প্রধান বলেছিলেন ভোটটা হোক তারপরে ব্যবস্থা করা হবে৷ কিন্তু ভোটের পর আর তার দেখা পাওয়া যায়নি ।’ তিনি আরও বলেন,’এখন রাস্তার অবস্থা এমন বেহাল হয়ে গেছে যে চলাচল করা যাচ্ছে না । ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না । কেউ পোস্ট অফিসে যেতে পারছে না । বয়স্ক মানুষরা বাড়ির বাইরে বের হতে পারছে না । বামফ্রন্ট চলে যাওয়ার পর গোটা গ্রামের রাস্তার কাজ হয়েছে শুধু আমাদের এখানের রাস্তার এইটুকু অংশ ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছে ।’ তার অভিযোগ যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাদের পাড়ার এইটুকু অংশের রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে না ।
জানা গেছে, সংস্কারের কাজ দীর্ঘদিন না হওয়ায় পশ্চিম খরমপুর গ্রামের মাঝের পাড়ার ১৫০ থেকে ২০০ মিটার রাস্তার মোড়াম উঠে গিয়ে মাটি বের হয়ে গেছে । রাস্তা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দের । এদিকে নিম্নচাপের জেরে কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় বৃষ্টিপাতের কারণে সেই সমস্ত খানাখন্দে জল জমেছে । রাস্তা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় এক হাঁটু কাদা। গ্রামের অন্য পাড়াতে রয়েছে প্রাথমিক স্কুল,হেলথ সেন্টার ও পোস্ট অফিস । বেহাল রাস্তার কারনে কচিকাঁচারা স্কুলে যেতে পারছে । রোগীদের চিকিৎসা পড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে পরিবারের লোকজনদের । পোস্ট অফিসে কাজে যেতে গিয়েও পাড়ার বাসিন্দাদের চরম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে । আজ শুক্রবার একটি ইঁট বোঝাই ট্রাক্টর ওই রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে চাকা কাদায় বসে যায় । ফলে চুড়ান্ত নাকাল হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের । এরপর ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী কর্দমাক্ত রাস্তার ধান গাছের চারা পুঁতে প্রতিবাদ জানান ।
স্থানীয় বাসিন্দা সনৎ কুমার মুখার্জি, প্রশান্ত মুখার্জিরা বলেন, ‘আগামী ৬ জুন থেকে গ্রাম্যদেবতা ধর্মরাজের বাৎসরিক উৎসব শুরু হবে । প্রতিটা বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসবেন । কিন্তু রাস্তার যদি এই অবস্থা থাকে তাহলে আমাদের পুজোটাই বরবাদ হয়ে যাবে । তাই আমরা গত বুধবার মন্তেশ্বরের ভিডিওর কাছে একটি স্মারকলিপির জমা দিয়ে দাবি জানাই যে আপাতত রাস্তায় ভাঙা ইট ফেলে অন্তত চলাচলের ব্যবস্থাটা করে দেওয়া হোক ।’ তারা ওই স্মারকলিপিতে অভিযোগ করেছেন যে রাজনৈতিক কারণের জন্য তাদের পাড়ার বাসিন্দাদের ঢালাই রাস্তা এবং পাকা ড্রেন থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে ।
যদিও প্রধান পার্থ ঘোষ বলেন,’রাস্তা হয়নি এই অভিযোগ মিথ্যা৷ সম্প্রতি সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁউই-খড়মপুরে একটা রাস্তা নির্মাণ হয়েছে৷ ওখানে একটা প্রাথমিক স্কুল আছে সেই কারণে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে । রাস্তার এই অংশটি ২৫-২৬ অর্থবছরে অ্যাকশন প্ল্যানে ধরানো আছে । টাকা ঢুকলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে ।’।

