প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ জুলাই : দুর্নীতি কিছুতেই যেন তৃণমূলের পিছু ছাড়ছে না।শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় শনিবার রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করেছে ইডি।তা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।ঠিক এমনই সময়ে পূর্ব বর্ধমানের কালনার বেগপুর পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন পঞ্চায়েত এলাকারই কিছু বাসিন্দা।তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত এই গ্রাম পঞ্চায়েতে পূর্বতন বোর্ড শৌচাগার নির্মান থেকে শুরু করে পাকা ড্রেন ও ঢালাই রাস্তা নির্মান কাজে নজিরবিহীন দুর্নীতি করেছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।দুর্নীতির তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে এলাকার বাসিন্দারা শুক্রবার কালনা ১ ব্লকের বিডিওর দফতরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে প্রসাসন।শুরু হয়েছে তদন্ত।
বেগপুর পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা তাঁদের স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ পত্র কালনা ১ ব্লকের বিডিওকে জমা দিয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ ,বেগপুর পঞ্চায়েতের পূর্বতন বোর্ডের প্রধান ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকে নির্বাচিত শিউলি মল্লিক। তাঁর সময়কালেই ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের কাজে লাগাম ছাড়া দুর্নীতি হয়েছে।এলাকার বাসিন্দা সইফুদ্দিন বিশ্বাস চলতি বছরের ৩০ জুন আরটিআই করে নানা সরকারী কাজের তথ্য জানতে চান।৭ জুলাই আরটিআই এর জবাব পান।সেই জবাবেই দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হয়। আরটিআই করে পাওয়া তথ্য থেকে তিনি জানতে পারেন, শৌচাগার নির্মাণের নামে অনেক ব্যক্তির নামে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।অথচ আজও বাস্তবে তাদের বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করাই হয়নি।এরকম পাঁচশো পরিবার রয়েছে, যাঁদের সঙ্গে শৌচাগার নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে । শৌচাগার নির্মাণের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপ হয়েছে বলে প্রতারিত বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।তাঁদের আরো অভিযো ,শুধু শৌচাগার নির্মানেই বেগপুর পঞ্চায়েতের পূর্বের বোর্ডের প্রধান শিউলি মল্লিকের সময়ে দুর্নীতি হয়েছে এমনটা নয়।পাকা ড্রেন, ঢালাই রাস্তা সহ আরো বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের কাজেও চুড়ান্ত দুর্নিতি হয়েছে।
বেগপুর পঞ্চায়েতের কর্পূরডাঙা এলাকার বাসিন্দা বসির মন্ডল এদিন জানান ,’শৌচাগার পাওয়ার জন্য তাঁদের গ্রামের অনেকেই আবেদন করেছিল।শৌচাগার পাওয়ার জন্য লিষ্টে নাম তোলা হয় । কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও শৌচাগার আজও মেলেনি ।অথচ সরকারী কাগজ কলম অনুযায়ী আবেদনকারী সবার শৌচাগার পাওয়া হয়ে গেছে। বসির মন্ডল দাবি করেন , তাঁদের গ্রামে এইরকম ৪৭ জন ব্যক্তি রয়েছেন যাঁরা সরকারী কাগজে কলমে শৌচাগার পেলেও বাস্তবে শৌচাগার পান নি । অপর বাসিন্দা তন্ময় মন্ডল বলেন,“শৌচাগারের লিস্টে নাম থাকলেও তা তুলে নেওয়া হয়েছে।আর এইসবই হয়েছে পূর্বতন প্রধান শিউলি মল্লিকের সময় কালে।দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছি বিডিওর কাছে । প্রশাসন দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা না করলে বাসিন্দারা সকলে মিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। প্রয়োজনে দোষীদের শাস্তির থাবিতে ধর্না অবস্থানেও বসবেন।”
এই বিষয়ে বেগপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান
শিউলি মণ্ডল বলেন ,সব মিথ্যা অভিযোগ ।
তাঁর আমলে পঞ্চায়েতের কোন সরকারী কাজে অনিয়ম বা দুর্নীতি হয় নি । আগেও আরটিআই করে তথ্য চেয়ে নিয়ে এমনই হইচই করা হয়েছিল । তখনও তদন্ত হয় । কিন্তু শৌচাগার নির্মাণ সহ কোন প্রকল্পের কাজে দুর্নীতি ধরা পড়েনি । এখন আবার নতুন করে
এইসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে । শিউলি মণ্ডল
এদিন দাবী করেন, তাঁর স্বামী তথা বেগপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ইনসান মল্লিককে ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর যাঁরা খুন করিয়ে ছিল সেই সব ব্যক্তিরাই এইসব করছে ।এর উদ্দেশ্য হল,এখন তাঁর স্বামীকে খুনের ঘটনার বিচার পক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।তিনি যাতে আদালতে সাক্ষ্য দিতে না যান তাই চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসাবে ওই ব্যক্তিরা এইসব করছে ।তবে এইসব করে কিছু লাভ হবে না । শিউলি মণ্ডল স্পষ্ট জানিয়ে দেন,তাঁর স্বামীকে খুনের ঘটনায় জড়িতরা যাতে কঠোর সাজা পান সেইজন্য আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাবেনই ।
বিডিও (কালনা ১ ব্লক )সেবন্তী বিশ্বাস বলেন,’একটা অভিযোগ জমা পড়েছে ।তাতে শৌচাগার সম্পর্কে নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।ওনারা অভিযোগে আগের সময়কার কথা বলেছেন। সেই পুরানো ফাইল গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে চেয়ে পাঠিয়েছি।অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ।’।